অতি প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে ও আফ্রিকা মহাদেশে বাজরা চাষ অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি চাষাবাদ পদ্ধতি। বাজরা একটি মিলেট জাতীয় ফসল। প্রতিকূল আবহাওয়া সহনশীল এই বিশেষ ফসল, প্রধানত ঘাস জাতীয় একটি ফসল। বাজরা বা pearl millet চাষ করার জন্য কোনওরকম আলাদা ভাবে পরিচর্যা করতে হয় না। তবে বাজরার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য, এবং ফসলের মান ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সার প্রয়োগ এবং নিয়ম করে সেচকার্য চালাতে হবে। একসময় দরিদ্র মানুষদের মধ্যে বাজরার রুটি, ছাতু খাওয়ার চল থাকলেও, বর্তমানে সব শ্রেণীর মানুষ এই শস্য গ্রহণ করে থাকে। পুষ্টিগুণের দিক থেকে অনন্য এই বাজরা ফসল গোটা দেশ ছাড়াও, পশ্চিমবঙ্গেও ভালো পরিমাণে চাষ হয়।
চাষের জন্য জমি তৈরি (Land preparation)
উপযুক্ত বীজতলা তৈরি বাজরা চাষের জন্য খুবই দরকারি। বাজরার বীজ কি ছোট হওয়ায় বীজতলা তৈরী করার সময় মাটি যাতে ঢেলাযুক্ত না হয়, তার দিকে নজর দেওয়া উচিত। জমির মাটি ঢেলাযুক্ত হলে বীজ গজানোয় বাধা দেখা দেবে। বীজতলা বানাতে ক্ষেতে ২-৩ বার লাঙ্গল দেওয়া উচিত। ১৫ সেমির গভীর করে চাষ দেওয়া উচিত। বাজরা চাষ করতে গেলে সবসময় জমিতে নজর দেওয়া উচিত। কখনোই যাতে জমিতে জল না জমে সেদিকে নজর দিতে হবে। এরজন্য বাজরা চাষের জন্য উঁচু জমি বেছে নিলে অর্থাৎ যেখানে জল জমবে না; চাষের জন্যই মঙ্গল। লক্ষ্য রাখতে হবে বীজতলার মাটি অর্থাৎ যেখানে চাষ হচ্ছে সেই মাটি যেন রসসম্পৃক্ত হয়।
বীজ এবং চাষ (Cultivation process)
বাজরা চাষ করতে হলে ১ হেক্টর জমির জন্য ৫ কেজি বীজ যথেষ্ট। প্রতিটি সারির মধ্যবর্তী দূরত্ব ৪৫ সেমি এবং প্রতিটি গাছের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১০ থেকে ১২ সেমি হওয়া উচিত। বাজরার বীজ ২-৩ সেমি গভীরতায় বপন করতে হবে। মূলত জমিতে বীজ ছিটিয়ে এই চাষ করা হয়। গাছের বৃদ্ধি উন্নত করতে এবং ভালো অঙ্কুরোদ্গমের জন্য বীজ বপন করে চাষাবাদ করা উচিত।
চাষের উপযুক্ত সময় (Right time for Cultivation)
সঠিক ভাবে বাজরা চাষের জল সেচ দরকার। সেচের ব্যবস্থা আছে এমন জমিতে বাজরা চাষ করা উচিত। জুন-জুলাই মাস বাজরা চাষের উপযুক্ত সময়। বাজরা সময় মতো না চাষ করতে না পারলে পুনঃরোপন করেলও অসুবিধা নেই।
২০০ বর্গমিটার জমিতে ২ কেজি বীজ বুনলে এক হেক্টর জমিতে চাষে প্রয়োজনীয় বাজরা চারা পাওয়া যায়। চাষ করা সমান জমিতে বীজ বুনতে হবে। ১০ সেমি দূরত্বে এবং ১.৫ সেমি গভীরতায় বীজ বুনতে হবে। তিন সপ্তাহ পর চারা তুলে পুনরায় রোপন করতে হবে। এটা হলো পুনঃরোপনের জন্য প্রস্তুত করা চারা।
যখন চারা তোলা হয় তখন মাটি ভিজে থাকা প্রয়োজন যাতে শিকড়ে কোনো আঘাত না লাগে। পুনঃরোপনের সময় প্রতি থরাং একটি করে চারা লাগাতে হবে। প্রতিটি সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেমি এবং প্রতিটি চারার মধ্যে দূরত্ব হবে ১০ সেমি।
সেচ ব্যবস্থা (Irrigation)
বৃষ্টি হলে বাজরার চাষ ভালো হয়। বৃষ্টি সঠিক ভাবে হলে সেচ দরকার পড়ে না। খরা দেখা দিলে দিলে তখন দু'বার সেচ দিতে হবে। বৃষ্টি খুব ভালো ভাবে নিতে পারলেও, বাজলা জল জমা জমি সহ্য করতে পারে না। জমিতে কোনওভাবে জল জমলে সেই জল নিষ্কাশন করে বার করার ব্যবস্থা করতে হবে।
আগাছা দমন (Weed management)
নিয়মিত বাজরা জমি পরিষ্কার করতে হবে। চাষের ৩ থেকে ৫ সপ্তাহ পর নিড়ানি দিতে হবে। বাজরা জমিতে যাতে আগাছা না জন্মায়, তার দিকে নজর দিতে হবে ফুল আসার আগে পর্যন্ত ২-৩ বার নিড়ানি দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: Pomegranate Farming procedure in Terrace: ছাদে বেদানা চাষের সহজতম পদ্ধতি
ফসল তোলা (Harvest)
২০% আর্দ্রতা একটি পূর্ণবয়স্ক বাজরা গাছের থাকে। ফসল সংগ্রহের জন্য পুরো গাছ কাটতে হয়। পুরো গাছ না কাটা হলে, শীষ প্রথমে তোলা হয় এবং বাদবাকি গাছ পরে কেটে ফেলা হয়। মাড়াই মেশিন দিয়ে ইয়ারহেড অথবা শীষ থেকে দানা বের করে কুলা দিয়ে হাকিয়ে অথবা ফ্যানের বাতাসে খোসা উড়ানো হয়।
ফসল তোলার পরবর্তী ব্যবস্থা
ফসল তোলার পর প্রথম কর্তব্য হল শস্যকে রোদে শুকানো। রোদে শুকিয়ে বীজগুলির আর্দ্রতা ১২-১৪% করে নেওয়া হয়। পরে তা সংরক্ষণ করা হয় মাটির পাত্রে। বাজরার খড় উৎকৃষ্টমানের পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই খড় শুকিয়ে শীতকালে পশুদের খাবার হিসাবে দেওয়া যায়।
বাজরার রুটি এবং ছাতু পুষ্টিগুণে ভরপুর। বহু মানুষ বর্তমানে এই উৎপাদিত ফসল খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করছে। বাজরার রুটি এবং ছাতু, তাছাড়াও এর খড় দিয়ে তৈরী পশুখাদ্যের চাহিদা বাজারে বিপুল।
আরও পড়ুন: Brahmi Herbs Cultivation process: ব্রাহ্মী শাক চাষ করে হয়ে উঠুন লাভবান
Share your comments