করোনাভাইরাসের সংক্রমণ (কোভিড -১৯) রোধে দেশব্যাপী ২১ দিনের লকডাউনে কৃষকদের পক্ষে পণ্য সংগ্রহ ও বিক্রয় কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। সরকার, কৃষকদের আশ্বস্ত করে, ২০২০ সালের ২ রা এপ্রিল ঘোষণা করেন যে, তারা জাতীয় কৃষি বাজারের (ই-এনএম) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে।
সরকারের বিবৃতি অনুসারে ই-পোর্টালটির মাধ্যমে কৃষকদের তাদের পণ্য বিক্রির জন্য শারীরিকভাবে মান্ডিতে (পাইকারি বাজারে) যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মটি কি কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট ?
ই- এনএএম কি?
ই-এনএএম প্ল্যাটফর্মটি ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬- এ সমগ্র রাজ্য জুড়ে কৃষি উত্পাদন বাজার কমিটিগুলি (এপিএমসি) সংযোগকারী একটি প্যান-ইন্ডিয়া বৈদ্যুতিন বাণিজ্যিক পোর্টাল হিসাবে চালু করা হয়েছিল।
প্রবর্তনের সময় সরকার বলেন যে, প্ল্যাটফর্মটি একটি অনলাইন ট্রেডিং সিস্টেম হিসাবে কাজ করবে, যেমন অ্যামাজন ডটকম ইনক এবং ফ্লিপকার্ট প্রাইভেট লিমিটেড: ক্রেতা এবং কৃষক উভয়কেই কেনা বেচার জন্য প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করতে হবে। কৃষককে তার ফসল উৎপাদনের বিশদ এবং ফসলের ছবি আপলোড করতে হবে।
ই-ট্রেডিং সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে নিবন্ধিত কৃষক এবং ক্রেতারা, তাদের পণ্যগুলি মান্ডিতে বিক্রি করতে পারেন এবং এরপর সেখানে তাদের বিক্রয় প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন হয়েছে, তা দেখানো হয়।
সহজ প্রক্রিয়া নয় -
এই প্রক্রিয়ায় কৃষকদের তাদের উত্পাদনের একটি নমুনা প্রদর্শন করতে হয়, যা কৃষি মূল্যায়নকারীদের দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়। পোর্টালটি চালু হওয়ার চার বছর পরে সরকার প্রক্রিয়াটির জটিলতাগুলি উপলব্ধি করে এবং জানায় যে, কৃষকরা নিকটবর্তী একটি গুদাম থেকে তাদের পণ্য গ্রেড করতে পারে। উত্তর প্রদেশের এক বিশিষ্ট মান্ডির সেক্রেটারি বলেছেন, কৃষকরা অনলাইনের পরিবর্তে সধারণভাবে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আবার গুজরাটের এক ব্যবসায়ী অনলাইনে গম কেনার চেষ্টা করেছিলেন, সেখানে পরিবহণ সংক্রান্ত অনেক সমস্যা দেখা দেয়।
হরিয়ানার বল্লভগড় এলাকার এক কৃষক প্রহ্লাদ সিং বলেন, “আমাদের আশেপাশের কোনও মান্ডি ই-এনএম-এর সাথে সংযুক্ত নয়। আমরা দু-তিন বছর ধরে শুনছিলাম যে বল্লভগড়ের মান্ডিটি ই-এনএম পোর্টালের সাথে যুক্ত হবে, কিন্তু তা এখনও হয়নি”।
ই-এনএএম –এর বর্তমান স্থিতি -
সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, অনলাইন মান্ডিসের সাথে তারা ৩.৭৫ লক্ষ ট্রাককে যুক্ত করবে। এতে লকডাউনে সারাদেশে ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়াতে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা ই-এনএএম পোর্টালের মাধ্যমে পূরণ করার জন্য আলোকপাত করবে।
ই-এনএএম প্ল্যাটফর্মের সাথে বর্তমানে ৫৮৫ টি মান্ডি সংযুক্ত রয়েছে। ২ রা এপ্রিল কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর বলেছেন, ই-এনএএম শিগগিরই অতিরিক্ত ৪১৫ টি মান্ডির আওতায় সম্প্রসারণ করবে এবং মোট এক হাজারে উন্নীত হবে।
মোট মান্ডির মাত্র ৮.৪২ শতাংশ ই-ন্যাম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। ২০২০ সালের ১১ ই ফেব্রুয়ারি সাংসদে সরকার জানিয়েছেন "৩১.০৩.২০১৮ তারিখ পর্যন্ত দেশে ৬,৯৪৬ টি নিয়ন্ত্রিত পাইকারি মান্ডি (এপিএমসি মার্কেট) ছিল। লক্ষ্য হিসাবে এখন পর্যন্ত ১৬ টি রাজ্য এবং ২ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৮৫ টি মান্ডিকে ই-এনএম প্ল্যাটফর্মের সাথে সংহত করা হয়েছে"। সরকারি তথ্য অনুসারে, ৩০ শে জুন, ২০১৯ থেকে ৯ ই জুলাই, ২০১৯ –এর মধ্যে ১৬.৪ মিলিয়নেরও বেশি কৃষক ই- এনএএম -এ নিবন্ধিত হয়েছেন।
২০২০ সালের ৬ই মার্চ সংসদে তোমর বলেন, ‘প্রায় ১৬.৬ মিলিয়ন কৃষক, ১,২৭,৯৬৩ জন ব্যবসায়ী এবং ৭০,৯০৪ কমিশন এজেন্ট ই-এনএএম প্ল্যাটফর্মে যোগদান করেছেন। বিগত নয় মাসে ২,০০,০০০ কৃষক এই প্ল্যাটফর্মে যোগদান করেছেন’।
কিন্তু ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেশে কৃষি এবং কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২৬৩.১ মিলিয়ন, যার মধ্যে ১১৮.৯ মিলিয়ন কৃষক এবং ১৪৪.৩ মিলিয়ন কৃষি শ্রমিক। তথ্য অনুযায়ী, এই কৃষকদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ ই- এনএএম সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। বাকী ৮৬ শতাংশ কৃষক লকডাউনে তাদের পণ্য বিক্রি কীভাবে বিক্রি করছেন, তা এখন সরকারের জন্য একটি যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments