যেহেতু শহরে দূষণ এমনিতেই বেশি, তাই ছোট্ট এক চিলতে বাগান এনে দিতে পারে সজীবতা।’ কিন্তু ছাদবাগান করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন জমে থাকা জল দ্রুত ছাদ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। কোনভাবেই ছাদ যেন ড্যাম্প বা স্যাঁতস্যাঁতে হতে না পারে। শখের বাগান (Terrace Farming) করার সাথে সাথে বাড়িও রাখতে হবে সুরক্ষিত।
ছাদবাগান করার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, গাছের পাত্র থেকে বের হওয়া জল যেন কোনভাবেই ছাদে জমতে না পারে। এজন্য, ড্রাম (Drum Farming) বা টবগুলোকে রিং বা ইটের উপর রাখা যেতে পারে। এতে পাত্রের নিচে দিয়ে আলো বাতাস চলাচল করবে এবং ছাদও স্যাতসেঁতে হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। গাছ লাগানোর জন্য ছাদে স্থায়ী বেড় বানাতে চাইলে তা ছাদ থাকে অন্তত আট ইঞ্চি উপর থেকে শুরু করতে হবে। ওয়াটার প্রুফিং, নেট ফিনিসিং বা চিপস ঢালাইয়ের মাধ্যমেও ছাদকে ড্যাম্প প্রতিরোধী করা যায়।
গাছের ডাল-পালা ছাঁটাইঃ
ছাদ বাগান সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে তাই রোগাক্রান্ত, বয়স্ক ডালপালা, পাতা কেটে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে। এতে গাছপালা রোগমুক্ত থাকবে এবং গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হবে। কুল গাছের ক্ষেত্রে কুল খাওয়ার পর ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি গাছের সমস্ত ডাল কেঁটে দিতে হবে। তাছাড়াও মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল গুলো কেটে বোর্দ পেষ্ট লাগাতে হবে।
টব বা ড্রামের মাটি পরিবর্তনঃ
এ বিষয়টিও ছাদ বাগানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সাধারণত বর্ষার শেষে কাজটি করতে পারলে ভাল । পূর্বেই কিছু বেলে দো-আঁশ অথবা দো-আঁশ মাটির দুই ভাগের সাথে একভাগ গোবর মিশাতে হবে । যে কয়টি টবের মাটি পরিবর্তন করতে হবে প্রতিটি টবের জন্য আনুমানিক ৪০ গ্রাম টিএসপি, ৪০ গ্রাম পটাশ , ১০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া ১০ গ্রাম হারে সরিষার খৈল একত্রে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে পানি দিয়ে ১০-১২ দিন রেখে দিতে হবে। অতঃপর যে টবের মাটি পরিবর্তন করতে হবে সেই গাছের টবের গাঁ ঘেঁষে ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬-৮ ইঞ্চি গভীর করে মাটি ফেলে দিতে হবে । এটি ১৬-২০ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পুরনো মাটি সরানোর পর ঐ স্থানটি পূর্বেই প্রস্তুতকৃত মাটি দিয়ে ভরে দিতে হবে ।
সার প্রয়োগ (Fertilizer Application) -
ফল গাছে বছরে অন্তত ২ বার সার দিতে হবে, যেমন- বর্ষার আগে ও বর্ষার পরে। মাছ, মাংস ও তরকারি ধোয়া জল গাছে ব্যবহার করলে গাছের খাবারের অভাব কিছুটা পূরণ হয়। এছাড়াও মিশ্র সার, হাড়ের গুড়া এবং অনুখাদ্য (দস্তা, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ) বছরে একবার প্রয়োগ করা ভালো। মাছের কাঁটা, হাড়ের টুকরা, ডিমের খোসা, তরিতরকারির পরিত্যক্ত অংশ, পাতা, একটা ড্রামে পঁচিয়ে নিয়ে ছাদ বাগানে ব্যবহার করা ভালো। এছাড়াও ট্রাইকোডারমা, কেঁচো সার, কুইক কম্পোস্ট, ও বাজারে প্রাপ্ত অন্যান্য জৈব সার ছাদ বাগানে ব্যবহার করা যেতে পারে। অপেক্ষাকৃত ছোট টব থেকে বড় টবে গাছ অপসারণ করার মাধ্যমে গাছকে স্বাস্থ্যবান করা যায়। ফুল-ফল ঝরা রোধে ও ফল ধরা বাড়াতে নানা প্রকার অনুখাদ্য/হরমোন (সিলভামিক্স, লিটোসেন, ফ্লোরা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পোকা ও মাকড় দমন (Disease Management) :
নিয়মিত ছাদ বাগান পরীক্ষা করে দেখা মাত্র পোকা বা পোকার ডিমগুলো সংগ্রহ করে মেরে ফেলা ভালো। পাতার নিচে ভাগে পোকামাকড় অবস্থান করে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক পাতায় পোকামাকড় বেশি দিন আশ্রয় নেয়। তাই পাতা হলুদ হওয়া মাত্র পাতার বোটা রেখে তা ছেঁটে দিতে হয়। অতি ঝাল ২-৩ গ্রাম মরিচের গুড়া এক লিটার জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ছেঁকে নিয়ে তাতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার ও এক চা চামচ পিয়াজের রস একত্রে মিশিয়ে ৮-১০ দিনের ব্যবধানে স্প্রে করলে জৈব পদ্ধতি অবলম্বনে গাছকে পোকার হাত থেকে নিরাপদ রাখা যায়। মাইট বা ক্ষুদ্র মাকড় খালি চোখে দেখা যায় না। লিচু, মরিচ, বেগুন, গাঁদা ফুলে মাইটের উপদ্রব বেশি দেখা যায়। মরিচের গুড়া পদ্ধতিতেও এ মাকড় দমন করা যায়। যেহেতু পোকামাকড়ের অবস্থান পাতার নিচে এ জন্য এ অংশ ভালোভাবে স্প্রে করে পোকা দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
মনে রাখবেন, ছাদ বাগানে কীটনাশক ব্যবহার না করাই ভালো। তবে যদি কীটনাশক ব্যবহার করতেই হয় তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন তার টকসিসিটি কম সময় থাকে।
শহরের ইট-পাথরের মধ্যে ছুটে চলার বিরাম নেই। দিনের শেষে প্রকৃতির একটু কোমল সজীবতা পাওয়ার জন্য মন কেমন করে ওঠে। তাই ছাদের ওপরেই করে নেওয়া যেতে পারে একটু সবুজের ছোঁয়া। কখনো টবে, কখনো বা কিছুটা জায়গায় মাটি ফেলে তৈরি করে ফেলতে পারেন মনের মতো বাগান।
আরও পড়ুন - Terrace Farming – জেনে নিন ছাদবাগানের জন্য মাটি প্রস্তুতি, গাছ রোপণ ও সার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে
Share your comments