কৃষিকাজে জলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে স্বাদু জলের ভান্ডার সীমিত, তাই বর্তমানে নানা দেশের সাথে আমাদের দেশেও জলসংকটের কালো ছায়া নেমে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশই নিচের দিকে নেমে চলেছে। তাই ভবিষ্যতের জীবনযাপন ও কৃষিকাজ টিকিয়ে রাখতে জলসম্পদের সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজন। কৃষিকাজে সঠিক বৈজ্ঞানিক পরিকাঠামোতে জলসেচের মাধ্যমে উৎপাদনের উৎকৃষ্টতা ও পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে জলের অপচয় বন্ধ করা সম্ভব।
জলসেচের মূল লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট সময় ও পরিমানের জল নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী প্রয়োগ করা। যেহেতু ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে শস্যের জলের প্রয়োজনও পরিবর্তিত হয়, তাই জলসেচের সময়সূচি সেইভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। অপ্রয়োজনীয় ভাবে সারা বছরই চাষবাসের জন্য একটি জমিতে সেচ প্রয়োগ করা বা অতিরিক্ত সেচ গাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
স্প্রিংলার এবং ড্রিপ সেচব্যবস্থা - স্প্রিংলার এবং ড্রিপ সেচব্যবস্থাকে সেচসেবিত কৃষির প্রধান জল সঞ্চয় কৌশল বলে বিবেচিত করা যায়। বর্তমানে সারা বিশ্বে ১৫% সেচ সেবিত এলাকার (৪৪ মিলিয়ন হেক্টর) ৩৫ মিলিয়ন হেক্টর স্প্রিংলার ও ৯ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা মাইক্রো সেচ ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত। এইরূপ চাপ পদ্ধতিতে সেচ ব্যবস্থা ইউরোপ ও আমেরিকাতেই বেশী মাত্রায় দেখা যায়। বড় বা ছোট ফার্মের বিভিন্ন শস্য ও মাটির উপর নির্ভর করে বহু ধরণের স্প্রিংলার ও ড্রিপ সেচ ব্যবস্থার প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। স্প্রিংলার এবং ড্রিপ জলসেচ ব্যবস্থাই গুরুত্ত্বপূর্ণ জল সঞ্চয়ের কৌশল।
ঝর্ণা সেচ - সমস্ত প্রকার মাটি, ভূমি বৈচিত্র ও প্রায় সকল শস্যই ঝর্ণা সেচ ব্যবস্থার সুপারিশ ও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই পদ্ধতি অত্যন্ত নমনীয় ও দক্ষতাপূর্ণ। জল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভূপৃষ্ট তল সেচের দ্বারা যে সুবিশাল ভূমিভাগে সেচ দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে এই ঝর্ণা সেচ দেওয়া যেতে পারে এবং অধিক জমি সেচ সেবিত এলাকা হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। ঝর্ণা সেচ ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় জলাধারটি ভূপৃষ্ট প্রবাহ সেচ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত জলাধারের তুলনায় অনেক ছোটো হওয়ায়, অপেক্ষাকৃত কম জল নির্গম হয় এরকম খোঁড়া কুয়ার মাধ্যমে খুবই দক্ষতার সাথে ঝর্ণা সেচ ব্যবস্থায় তা সম্পন্ন করা যায়। লবনাক্ত মাটিতে ঝর্ণা সেচ প্রয়োগের ফলে সহজে জলের ক্ষরণ ঘটে এবং শস্যের অঙ্কুরোদগমে সুবিধা হয়। যে সব মাটি সহজে ভেদ্য এবং কম জলধারণোক্ষম সেখানে ঝর্ণা সেচ ব্যবস্থাই আদর্শ। যে সব মাটির ঘনত্ব বেশী ও ভেদ্যতা কম সেই মাটিতে ঝর্ণা সেচ ব্যবস্থা খুবই আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। তাজা সবজি ওফল চাষের ক্ষেত্রে যেখানে শস্যের বর্ণ ও গুন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ঝর্ণা সেচ পদ্ধতি প্রয়োগে শস্য উৎপাদন বাড়ানো যায়।
ঝর্ণার বহু ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই যন্ত্রটি দিয়ে সেচ, তুষারপাত নিয়ন্ত্রণ, তরল সার, কীটনাশক, আগাছানাশক প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা যায়। বিশাল আধুনিক কৃষি কার্য্যে কোনো প্রকার দক্ষতা হ্রাস না ঘটিয়ে এই ঝর্ণা যন্ত্রটির ব্যবহার খুবই আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। গাছের কোনো এক সংকটময় বৃদ্ধি দশায় খুব অল্প পরিমাণ সেচ, উৎপাদন বৃদ্ধি প্রায় দ্বিগুন করতে পারে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে প্রথাগত সেচের তুলনায় ঝর্ণা সেচের মাধ্যমে ১৬ - ৭০ শতাংশ জলের অপচয় বন্ধ করা যায় এবং বিভিন্ন কৃষি অঞ্চল অনুযায়ী ৩ - ৫৭ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব।
- রুনা নাথ
Share your comments