ভারত সরকারের সুপারিশকৃত করোনা ভাইরাস (কোভিড- ১৯) সংক্রমণের জন্য দেশব্যাপী লকডাউন-এর সময়ে কৃষকদের জন্য কৃষিকার্যের নির্দেশাবলী -
১) পশু চিকৎসালয়ের কাজকর্ম
২) কৃষিপণ্য ক্রয় ও ন্যুনতম সমর্থন মূল্যের কাজে যুক্ত সংস্থার কাজকর্ম
৩) কৃষিজাত পণ্যের বাজার কমিটি (এপিএমসি) বা রাজ্য সরকার অনুমোদিত কৃষিবাজার বা মান্ডিসমূহ
৪) কৃষক বা কৃষি শ্রমিক দ্বারা জমিতে বিভিন্ন কৃষিকাজ
৫) কৃষি যন্ত্রপাতি ভাড়া দেওয়ার সংস্থার (কাস্টম ফায়ারিং সেন্টার) কাজকর্ম
৬) সার/কীটনাশক/বীজ উৎপাদনকারী সংস্থার উৎপাদন ও প্যাকেজিং এর কাজকর্ম
৭) শস্য বোনা বা ফসল কাটার কাযে নিযুক্ত যন্ত্রসামগ্রী যেমন কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর এবং অন্য যন্ত্রপাতির আন্তঃরাজ্য ও রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত
এই অব্যাহতি দেশের কৃষিকাজের দৈনন্দিন কাজকর্মকে বাঁধাহীনভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে, যা নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের যোগানকে মসৃণ রাখবে এবং লকডাউনের সময়ে কৃষকরা কৃষিকার্যে কোনরকম অসুবিধার সম্মুখীন হবেন না। এই নির্দেশ যাতে সঠিকভাবে কার্যকরী হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ ইতিমধ্যেই সমস্ত রাজ্য সরকার বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক বা দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
ভারত সরকারের নীতি নির্দেশিকা অনুযায়ী রাজ্য সরকারগুলির বিভিন্ন মন্ত্রক/দপ্তর থেকে কিছু নির্দেশাবলী জারি করা হয়েছে, যাতে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট কাজকর্ম বাধাহীন ও নিরবচ্ছিন্নভাবে হয়।
কৃষকেদর জন্য পরামর্শ -
ফসল কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও সংগ্রহ -
করোনা ভাইরাস (কোভিড- ১৯) নামক মহামারীর ব্যাপক সংক্রমণ এমন সময়ে দেখা দিয়েছে, যখন রবি মরসুমের বিভিন্ন ফসল সংগ্রহের সময়। মাঠ থেকে এই রবিশস্য সংগ্রহ ও তা ঝাড়াই মাড়াই করে বাজারজাত করার কাজ ইত্যাদি পুরোপুরি সময় নির্ধারিত ব্যাপার। এই বিপর্যয়ের সমেয় দাঁড়িয়ে কৃষকদেরকে সব রকমের সতকর্তা ও সাবধানতা নিতেই হবে, যাতে করে এই মহামারী ছড়িয়ে না পড়ে।
এর জন্য কিছু সাধারণ ও সহজ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যেমন -
যে কোন সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, ৬০-৭০ শতাংশ অ্যালকোহল দ্রবণ দিয়ে হাত ও যন্ত্রপাতি মুছে নেওয়া, মুখে মাস্ক পরা, সুরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করা, একে অপরের থেকে নির্ধারিত নিরাপদ দূরত্ব (১- ২ মিটার) বজায় রাখা এবং সঠিকভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা। কৃষকরা এবং কৃষি শ্রমিকগণ সমস্ত রকম কৃষিকাজের প্রতিটি ধাপেই এই সতর্কতামূলক আচরণবিধি ও নিরাপদ দূরত্ব অবশ্যই মেনে চলবেন-
১) দেশের উত্তরভাগের রাজ্যগুলিতে এখন গম সংগ্রহের সময় এবং এরজন্য কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের মধ্যে ও রাজ্যের বাইরে যাতায়াতকে লকডাউনের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছে ও এর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ, সারানো বা ফসল কাটার কাজে নিযুক্ত কর্মীদের জন্য আবশ্যিক সতর্কতামূলক সুরক্ষাব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।
২) রবি মরসুমে সরিষা হল দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফসল, যা কৃষকরা এখন হয় মাঠ থেকে ফসল তুলছেন বা ঝাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত আছেন।
৩) জমি থেকে মুসুর, ভুট্টা এবং লঙ্কা তোলার কাজ চলছে এবং ছোলাও খুব শীঘ্রই সংগ্রহ করা হবে।
৪) মাঠ থেকে আখ কাটা এই মুহূর্তে পুরোদমে চলছে এবং উত্তরের রাজ্যগুলিতে আখ লাগানোর কাজও শুরু হয়ে গেছে।
৫) ফসল তোলার সময় এবং তার আগে ও পরে যথোপযুক্ত পরিচ্ছন্নতা এবং সামাজিক দূরত্বের বিষয়গুলি পালন করতে হবে।
৬) যেসব জায়গায় হাত দিয়ে মাঠের ফসল তোলা ইত্যাদি কাজগুলি করতে হবে, সেখানে এইসমস্ত কাজগুলি এমনভাবে করতে হবে, যাতে কর্মরত প্রতিটি মানুষের মাঝখানে ৪ - ৫ ফুটের নিরাপদ দূরত্ব বজায় থাকে। এক্ষেত্রে ৪ - ৫ ফুট দূরে দূরে কয়েকটি সারির ফসল কাটার দায়িত্ব এক একজনকে দেওয়া যেতে পারে, যাতে কৃষক বা কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় থাকে।
৭) মাঠে কর্মরত প্রতিটি মানুষের উচিৎ জীবাণু প্রতিরোধী মাস্ক পরে কাজ করা এবং বারেবারে সাবান দিয়ে নিজেদের হাত ধুয়ে নেওয়া।
৮) মাঠে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়া, খাবার খাওয়া এবং তারপর ফসল নিয়ে যাওয়ার সময়-সবক্ষেত্রেই উচিৎ পারস্পরিক দূরত্ব সীমা বজায় (৪ - ৫ ফুট) রাখা।
৯) মাঠে কাজ করার সময় যতটা সম্ভব ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করতে হবে। একই দিনে অধিক সংখ্যক লোককে কাজে নিযুক্ত না করাই ভালো।
১০) এই সময়ে যথাসম্ভব পরিচিত মানুষজনকেই মাঠের কাজে নিযুক্ত করা ভালো, এতে করে সম্ভাব্য করোনা ভাইরাস জীবাণুবহনকারী কোন মানুষের থেকে মাঠে নিযুক্ত অন্যান্য লোকের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা এড়ানো যাবে।
১১) হাতে করে ফসল কাটার চাইতে যন্ত্রের সাহায্যে ফসলকাটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যন্ত্র চালানোর জন্য যে কজন লোকের প্রয়োজন কেবলমাত্র সে কজনেকই এই কাজে লাগাতে হবে।
১২) ফসল কাটার যন্ত্রগুলিকে প্রবেশপেথ নিয়মিতভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ফসল বা উৎপাদন সামগ্রী বহন করার গাড়ি এবং বস্তাবন্দী করার যন্ত্র, বস্তা ও অন্যান্য প্যাকেজিং সামগ্রীও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ফসল তোলার সময় তা ৪ - ৫ ফুট দূরে দূরে ছোট ছোট স্তুপে করে এক একটি স্তুপের দায়িত্ব ১ - ২ জনকে দেওয়া যেতে পারে।
১৩) ভুট্টা ও চীনাবাদাম ঝাড়ানোর যন্ত্রগুলিকে বিশেষ করে যেগুলি বিভিন্ন কৃষকগোষ্ঠী দ্বারা ব্যবহৃত হত, সেগুলিকে উপযুক্তভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মেশিনের যে সমস্ত যন্ত্রাংশ বারে বারে হাত দিয়ে ব্যবহার করা হয়, সেগুলিকে সাবান জল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
তথ্যসূত্র – শুভ্রজ্যোতি চ্যাটার্জ্জী
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments