বাঙালিদের কাছে সরস্বতী পূজা আর কুল, দুটোই যেন সমার্থক। শীতকাল আসলেই স্থানীয় বাজারগুলিতে কুলের ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়। নারকেলি কুল, টোপা কুলের স্বাদ ছেলে থেকে বুড়ো সকলের কাছেই অত্যন্ত পছন্দের। কুল ফল খাওয়া ছাড়াও কুল দিয়ে আচার, চাটনি, টক প্রভৃতি পদ বাড়ির মা-বোনেরা বানিয়ে থাকেন, যা ভীষণই লোভজনক। এছাড়াও শীতের বিভিন্ন পূজাপার্বনেও কুল অপরিহার্য এক প্রসাদ। এই সুস্বাদু ফল সব ধরণের মাটিতেই জন্মায়। পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়াও কুল চাষের জন্য আদর্শ। চাষিরা বর্তমানে এই কুল চাষে ভালোই লাভবান হচ্ছেন। স্বল্প বিনিয়োগে কুল চাষ করে প্রচুর লাভ করা যায় বলে, চাষিরাও এই ফল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক কুল চাষের সহজতম পদ্ধতি।
মাটি (Soil)
কুল চাষের জন্য যে কোনও মাটিই উপযুক্ত। কুলগাছ লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা দু'ই পরিবেশই সহ্য করতে পারে। সামান্য ক্ষারযুক্ত বেলে দো-আঁশ মাটি কুল চাষের জন্য আদর্শ।
জমি তৈরি (Land Prparation)
উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি বাগান আকারে কুল চাষের জন্য আদর্শ। এছাড়াও অনুর্বর মাটিতেও গর্ত করে কুল চাষ করা হয়। পড়ে থাকা জমি অথবা জলাধারের পার্শ্বস্থ জমিতেও কুল চাষ করা যায়।
রোপণ (Planting)
কুল বাগান আকারে চাষ করতে গেলে বর্গাকার রোপণ প্রণালী অনুসরণ করা দরকার। কম করে ৬-৭ মিটার দূরত্ব রেখে চারা রোপন করা উচিত। চারা রোপণের মাসখানেক আগে ১*১*১ মি আকারের গর্ত তৈরি করে নিতে হবে।
সময় (Time)
মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-চৈত্র এবং মধ্য-শ্রাবণ থেকে মধ্য-ভাদ্র সময়সীমাতে কুলের চারা রোপণ করা উচিত।
সার (Fertilizer)
কুলের চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে সার হিসাবে ইউরিয়া ২০০-২৫০ গ্রাম, টিএসপি ২০০-২৫০ গ্রাম, এমপি ২৪৫-২৫৫ গ্রাম, পচা গোবর ২০-২৫ কেজি হারে প্রয়োগ করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন: Easiest way of Pea Farming: মটরশুঁটি চাষ করে চাষিভাইদের অধিক উপার্জন
কুল গাছে ফুল ও ফল ধরার মাসে একবার সেচ দিলে কুলের ভালো ফলন পাওয়া যায়। গাছ ছোট থাকা অবস্থায় গাছটির কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য গাছের গোড়া থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার উঁচু পর্যন্ত ডালপালা রাখতে দেওয়া যাবে না। এই মাপের উপরে শক্ত-সমর্থ কিছু শাখা-প্রশাখা গাছের অবস্থা অনুযায়ী রাখ যেতে পারে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ডালপালা সুন্দর ভাবে বাড়তে পারে।
সার প্রয়োগ (Uses of Fertilizer)
বছরে কম করে ৩ বার সার প্রয়োগ করতে হবে। ফল ধরা, ফল সংগ্রহ ও বর্ষার পর গাছে সার দিলে ভালো। সার দেওয়া হয়ে গেলে হালকা করে সেচ দেওয়া উচিত, যাতে মাটি ভিজতে পারে।
ফল সংগ্রহ (Harvest)
কুলের বিভিন্ন জাত অনুসারে মধ্য-পৌষ থেকে মধ্য-চৈত্র মাসের ভেতর ফল গাছে পেকে ওঠে। ফলের রং হালকা সবুজ বা হলদে বর্ণ ধারণ করলেই তা সংগ্রহ করে নেওয়া উচিত। সঠিক যত্ন নিলে প্রতি গাছে ৫০-২০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।
রোগ দমন (Disease Control)
পাউডারি মিলডিউ রোগ কুল ফলের যম হিসাবে বিবেচিত হয়। এই রোগ হলে কুলের ফলন কমে যায়। মূলত গাছের পাতা, ফুল ও কচি ফল এই রোগে রোগাক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ফুল ও ফল গাছ থেকে ঝরে যায়। উষ্ণ ও ভেজা আবহাওয়ায় বিশেষ করে মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় এই রোগ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিকার (Remedy)
গাছে ফুল আসার পর থিওভিট নামক ছত্রাকনাশক প্রতিলিটার জলে ২ গ্রাম অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি লিটার জলে ০.৫ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করা উচিত। পরবর্তী কালে ১৫ দিন পরপর দু'বার স্প্রে করতে হবে গাছে।
আরও পড়ুন: Urban Farming: আপনি কি জানেন আরবান ফার্মিং কি? পড়ুন নিবন্ধটি
Share your comments