আখ (Sugarcane Cultivation) শব্দের উৎপত্তি "ইক্ষু" থেকে। আখ একটি বর্ষজীবি উদ্ভিদ। প্রথাগতভাবে আখের কান্ডের একটি টুকরার দুই-তৃতীয়াংশ মাটিতে পুঁতে দিয়ে এর চাষ করা হয়। তবে ইদানীং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণাগারে টিস্যু কালচারের মাধ্যমেও আখের ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
রোপনের সময় (Plantation Time) -
পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত বছরে দুবার আখ বসানো হয়।
১. কার্তিক – অগ্রহায়ন মাসে (অক্টোবর – নভেম্বর)
২. ফাল্গুন- চৈত্র মাসে (মার্চ – এপ্রিল)
হেমন্তকালীন আঁখে ফলন বেশি পাওয়া যায়।
বীজ নির্বাচন (Seed Selection) -
আখগাছের গোড়ার দিকে যত দূর পর্যন্ত শিকড় বের হয় সেই অংশ বাদ দিয়ে উপরের অংশের পুরোটাই বীজ আখ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে উপরের দিকে ১/৩ অংশই বীজ আখ হিসাবে সবচেয়ে উপযোগী। ৯ মাস বয়সী আখের ডগার দিকের ১/৩ অংশ এবং ৬-৮ মাস বয়সের আখের মাঝের অংশ বীজ আখ হিসাবে খুবই উপযোগী।বীজ আখ তাজা, সতেজ চোখ যুক্ত এবং রোগ -পোকা মুক্ত হয়। রোগাক্রান্ত জমি থেকে কখনই বীজ আখ সংগ্রহ করা যাবে না। ফুল এসে যাওয়া আখ এবং মুড়ি আখ কখনই বীজ আখ হিসাবে ব্যবহার করা উচিত হবে না। বীজ আখ জমি থেকে কেটে নেওয়ার ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে হাপরে বা সরাসরি জমিতে বসাতে হবে
বীজের হার -
একর প্রতি ২ টন -২.৫ টন বীজ আখ লাগবে।
বীজের শোধন -
বীজ আখ বসানোর আগে তিনটি চোখবিশিস্ট ৩০-৪৫ সেমি লম্বা আখের টুকরোগুলি ২৪ ঘন্টা ধরে পরিষ্কার জলে ভিজিয়ে রাখলে ভাল কল বেরায়। কার্বেনডাজিম ৫০ % ডবলু. পি ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে বীজ আখ ২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে শোধন করা হয়।
রোপনের পদ্ধতি -
১) তিন চোখ বিশিস্ট আখ বসানোর পদ্ধতি :
ক ) লম্বালম্বিভাবে একটি টুকরোর পর আর একটি টুকরো বসানো। এই পদ্ধতি সবথেকে ভালো।
খ ) প্রথম টুকরোর শেষ গাঁটের সামনে দ্বিতীয় টুকরো বসানো।
গ ) লম্বালম্বিভাবে দুটি টুকরোর মাঝে সামান্য ফাঁক রেখে বসানো।
ঘ ) আগুপিছু হিসেবে দু -সারিতে বসানো।
বীজ আখের টুকরো বসানোর সময় চোখগুলি উপরের দিকে থাকবে। প্রতি মিটার সারিতে ১২-১৫ টি চোখ থাকতে হবে। বীজ আখ জমিতে বসানোর পর ৪ - ৫ সেমি (১.৫- ২ ইঞ্চি ) পুরু ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ঢাকা দিতে হবে।
২) এক পাবযুক্ত বীজ আখ বসানোর পদ্ধতি :
এই পদ্ধতিতে চাষ করলে আখের উৎপাদন বেশি হবে, বীজ আখের পরিমাণ কম লাগবে। তবে এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত কয়েকটি সুপারিশ মেনে চলতে হবে।
ক) উন্নত জাতের সতেজ ও সবল আখ গোড়া ও আগার দিক বাদ দিতে হবে।
খ) বীজ আঁখ এমন ভাবে টুকরো করতে হবে যাতে প্রতি টুকরোয় একটি করে চোখ থাকে। কাটার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে প্রতিটি চোখের ১-১.৫ ইঞ্চি উপরে কাটা হয়।
গ) বীজ আখ সুপারিশ অনুযায়ী শোধন করে নিতে হবে।
ঘ) আখের বীজতলা (৩ ফুট চওড়া ও সুবিধামত লম্বা) উই বা পিঁপড়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতি লিটার জলে ২.৫ মিলি ক্লোরপাইরিফস ২০% ই. সি গুলে মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
ঙ) শোধিত বীজ আখের টুকরোগুলি চোখ সহ ২.৫ সেমি (১ ইঞ্চি) মাটির উপর রেখে খাড়া ভাবে বীজতলায় বসাতে হবে।
চ) আখ বসানোর পর বীজতলায় অল্প খড় বিছিয়ে মাটির পাতলা স্তর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যাতে খড় উড়ে না যায়। মাঝেমাঝে বীজতলায় হালকা সেচ দিতে হবে।
ছ) ৩-৪ সপ্তাহ পর আখের টুকরোর চোখ থেকে কল বের হবার পর টুকরোগুলিকে ৩ ফুট অন্তর নালায় ২ ফুট দুরে দুরে খাড়া ভাবে মূল জমিতে বসিয়ে দিতে হবে যাতে সমস্ত টুকরো মাটির নীচে থাকে এবং কল উপরে বেরিয়ে থাকে। লাগানোর পর হালকা সেচ দিতে হবে।
জ) কল শুকিয়ে যাওয়া আখের বীজ গুলিকে নতুন কলযুক্ত আখ বীজ দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন - Batabi Lemon Cultivation - রোগ বালাইয়ের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল বাতাবি লেবুর চাষ পদ্ধতি
সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা স্বাভাবিক আখ চাষের মতই হবে।
উই, জলদি মাজরা পোকা, পিঁপড়ের আক্রমন থেকে বীজ রক্ষা করার জন্য ক্লোরপাইরিফস ১.৫ % ডি পি ১০ কেজি / একর নালাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গাছের সংখ্যা প্রতি একর-
৫ মিটার লম্বা, ৩ মিটার চওড়া বীজতলায় ১২০০০ এর মত বীজ আঁখের টুকরো লাগানো যাবে যা এক একর মূল জমিতে লাগানোর পক্ষে যথেষ্ট।
আরও পড়ুন - Watermelon Farming - জানুন আধুনিক পদ্ধতিতে তরমুজ চাষের কৌশল
Share your comments