সাম্প্রতিককালে মানুষ অনেক বেশী সচেতন হয়ে উঠেছে। রাসায়নিক ভাবে প্রাপ্ত সবজী বর্জন করে জৈব পদ্ধতিতে (Organic Farming) উৎপন্ন খাদ্যের প্রতি তার ঝোঁক বেশী। জৈব পদ্ধতিতে ফসল চাষ করলে কৃষকের উপার্জনও অনেকটাই বাড়বে। পুষ্টিগত গুরুত্বের দিক থেকে বিচার করলে জৈবসারে রাসায়নিক সারের তুলনায় অনেক বেশী পুষ্টিমৌল থাকে এবং তাও অনেকটাই সস্তায় পাওয়া যায়। এছাড়াও জৈব সারের অনেক কিছু সুবিধা পাওয়াও যায়। জৈবসারে কি কি সুবিধা পাওয়া যায় সেই বিষয়ে কিছুটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হল, যদি কেউ এখনো জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু করেন নি, তারা অবশ্যই আমাদের বর্ণিত জৈবসারের (Organic fertilizer) ৫ টি গুণ দেখে শীঘ্রই এই প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করবেন।
১) সস্তা পুষ্টিমৌলের উৎসঃ
তামিলনাড়ুতে একটি পরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে ২৫ কেজি নাইট্রোজেন পেতে হলে হেক্টর প্রতি ১৮০ টাকা মূল্যের রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়, যেখানে মাত্র ৫৪ টাকা মূল্যের নীলাভ সবুজ শৈবাল ব্যবহার করে চাষীরা সমপরিমাণ নাইট্রোজেন পেতে পারে। আর চাষীরা যদি নিজেরাই শৈবাল চাষের দায়িত্ব নেন তাহলে তো আরও কম খরচে কাজ হয়ে যাবে। আরও পরীক্ষা করে জানা গেছে যে, মাত্র ৩০ টাকার নীলাভ শৈবাল (প্রতি হেক্টর ১০ টাকা হিসেবে) ৫০০-৭০০ টাকার অতিরিক্ত আয়ও পাওয়া যাবে। তাছাড়া নীলাভ শৈবাল বা অ্যাজোলা জৈব সার ব্যবহারে জমির এক-তৃতীয়াংশ নাইট্রোজেনের চাহিদাও কমিয়ে দেয়। যদি ভারতের ৫০% ধান উৎপাদক অঞ্চলে এই শৈবাল প্রযুক্তিকে চালু করা যায় (২০ মিলিয়ন হেক্টর), যা সারা বৎসর ৮০০ মিলিয়ন কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহ করে থাকে (প্রতি হেক্টর ৪০ কেজি হিসেবে), এবং এই পরিমাণ নাইট্রোজেন পেতে হলে ৪১৭.৬ কোটি টাকার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে প্রতি বছর।
২) স্বল্পমাত্রিক মৌলের যোগানঃ
বায়োফার্টিলাইজার যে শুধুমাত্র নাইট্রোজেনের যোগান দেয় তাই নয়, এটি উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় স্বল্পমাত্রিক উপাদান এর যোগানেও সক্ষম যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। এই স্বল্পমাত্রিক উপাদানের অভাবে অনেক সময়ে উচ্চফলনশীল বীজেও উৎপাদন থমকে যায় শুধুমাত্র উদ্ভিদের সীমিত বৃদ্ধির কারণে। এই স্বল্পমাত্রিক উপাদানগুলি অধিক নাইট্রোজেন, পটাশ, ও ফসফেট
সার ব্যবহারে নাও মিলতে পারে, বরং সারের অধিক ব্যবহারে জমি তার উৎপাদনের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলতে পারে। এই অবস্থায় যদি অত্যাধিক পরিমাণে শ্যাওলা ও অ্যাজোলা জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা হয় তবে যেমন উৎপাদন বাড়বে তেমনি বৃদ্ধি পাবে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর যোগান।
৩) জৈব বস্তুর সরবরাহঃ
মাটির সবথেকে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো মাটির জৈব বস্তুর সমাহার যা মাটিকে অনবরত পুষ্টিদ্রব্য ও শক্তি এমনকি প্রয়োজনীয় অণুজীবের সরবরাহ করে থাকে। জৈব বস্তুর উপস্থিতি মাটির ভৌত ও রাসায়নিক চরিত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে। অ্যাজোলা ও নীলাভ শৈবাল প্রতি হেক্টরে ৮-১০ টন বায়োমাস তৈরিতে সক্ষম, যা মাটির জৈব বস্তুর সম্ভার গড়ে তোলে।
৪) রাসায়নিকের কুপ্রভাব থেকে মাটিকে সুরক্ষা প্রদানঃ
কয়েক বছর ধরে পুনঃপুন রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির মধ্যে অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায় যা মাটির গুণমানতা হ্রাস করে, ফলে মাটি পরবর্তী কালে একই সার প্রয়োগের ফলে অসাড় হয়ে পড়ে। এই অবস্থার থেকে তখনি নিস্তার সম্ভব যখন জৈব ও রাসায়নিক সার কে একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হবে। এই জৈব সার মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের নিয়ন্ত্রণে বাফার হিসাবে কাজ করে এবং মাটির সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। এই জৈবসার মাটির ধাতব আয়ন সমূহকে ধরে রাখে ফলে ক্ষতিকারক কীটনাশকসমূহের প্রভাব থেকে মূল অংশটি সুরক্ষিত থাকতে পারে।
৫) উদ্ভিদের বৃদ্ধিসহায়ক হরমোন নিঃসরণে সহায়তা করাঃ
উদ্ভিদ এর বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য কতকগুলি প্রাকৃতিক জটিল রাসায়নিকের পর্যাপ্ত নিঃসরণের প্রয়োজন যাদের বলা হয় হরমোন। অ্যাজেটোব্যাক্টর, নীলাভ শৈবাল, ও অ্যাজোলা এই বৃদ্ধি হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে (যেমন- ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি), যা প্রধান শস্যর ক্ষেত্রে অনেক বেশী উপকারী। কখনো কখনো জৈবসার প্রয়োগ কৃষিক্ষেত্রে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যদিও বা মাটি পুষ্টিদ্রব্যে ভরপুর থাকে, কারণ জৈবসার শস্যের জন্য উদ্ভিদ বৃদ্ধি হরমোন সরবরাহ করে থাকে ।
আরও পড়ুন - জৈব, অজৈব ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফসলের আগাছা দমন (Crop Weed Control)
Share your comments