গুটিকলম কীভাবে করবেন? এর সুবিধা কি কি?

গুটিকলম নাতিশীষ্ণ অঞ্চরের গাছের বংশবিস্তারে বিশেষ করে ফল গাছের বংশ বিস্তারে ব্যবহৃত হয়, যেমন - লিচু, পেয়ারা, কাগজীলেবু, জামরুল, বাতাবী, লেবু, ডালিম, করমচা, গোলাপজাম, জলপাই, কামিনী ফুল, ভেলভেট ফুল ইত্যাদি।

KJ Staff
KJ Staff
Grafting procedure
Grafting method in fruit tree (Image Credit - Google)

গুটিকলম নাতিশীষ্ণ অঞ্চরের গাছের বংশবিস্তারে বিশেষ করে ফল গাছের বংশ বিস্তারে ব্যবহৃত হয়, যেমন - লিচু, পেয়ারা, কাগজীলেবু, জামরুল, বাতাবী, লেবু, ডালিম, করমচা, গোলাপজাম, জলপাই, কামিনী ফুল, ভেলভেট ফুল ইত্যাদি।

গুটিকলমের সুবিধা গুলি হল -

ক) এটি একটি সহজ পদ্ধতি এবং করতে খুব একটি দক্ষতার প্রয়োজন হয় না।

খ) অল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাছের চারা উৎপাদন করা যায়।

গ) কলমের চারায় কম সময়ে ফল ধরে।

ঘ) যে সমস্ত প্রজাতি কাটিং এ সহজে শিকড় গজায় না তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সফলতা বয়ে আনতে পারে৷

গুটিকলমের ধাপসমূহ -

ধাপ ১. নির্বাচিত শাখা যাতে গুটি কলম করা হবে।

ধাপ ২. পাতা অপসারণ করে চক্রাকারে বাকল তুলে ফেলা হয়।

ধাপ ৩. কাটা অংশের চারিদিকে রুটিং মিডিয়াম দিকে ঢেকে দেওয়া হয় এবং জল ধারণ নিশ্চিত করা হয়।

ধাপ ৪. রুটিং মিডিয়াম সহ ডালকে পাতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে মুড়ে দিতে হবে।

ধাপ ৫. মূল গজানো দাবা কলম।

গুটি কলম সাধারণত -

ক) মাটির সমান্তরালে অবস্থান করছে এমন শাখায় করা হয়ে থাকে।

খ) নির্বাচিত ডালের বয়স ৬-১২ মাস হতে হবে।

গ) ডালটি পেন্সিলের মত মোটা হতে হবে, গাছের দক্ষিণ পূর্ব দিকের ডাল হলে উত্তম। নির্বাচিত শাখার অগ্রভাগের ৩০-৪০ সেমি নীচে কয়েকটি পাতা সরিয়ে দুটি পর্ব মধ্যবর্তী অংশ থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে চক্রাকারে ৪-৫ সেমি পরিমাণ জায়গায় বাকল তুলে ফেলতে হয়। কাটা জায়গার কাঠের উপরের সবুজাভ আবরণটি ছুরির বুক দিয়ে চেঁছে ফেলেদিতে হয। এতে ক্যাম্বিয়াম যোগসুত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ডালের উপরের দিকের কাটাটি গিটের কাছাকাছি হলে ভাল হয়। কারন এতে কলমে তাড়াতাড়ি শিকড় গজায়। এরপরকাটা জায়গাটিকে পুরোপুরি রুটিং মিডিয়া (৫০% এটেল দোয়াশ মাটি + ৫০% পঁচাগোবর) নারিকেলের ছোবড়ার গুড়া, নারিকেলের ছোবড়া, পাটের আঁশ ইত্যাদি দিয়েঢেকে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে শিকড় গজানোর জন্য কাটা উপরের অংশ যেন অবশ্যই রুটিং মিডিয়া দিয়ে ঢাকা থাকে। রুটিং মিডিয়া স্থাপনের পর এর চারদিকেস্বচ্ছ পলিথিনের শীট শক্ত করে বেঁধে দিতে হয যেমন কোন ভাবেই রুটিং মিডিয়া পিছলে না নেমে যায়। এ ব্যবস্থা রুটিং মিডিয়ায় জল ধারণ নিশ্চিত করে।

অনেকসময় সহজে শিকড় গজায় না এমন প্রজাতির কলমের ক্ষেত্রে কাটা অংশে রুটিং হরমোন (IBA, NAA, Kinetin ইত্যাদি) প্রয়োগ করা হয়। বৈশাখ – আষাঢ় মাস গুটি কলমকরার উপযুক্ত সময়। গুটি কলমে শিকড় গজাতে গাছের প্রকার ভেদে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় নেয়। শিকড়ের রং প্রথমে সাদা থাকে, আস্তে আস্তে রং বদলিয়ে খয়েরী হয়। শিকড়ের রং খয়েরী হলে মাতৃগাছ থেকে ২ থেকে ৩ দফায় কেটেনিয়ে এসে নার্সারী বেডে রোপণ করতে হয়। উদাহারণ লিচু, কাগজীলেবু, পেয়ারা, ডালিম, জামরুল, বতাবীলেবু, জলপাই, গোলাপজাম, করমচা, আম ইত্যাদি।

আরও পড়ুন - ওয়ান নেশন ওয়ান এমএসপি ওয়ান ডিবিটি স্কিম - রাজ্যের কৃষকরা ফসলের দাম পাবেন অ্যাকাউন্টে

লিচু গাছের গুটি কলম করার পদ্ধতি :

  • গুটি কলম করার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল৷

  • গুটি কলমের জন্য ১-২ বছর বয়সী, সতেজ, সরল, নিরোগ, পেন্সিলের মতো মোটা ডাল বেছে নিতে হবে ৷

  • নির্বাচিত ডালের আগা হতে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার পরে (লম্বা) ঠিক একটি গিঁটের নিচে ৩-৪ সেন্টিমিটার পরিমাণ মাপের ছাল

  • গোল করে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে ডালটির কেবল বাকল সাবধানে উঠিয়ে ফেলতে হবে৷

  • এরপর জৈব সার মিশ্রিত (৩ ভাগ এঁটেল মাটি ও ১ ভাগ পঁচা গোবর বা পাতা পঁচা) মাটির সাথে জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে৷ উক্ত পেস্ট দিয়ে কাটা অংশ সমান ভাবে ঢেকে দিতে হবে৷

  • ঢেকে দেওয়ার পর ২০ সেমি লম্বা ও চওড়া পলিথিন দিয়ে মাটির বলটি ঢেকে দিয়ে সুতলি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে ৷

  • শিকড় আসতে সময় লাগে ২-৩ মাস ৷ শিকড়ের রঙ খয়েরী বা তামাটে হলে কলম করা ডালটি গুটিসহ কেটে এনে পলিথিন সরিয়ে দিয়ে ছায়া জায়গায় তৈরি বীজতলায় বা টবে ৪-৫ সপ্তাহ সংরক্ষণ করার পর গাছটি লাগানোর উপযোগী হয় ৷

গুটি কলমের কিছু অসুবিধাও আছে যেমন -

ক) বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ পদ্ধতি কাটিং অপেক্ষা ব্যয়বহুল এবং এর জন্য বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।

খ) এই পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করতে গেলে অধিক সংখ্যক মাতৃগাছের প্রয়োজন হয়।

সুবিধা অসুবিধা বিচারে যদি এই পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে একজন চাষি একে লাভজনক মনে করেন তবে তখনই এই পদ্ধতিতে কলম করা বাঞ্ছনীয়।

শাখা গুটিকলম:

শাখার আগ্রভাগের কিছুটা অংশ নিচের দিকে নুইয়ে এর অংশবিশেষ বাকল তুলে ৫-৭ সেমি মাটির গভীরে পুঁতে রাখা হয়। দুই/ তিন সপ্তাহের মধ্যে বাকল তোলা উপরের অংশের গোড়া থেকে অস্থানিক শিকড় গজায় এবং তখন মাতৃগাছ থেকে এটিকে বিচ্ছিন্ন নির্দিষ্ট জায়গায় রোপণ করতে হয়। যেমন রাস্পবেরী, ব্লাকবেরী ইত্যাদি।

আরও পড়ুন - বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে লাভজনক মালটা চাষ

Published On: 22 April 2021, 09:46 PM English Summary: How to make grafting? What are its benefits?

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters