স্ট্রবেরি একটি নাতিশীতোষ্ণ ফসল। এই কারণেই আপনি বেশিরভাগ ভারতের পাহাড়ি স্টেশনগুলিতে স্ট্রবেরি খুঁজে পান। আজকাল, স্ট্রবেরি ভারতের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। ভারত সম্প্রতি স্ট্রবেরি চাষের একটি বিস্ময়কর সাফল্য উপভোগ করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক মন কি বাত অনুষ্ঠানে ভারতের বিভিন্ন অংশে স্ট্রবেরির প্রশংসনীয় চাষ সম্পর্কে অনেক কথা বলেন।
মাটি ও জলবায়ু(Soil & climate):
স্ট্রবেরি মূলত মৃদু শীত প্রধান অঞ্চলের ফসল। ফুল ও ফল আসার সময় শুকনো আবহাওয়া প্রয়োজন। উর্বর দোআঁশ থেকে বেলে-দোআঁশ যেসব জমিতে জল জমে সেখানে স্ট্রবেরি ফলানো যাবে না।
জমি তৈরী:
জমি ভালভাবে চাষ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে অন্ততঃ ১ফুট গভীর করে জমি চাষ দিতে হবে। শেষ চাষের সময় পরিমানমতো সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। স্ট্রবেরির চারা আশ্বিন (মধ্যসেপ্টেম্বর থেকে মধ্যঅক্টোবর) মাসে রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরি চারা রোপণ করা যায়।
চারা রোপন:
চারা রোপণের জন্য জমিতে বেড তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি বেড প্রায় ৩ ফুট প্রশস্ত করে তৈরি করতে হবে। দুই বেডের মধ্যে ১-১.৫ ফুট চওড়া নালা রাখতে হবে। প্রতিটি বেডে ২ লাইনের মধ্যে ১.৫-২ ফুট দূরত্ব রাখতে হবে। প্রতিটি লাইনে ১-১.৫ ফুট দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হবে। এই হিসেবে প্রতি শতকে প্রায় ১৫০টি চারা রোপণ করা যায়।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
প্রতি শতক জমিতে শুকনো পচা গোবর সার ১০০-১২০ কেজি, ইউরিয়া সার ১ কেজি, টিএসপি সার ৮০০ গ্রাম, এমওপি সার ৯০০ গ্রাম, জিপসাম সার ৬০০ গ্রাম ব্যবহার করতে হবে। শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম ও অর্ধেক পরিমাণ এমওপি সার জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া ও অবশিষ্ট এমওপি সার চারা রোপণের ১৫ দিন পর থেকে ১৫-২০ দিন পর পর ৪-৫টি কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ:
জমিতে রসের অভাব দেখা দিলে প্রয়োজনমতো জল সেচ দিতে হবে। স্ট্রবেরি জলাবদ্ধতা একদমই সহ্য করতে পারে না। তাই বৃষ্টি বা সেচের অতিরিক্ত জল দ্রুত বের করে দিতে হবে।
চারা উৎপাদন পদ্ধতি:
স্ট্রবেরি রানারের (কচুর লতির মতো লতা) মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে। তাই পূর্ববর্তী বছরের গাছ নষ্ট না করে জমি থেকে তুলে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রোপণ করতে হবে। ওই গাছ থেকে উৎপন্ন রানারের শিকড় বের হলে তা কেটে ৫০ ভাগ গোবর ও ৫০ ভাগ পলিমাটিযুক্ত পলিথিন ব্যাগে লাগাতে হবে। এরপর পলিথিন ব্যাগসহ চারাটি হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
অতিরিক্ত বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য চারার উপর পলিথিনের ছাউনি দিতে হবে। রানারের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হলে স্ট্রবেরির ফলন ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই ফলন ক্ষমতা ভালো রাখার জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা ব্যবহার করা ভালো।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
ফল পচা রোগ
এ রোগের আক্রমণে ফলের গায়ে জলে ভেজা বাদামী বা কালো দাগের সৃষ্টি হয়। দাগ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। এ জন্য ফল পরিপক্ক হওয়ার আগে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন-নোইন ৫০ ডব্লিউপি অথবা ব্যাভিস্টিন ডিএফ নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার জলের সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
মাকড়
মাকড়ের আক্রমণে স্ট্রবেরির ফলন ক্ষমতা ও গুণগত মান মারত্মকভাবে ক্ষতি হয়। এদের আক্রমণে পাতা তামাটে বর্ণ ধারণ করে ও পুরু হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে কুচকে যায়। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যবহত হয়। এ জন্য ভারটিমেক নামক মাকড়নাশক প্রতি লিটার জলের সাথে ১ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
কচ্ছের স্ট্রবেরি
কচ্ছের মরুভূমিতে স্ট্রবেরি হয়! হরেশ ঠাকার নামে একজন কৃষক লোনাভলার স্ট্রবেরি ক্ষেত থেকে 30,000টি গাছ সংগ্রহ করেছিলেন। লোনাভলা মহারাষ্ট্রে, যেটি তার স্ট্রবেরি চাষের জন্য পরিচিত। তবে কচ্ছের স্ট্রবেরি একটি স্বপ্ন ছিল যতক্ষণ না হরেশ এটিকে বাস্তবে রূপ দেয়। তিনি ইসরায়েলের প্রযুক্তি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ড্রিপ সেচ ব্যবহার করেন । তিনি সম্প্রতি তার প্রথম স্ট্রবেরি ফসল সংগ্রহ করেছেন।
গোয়ায় স্ট্রবেরি
শ্যাম গাঁওকার নামে এক তরুণ কৃষক গোয়ার সাত্তারি তালুকের গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে স্ট্রবেরি চাষ করেন। তিনি লঙ্কার পাশে স্ট্রবেরি চাষ করেন।
এগুলি স্ট্রবেরি চাষের জন্য সবচেয়ে অসম্ভাব্য কিছু জায়গা, তবুও কৃষকরা এই সুন্দর লাল এবং সুস্বাদু ফলের ফসল সফলভাবে বৃদ্ধি করছে।
আরও পড়ুনঃ ভুট্টার রোগ: কৃষকরা ভুট্টার এই ৫টি বিপজ্জনক রোগ থেকে সাবধান
Share your comments