পটল ভারতের পূর্বাঞ্চলে বিশেষ করে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং বাংলাদেশে ভাল জন্মায়। এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন এ ও সি আছে। এছাড়া এতে স্বল্প পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, তামা, পটাসিয়াম, গন্ধক ও ক্লোরিন আছে। এটি এমন একটি সবজী যা খেতে ততোধিক সুস্বাদু না হলেও উপকারিতা প্রচুর।
আসুন জেনে নেই পটলের বিভিন্ন রোগ ও তার নিরাময়ের উপায় (Disease management of Pointed Gourd) -
১.রোগের নামঃ পটলের শিকড়ের গিঁট রোগ
রোগের কারণঃ মেলইডোজাইন ইনকগণিট নামক কৃমি দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
লক্ষণঃ শিকড়ে ছোট ছোট গিঁট দেখা যায়। গিঁটগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়।
-
গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে খর্বাকৃতির দেখায়।
-
রোগাক্রান্ত শিকড়ে সহজেই পচন ধরে।
-
মাটিবাহিত অন্যান্য রোগের প্রকোপ বাড়ে।
-
পরিশেষে গাছটি মরেও যেতে পারে।
দমন:
-
রোগ প্রতিরোধী পটলের জাত ব্যবহার করা।
-
কৃমি মুক্ত চারা ব্যবহার করা।
-
গভীরবাবে মাটি চাষ করে গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে নিরে কৃমি মারা যায়।
-
চারা রোপণের ২১ দিন পরে মাটিতে মুরগির বিষ্ঠা ৫ টন/হেক্টর হারে প্রয়োগ করা এবং একই সময়ে ফুরাডান ৫-জি ২৫ কেজি/ হেক্টর হারে প্রয়োগ করা।
২.রোগের নামঃ পটলের গোড়া ও ফল পচা রোগ -
রোগের কারণঃ Phytophthora parasitica নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
লক্ষণঃ কান্ড ও পটলের গায়ে সাদা সাদা মাইসলিয়াম দেখা যায়।
গাছের গোড়া, শিকড় ও পটলে জল ভেজা নরম পচা রোগ দেখা যায়। পরবর্তিতে পটল গাছ সহ পটল নষ্ট হয়ে যায়।
গাছ বাদামী বর্ণ ধারণ করে ডগা ও ফল পচে যায়।
দমন :
-
আক্রান্ত গাছ পটলগুলি সংগ্রহ করে নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।
-
রোগ সহনশীল জাত চাষ করা। (পিজি-০২০, পিজি- ০২৫)।
-
প্রতি বছর পটল চাষ না করে শস্য পর্যায় অনুসরণ করা।
-
সুষম সার ব্যবহার করা।
-
অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।
-
পটলের শাখা কলম (কাটিং) শোধন করা (২ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন/নোইন প্রতি লিটার জল)
-
রোগের আক্রমণ দেখা দিলে প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম কমপ্যানিয়ন, ১ গ্রাম কার্বোন্ডজিম ও ২ গ্রাম ম্যানকোজেব + মেটালোক্সিল একত্রে মিশিয়ে ১০-১২ দিন অন্তর স্প্রে করা।
-
চারা রোপণের ৮-১০ দিন পূর্বে মাদার মাটিতে শতাংশ প্রতি ৮-১০ কেজি পরিমান ট্রাইকো-কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে তা সেচ দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া।
-
মাটিতে ট্রাইকো-কম্পোস্ট প্রয়োগ করে ২০% অনুমোদিত মাত্রার রাসায়নিক সার কম প্রয়োগ করলে ফলনের কোন পরিবর্তন হয় না।
-
ফসলের বাড়ন্ত পর্যায়ে রোগ প্রতিরোধক হিসাবে ট্রাইকো-লিচেট ব্যবহার করা হয়। প্রতি লিটার জলে ২০ মিলি হারে লিচেট মিশিয়ে তা ১০-১৫ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করা।
৩.রোগের নামঃ পটলের এ্যানথ্রাকনোজ রোগ -
রোগের কারণ: (Colletotrichum sp.) ছত্রাকজনিত রোগ।
লক্ষণঃ
-
এ রোগটি কান্ড ও পাতায় আক্রমণ করে এবং ক্ষত সৃষ্টি করে।
-
ক্ষেতের রঙ কালো বা বাদামী বর্ণের হয়।
-
পরিবর্তীতে কান্ড ও পাতা শুকিয়ে যায়।
দমন :
-
রোগাক্রান্ত গাছ নষ্ট বা পুড়ে ফেলা।
-
রোগমুক্ত গাছ থেকে শাখা-কলম (কাটিং) সংগ্রহ করা।
-
শাখা কলম কার্বেনডাজিম (ব্যাভিষ্টিন) ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে শোধন করা।
-
রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার জলে টপসিন এম- ২ গ্রাম ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি বা ২ গ্রাম ডাইথেন-এম- ৪৫, ব্যাভিষ্টিন বা নোইন- ১ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করা।
আরও পড়ুন - Tomato Disease Control – জেনে নিন টমেটোর বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি সম্পর্কে
৪.রোগের নামঃ পটলের ডাউনি মিলডিউ রোগ
লক্ষণঃ বয়স্ক পাতায় এ রোগ প্রথম দেখা যায়।
আক্রান্ত পাতার গায়ে সাদা বা হলদে থেকে বাদামী রঙের তালির মত দাগ দেখা যায়।
ধীরে ধীরে অন্যান্য পাতায় ছড়িয়ে পড়ে ।
দমন :
সম্ভব হলে গাছের আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা ।ক্ষেত পরিস্কার রাখুন এবং পানি নিষ্কাশন ভাল ব্যবস্থা রাখুন।(ম্যানকোজেব+মেটালোক্সিল) গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: পুটামিল বা রিডোমিল গোল্ড অথবা (ম্যানকোজেব+ ফেনামিডন) গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: সিকিউর ২ গ্রাম/ লিটার হারে অথবা সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: কুমুলাস ২ কেজি/ হেক্টর হারে বা গেইভেট বা মনোভিট বা ম্যাকভিট ২ মিলি. / লি হারে জলে মিশিয়ে স্প্রে করা ।আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।আগাম বীজ বপন করুন।সুষম সার ব্যবহার করুন।রোগ প্রতিরোধী উন্নত জাতের চাষ করুন।
আরও পড়ুন - Climate Smart Agriculture - এই মরসুমে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ ও তার পরিচর্যা পদ্ধতি
Share your comments