গ্রীষ্মকালীন একটি ফল হল করমচা। টক জাতীয় এই ফল খেতেও বেশ ভালো। করমচা ফলই বাজারে প্রসেসিংয়ের পর চেরি ফল হিসাবে বিক্রি হয়। করমচার বিভিন্ন প্রজাতি লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে ক্যারোনডাস, গ্ল্যান্ডিফোরা এবং এডুইলিস প্ৰজাতিই চাষযোগ্য হিসাবে অধিক জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গের সমতলভূমি অঞ্চলে এই চাষ হয়। করমচা ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। যা শরীরেরপক্ষে ভীষণই উপকারী। ভিটামিন-সি, প্রোটিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সমৃদ্ধ এই ফলের থেকে ৩৬৪ ক্যালোরি তাপ এবং ২০০.৯৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।
করমচা চাষের উপযুক্ত মাটি (Soil):
সমতল ভূমির যে কোনও মাটি করমচা চাষের পক্ষে উপযুক্ত। তবে উঁচু জমিতে করমচা চাষ করা ভালো। নিচু জমিতে এই চাষ করতে গেলে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে।
করমচা গাছের বৈশিষ্ট্য (Characteristics) :
করমচা একধরনের ঝোপালো শক্ত কাঁটাওয়ালা গুল্ম। সাদা ও ফিকে গোলাপি রঙের করমচা ফুলের গন্ধ বেশ মিষ্টি। কাঁচা থাকলে এই ফলের রং গাঢ় সবুজ থাকে, পাকলে এই ফল লাল হয়ে যায়। ফেব্রুয়ারি নাগাদ গাছে ফুল আসে এবং এপ্রিল- মে মাস নাগাদ গাছে ফল ধরে। বর্ষাকালে গাছের করমচা পেকে ওঠে।
চারা রোপন (Planting):
বর্ষাকালে এই গাছের চারা রোপন করা উচিত। উঁচু জমিতেই করমচা চাষ ভালো হয় কিন্তু নিচু জমিতে এই চাষ করতে গেলে লক্ষ্য রাখতে হবে জমিতে যাতে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে। গাছ লাগানোর ১৫ থেকে ২০ দিন আগে গর্ত বানিয়ে নিতে হবে। গর্ত তৈরী করে নেওয়ার আগে জমি ৩০ সেন্টিমিটার গভীর করে চাষ দিয়ে নিতে হবে। গর্তে এরপর চারা বসিয়ে মাটি শক্ত ভাবে চেপে দিতে হবে যাতে গাছ না হেলে বা পড়ে যায়। চারা বসানোর পর অবশ্যই সেচ দিতে হবে।
গাছের যত্নআত্তি (Caring):
করমচা গাছের যত্ন অন্য সব গাছের মতন নিতে হয় না। শুধু মাঝেমধ্যে গাছের ঝোপালো ডালপালা ছেঁটে দিয়ে গাছকে ভারমুক্ত করা দরকার। করমচা গাছের মাটি একটু উঁচু করে দেওয়া উচিত। বৃষ্টির জল যাতে না দাঁড়াতে পারে, তার জন্যই মাটি উঁচু করে দেওয়া। শক্ত ধরনের গাছ করমচার দেহে আঠালো রস থাকায় সহজে পোকামাকড় অথবা বিভিন্ন রোগের আক্রমণ ঘটে না। ফল ছোট থাকাকালীন অনেকসময় পোকা ফলের মধ্যে ঢুকে শাঁস খেয়ে নেয়।
আরও পড়ুন: Red Cabbage Farming: লাল বাঁধাকপি চাষের সহজতম পদ্ধতি
মুখে রুচি বাড়াতে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ করমচার জুড়ি মেলা ভার। হৃদপিন্ড সুস্থ রাখতে এই ফলের ভূমিকা প্রচুর। শরীরের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধিতেও এই ফল সাহায্য করে। শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ কমাতেও এই ফল খুবই প্রয়োজনীয়। যকৃত ও কিডনির সুস্থতায় এই ফলের অবদান অনস্বীকার্য। সর্দি-জ্বর, কাশি সারাতেও করমচা কাজে দেয়। ভিটামিন-এ যা চোখের জন্য খুবই উপকারী তা করমচাতে প্রচুর পরিমানে রয়েছে। ত্বক ভালো রাখতেও করমচা কাজে দেয়। দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষার্থেও করমচা অনবদ্য একটি ফল।
আরও পড়ুন: Pear Fruit Farming Process: সহজ পদ্ধতিতে নাশপাতি ফলের চাষ
Share your comments