পাট (Jute) ও পাট জাতীয় আঁশ ফসল সারা বিশ্বে তুলার পর দ্বিতীয় আঁশ ফসল হিসেবে পরিচিত। পাট অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশের জলবায়ু পাট চাষের (Jute Farming) জন্য এতই উপযোগী যে, পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম মানের পাট বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়।
মৌসুম:
ফাল্গুনের শেষ থেকে আষাঢ়ের শেষ পর্যন্ত।
জমি তৈরি (Land preparation):
উঁচু ও মধ্যম উঁচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি বেশি সময় দাঁড়ায় না এবং পলি দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি পাট চাষের জন্য বেশি উপযোগী। বৃষ্টিপাতের পরপরই আড়াআড়ি ৫-৭ টি চাষ দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। ঢেলা গুড়ো করতে হবে এবং জমি আগাছামুক্ত করতে হবে।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
ভালোভাবে প্রস্তুতকৃত জমিতে বপনের ২-৩ সপ্তাহ আগে হেক্টরপ্রতি ৩.৫ টন গোবর সার মিশিয়ে দিতে হবে। পাটের ভালো ফলনের জন্য বপনের দিন শতাংশ প্রতি ইউরিয়া-৩০০ গ্রাম, টিএসপি-৬০০ গ্রাম, এমওপি-১০০ গ্রাম সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা গজানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর শতাংশ প্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে এবং এর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর দ্বিতীয়বারের মতো আবার শতাংশ প্রতি ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে অন্যান্য সার দিতে হবে।
বীজ বপন পদ্ধতি ও বীজের হার:
সময়মতো পাটবীজ বপন করা উচিত। সাধারণত, ছিটিয়েই পাটবীজ বপন করা হয়। তবে সারিতে বপন করলে পাটের ফলন বেশি হয়। ছিটিয়ে বুনলে ৭.৫ কেজি/হেক্টর ( প্রতি শতাংশে ৩০ গ্রাম ) এবং সারিতে বুনলে-৬.২৫ কেজি/হেক্টর ( শতাংশ প্রতি ২৫ গ্রাম )। সারিতে বুনলে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ সেমি বা ১ ফুট এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৭ সেমি বা ৩ ইঞ্চি হতে হবে।
আগাছা দমন (Weed Management) :
পাটের বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পরে অথবা চারা গাছে ২-৩ পাতা হওয়ার পরে আগাছানাশক স্প্রে করা ভালো। বীজ বপনের ১৫-২১ দিনের মধ্যে ১ম নিড়ানী এবং ৩৫-৪২ দিনের মধ্যে ২য় নিড়ানী দিয়ে আগাছা দমন ও চারা পাতলা করতে হবে। ৩য় নিড়ানী প্রয়োজনমতো দিতে হবে।
পাটের পোকামাকড় ও রোগ দমন ব্যবস্থাপনা (Disease management system):
পাটের বিছাপোকা:
কচি ও বয়স্ক সব পাতা খেয়ে ফেলে।আক্রমণের প্রথম অবস্থায় কীড়া সহ পাতাগুলো সংগ্রহ করে ধ্বংশ করে ফেলা।ডায়াজিনন ৬০% তরল/নুভক্রিন ৪০% তরল/ইকালাক্স ২৫% তরল হেক্টরপ্রতি ৩০ কেজি জলের সাথে ৪৫ গ্রাম বা চা চামচের ৯ চামচ ওষুধ মিশিয়ে ক্ষেতে স্প্রে করলে বিছাপোকা দমন হবে।
পাটের ঘোড়া পোকা:
ডগার দিকের কচি পাতা খেয়ে ফেলে।কেরোসিনে ভেজানো দড়ি গাছের ওপর দিয়ে টেনে দেওয়া।
ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার জায়গা করে দেয়া যাতে করে পাখিরা পোকা খেয়ে এদের সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে। ডায়াজিনন ৬০% তরল/ ইকালাক্স ২৫% তরল অনুমোদিত মাত্রায় জমিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন - Organic Farming in Bangladesh: বাংলাদেশে বাড়ছে জৈব কৃষিকাজের গুরুত্ব
পাট কাটা:
সাধারণত ভালো ফলন ও উন্নত মানের আঁশের জন্য ক্ষেতের শতকরা প্রায় পঞ্চাশ ভাগ গাছে ফুলের কুঁড়ি দেখা দিলে (সাধারণত ১১০-১২০ দিনে প্রায় ৫০% গাছে ফুল আসে) পাট কাটা উচিত। উল্লেখিত সময়ের পূর্বে পাট কাটলে আঁশের মান ভালো থাকে, কিন্তু ফলন কম হয়। পাট কাটার পর ছোট-চিকন ও মোটা পাটগুলো আলাদা আলাদা আঁটি বেঁধে পাতা ঝরানোর জন্যে পাতার অংশ খড়-কুটা দিয়ে ৭২ ঘন্টা (৩ দিন) ঢেকে রাখলে পাতা ঝরে যায়। অতঃপর আঁটিগুলোর গোড়া ৭০-৯০ ঘন্টা (৩-৪ দিন) জলে ডুবিয়ে রাখার পর জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Shahi Papaya Farming: শাহী পেঁপের চাষ পদ্ধতি ও উৎপাদন তথ্য
Share your comments