বনসাই। যাকে এক কথায় বলা যায় জীবন্ত শিল্প। এই শিল্প প্রস্তুতকারক উদ্ভিদপ্রেমীদের হাতে যেন জাদু থাকে। সঠিক ভাবে ডিজাইন কাটিং, পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে ওঠে অনিন্দ্যসুন্দর বনসাই। একসময় মানুষ শখ করে বনসাই চাষ করলেও, বর্তমানে বহু মানুষ বনসাই চাষকে পেশা হিসাবে নিয়েছে। ঘরে ঘরে এখন বনসাইকে রাখা হচ্ছে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য। আর এর জন্যই বেড়েছে বনসাই বিক্রির চাহিদা। একফালি জায়গার মধ্যেও বনসাই একটু প্রকৃতির শীতল ছায়ার স্পর্শ দিতে পারে। ব্যস্ত জীবন তাই কিছুটা শান্ত করতেই অনেকে ড্রয়িংরুম, অফিসে বনসাই লাগাচ্ছেন। মনে করা হয়, বনসাই-য়ের উৎপত্তিস্থল চিনে। প্রায় ২০০০ বছর আগে এই শিল্পের সূত্রপাত বলে জানা যায়।
পরবর্তী কালে জাপানেও বনসাইয়ের চাষ হতে শুরু করে। জাপানি শব্দ বনসাই ভাঙলে দাঁড়ায় বন+সাই। বন শব্দের মানে ছোট পাত্র এবং সাই শব্দের অর্থ গাছ। দুই শব্দকে জুড়লে পুরো মানে হয়, ছোট পাত্রে গাছ। আর এই ছোট পাত্রের গাছকে নিয়েই যুগের পর যুগ চলছে পৃথিবী জুড়ে সৌন্দর্য্যায়নের প্রকাশ।
বনসাই চাষের পদ্ধতি (Bonsai making process)
বনসাই বানানোর জন্য ফলজ অথবা বনজ গাছ বেছে নেওয়া উচিত। বট, পাকুর, হিজল, অশ্বথ, ডুমুর, নিম, জামরুল ও কৃষ্ণচূড়া গাছ বনসাইয়ের জন্য ব্যবহার করা উচিত। টবের মধ্যে দোআঁশ মাটি এবং জৈবসার মিশিয়ে বনসাইয়ের উপযুক্ত মাটি বানানো হয়। আলো বাতাস খেলা করে এমন জায়গায় বনসাই রাখা উচিত। তবে তীব্র সূর্য আলোতে বনসাই না রাখাই ভালো।
আরও পড়ুন: Cultivation of Coloured Fish in tank রঙিন মাছের চাষে করুন দ্বিগুণ আয়
বনসাই বানাতে হলে (Bonsai making tools)
বনসাই বানানোর জন্য চাই ভালো টব অথবা পট। এছাড়াও পাতা কাটার জন্য কাঁচি প্রয়োজন। এছাড়াও কনকেক, ওয়্যারটাকার নামেও বেশ কিছই উপকরণের দরকার পড়ে বনসাই বানাতে।
শাখা ছাঁটাই
৩-৪ বছর পরে বনসাই কিছুটা বড় হলে তখন প্রুনিং করার দরকার পড়ে। মোটা শাখাকে প্রয়োজনমাফিক কেটে দিতে হবে। বনসাইয়ের শাখাগুলির আকৃতি সুন্দর করে তুলতে, সঠিক উপায়ে তার বাঁধা উচিত। তার সঠিক উপায়ে বাঁধলে বনসাইয়ের রূপ খুলে যায়। তখন এর আঁকাবাকা শাখা-প্রশাখা বনসাইকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যায়। সঠিক প্রশিক্ষণ ছাড়া বনসাই বানানো কঠিন। তাই এই বিশেষ শিল্প সৃষ্টি করার জন্য অভিজ্ঞদের থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত।
বনসাই গাছের পরিচর্যা (Bonsai caring)
১. প্রত্যেক গাছরই খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনই বনসাইয়েরও খাদ্যের প্রয়োজন। তাই বনসাইকে বাঁচিয়ে রাখতে গাছকে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। কালো মাটি, বালু বা ইটের চূর্ণ, সরিষার খোসা বনসাইকে খাবার হিসাবে দেওয়া যেতে পারে।
২. বনসাই অতিমাত্রায় জল ও রোদ এই দুইই সহ্য করতে পারে না। এই বিষয়ে তাই লক্ষ্য রাখা দরকার।
৩. বনসাই গাছ সবসয়ময় পরিষ্কার রাখতে হয়। এতে সৌন্দর্য্য বিকাশেও বাধা পায় না, সাথে সাথে গাছও ভালো থাকে। তাই বনসাই ভালো রাখতে জল দিয়ে পাতা ও ডাল মাঝে মধ্যেই মুছে দেওয়া ভালো।
৪. বনসাইতেও পোকামাকড়ের আক্রমণ ঘটে। তাই টবের মাটিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
৫. বনসাইতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। সময় না থাকলে তরল বা স্পেস সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৮. বনসাই ভালো এবং সুস্থ সবল রাখতে গেলে একবছর পরপরই মাটি বদলানো উচিত।
৯. পেশাদারি ভাবে যদি বনসাই বানাতে হয়, তাহলে নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতি কিনে নেওয়া উচিত। কারণ বনসাই কাটিং, ডিজাইনে এই যন্ত্রগুলি কাজের লাগবে। বনসাইয়ের মান উৎকৃষ্টতম করতে হলে, পরিচর্যার সঙ্গে প্রয়োজনমাফিক তার ডালপালা ছাটাইও করতে হবে।
আরও পড়ুন: Artificial Fish Breeding in Haldia কৃত্রিম উপায়ে মৎস্য প্রজননে নতুন পথ দেখাল হলদিয়া
Share your comments