কৃষিজাগরন ডেস্কঃ বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিগত ভাবে ভিন্ন কিছু করার সময় এসেছে। অনেকেই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে।তবে কৃষি কেন বাদ থাকবে। কৃষকরাও এখন আর পিছিয়ে নেই, ঐতিহ্যবাহী কৃষি থেকে লাভজনক কৃষিতে তারা এখন মনোযোগ দিচ্ছে। আমাদের কৃষিজাগরন ওয়েবসাইটে আমরা নিয়মিত কৃষকদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে কৃষকরা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে আনারস চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই আনারস চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।আনারসের মতো ফল চাষও কৃষকদের জন্য লাভজনক ।আনারস চাষের কথা বলতে গেলে, এটি একটি অত্যন্ত লাভজনক ফল, কারণ এটি পুরো বারো মাস চাষ করা যায় এবং এই ফলের চাহিদা বারো মাস বাজারে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ধান ফসলে বামন রোগের আশঙ্কা, সমাধান খুঁজতে ব্যস্ত বিজ্ঞানীরা
আনারস চাষে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। কেমন? সাধারণত এই চাষ হয় উঁচু এলাকায়। সেচের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। তবে মাঝেমধ্যে জৈব সার ছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ছড়াতে হয়। গাছের বৃদ্ধির জন্য অক্সিন (এক প্রকার হরমোন) এবং আনারসের কমলা রঙের জন্য অল্প পরিমাণে ইফিলিন জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল খেতের পরিচর্যা।
ভারতের কোথায় কোথায় আনারস চাষ হয় ?
আনারস প্রধানত আমাদের দেশে কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং মিজোরামের মতো রাজ্যগুলিতে চাষ করা হয় তবে এখন মধ্যপ্রদেশ, বিহার এবং উত্তর প্রদেশের কৃষকরাও এটি চাষ শুরু করেছেন। কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে এটি ১২ মাস ধরে চাষ করা হয়।
আনারস চাষের জন্য কেমন জলবায়ু প্রয়োজন ?
আনারস চাষে আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। সহজ ভাষায় বললে, যেখানে বেশি বৃষ্টি হয় সেখানে খুব ভালোভাবে চাষ করা যায়। তথ্যের জন্য, আমরা আপনাকে বলি যে এটির তাপ সহ্য করার ক্ষমতা খুব বেশি নেই, তাই আনারস গরম জলবায়ু অঞ্চলে চাষ করা যায় না। আনারস চাষের জন্য তাপমাত্রা ২২ থেকে ৩২ ডিগ্রির মধ্যে থাকতে হবে।
আনারস চাষের জন্য প্রয়োজনিয় মাটি
বেলে দোআঁশ মাটি বা বেলে মাটি আনারস চাষের উপযোগী। এর পাশাপাশি জলাবদ্ধ জমিতে চাষ করা যাবে না। মাটির pH মান 5 থেকে 6 এর মধ্যে হওয়া উচিত।
আনারস চাষের জন্য উপযুক্ত সময়
অক্টোবর থেকে নভেম্বরে চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। তবে সেচের সুবিধা থাকলে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রোপণ করা যেতে পারে।কিন্তু আর্দ্র আবহাওয়া থাকলে বারো মাস চাষ করা যায়।সারি থেকে সারি দূরত্ব ৫০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ হতে হবে।
আনারস চাষের সেরা জাত
যদিও আনারসের অনেক জাত ভারতে জনপ্রিয়, তবে কিছু জাত রয়েছে যা ভাল ফলন দেয়, যেমন জায়ান্ট কুই, কুইন, রেড স্প্যানিশ, মরিশাস প্রধান জাত। এই জাতগুলির গুণাবলী সম্পর্কে কথা বলতে গেলে, আনারসের রানী জাতটি একটি খুব তাড়াতাড়ি পরিপক্ক জাত। জায়ান্ট কুইস জাতটি দেরিতে ফসল হিসাবে চাষ করা হয় এবং লাল স্প্যানিশ জাত রোগের ঝুঁকি কম।
জমি তৈরির প্রক্রিয়া
আনারস ক্ষেত প্রস্তুত করার জন্য প্রথমে গ্রীষ্মের মৌসুমে ক্ষেত ভালোভাবে চাষ করে কয়েকদিন খোলা রাখতে হবে।এরপর রোটাভেটরের সাহায্যে জমিতে গোবর সার মিশিয়ে মাটিকে ঝুর ঝুরে করে নিতে হবে যাতে আনারস ভালোভাবে জন্মাতে পারে।
আনারস চাষের জন্য সেচ ব্যবস্থা
আনারস সেচের জন্য আবহাওয়ার যত্ন নেওয়া জরুরি। আনারসের চারা রোপণ যেমন বর্ষায় করা হয়, তখন তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে সেচের জন্য ড্রিপ সেচ পদ্ধতি অবলম্বন করা সবচেয়ে উপযুক্ত। গাছের অঙ্কুরোদগম হওয়ার পর ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে সেচ দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি
জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় উদ্যানপালন মিশনের উদ্যেগে এমনিতেই যে কোনও চাষি ফুল বা ফলের চাষ করলে সংশ্লিষ্ট চাষিদের খরচের অর্ধেক টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়। নতুন চাষে উৎসাহ দিতেই এই ভাতা। তবে এই টাকা পাওয়ার শর্ত হল, চাষিদের নিজস্ব জমিতে চাষ করতে হবে এবং অবশ্যই খরচের সব নথি সংশ্লিষ্ট দফতরে দেখাতে হবে। দফতরের কর্মীরা সরেজমিনে ঘুরে চাষের প্রমাণ পেলেই চাষিরা হাতেনাতে খরচের অর্ধেক টাকা পেয়ে যাবেন।
Share your comments