লাল রঙের দেখতে এই ফুল পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সবখানে দেখতে পাওয়া যায়। অত্যন্ত সুন্দর দেখতে এই ফুল বাগান, ঘরের শোভা বাড়াতেও ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সম্বন্ধে সবার জানা। কৃষ্ণচূড়ার ফুল ও পাতার বেশ কিছু ঔষধি গুন আছে। মূলত গরমকালে এই ফুলটি পাওয়া যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার গাছ দেখতে পাওয়া যায়। কৃষ্ণচূড়া গাছটির উৎপত্তি আদি নিবাস আফ্রিকার মাদাগাস্কার। এটি ভারত, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, মায়ানমার,চীন,আফ্রিকা,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল,ইংল্যান্ড সহ ইউরোপের বিভিন্ন অংশে দেখতে পাওয়া যায়। সুগন্ধহীন এই ফুল গাছ বৃক্ষজাতীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ। আসুন জেনে নেওয়া যাক টবে কেমন করে কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছের চাষ করতে হয়। মনে রাখতে হবে এই বিশেষ ফুল গাছ টবে চাষ করার জন্য ২৫ সেমি উচ্চতার টব হল আদর্শ।
বংশবিস্তার (Breed)
কৃষ্ণচূড়া ফুল মূলত দুই প্রকার পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে।
১) বীজ থেকে বংশবিস্তার
২) গুটি কলম পদ্ধতিতে বংশবিস্তার
জলবায়ু (Climate)
উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার কৃষ্ণচূড়া চাষের জন্য আদর্শ। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। কৃষ্ণচূড়া গাছের চাষের মোটামুটি পরিমানে আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি যাতে বেশী ভিজে কাদা কাদা না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। আর কোনো কারণে মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকলে সেই কয়দিন জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে জল দেওয়া উচিৎ।
সার মাটি (Fertilizer Soil)
যে কোনও মাটিতেই কৃষ্ণচূড়া গাছ জন্মাতে পারে। দোঁয়াশ মাটি কৃষ্ণচূড়া চাষের পক্ষে আদর্শ। আপনি যদি টবে কৃষ্ণচূড়া চাষ করতে চান তাহলে প্রথমেই যেটি করবেন, পরিমান মতো দো-আঁশ বা বেলে মাটি, এর সাথে একমুঠো হাঁড়ের গুঁড়ো, দু’মুঠো ছাই মিশিয়ে নিন। এতে টবের মাটি ভাল থাকবে। এর সঙ্গে কিছুটা পরিমান পাতা পচা সার, গোবর, খৈল ও কিছুটা টিএসপি সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করা উচিত।
আরও পড়ুন: Cardamom Farming - কম খরচে এলাচ চাষ করে আয় করুন অধিক অর্থ
সার (Fertilizer)
এই গাছের জন্য আদর্শ হল গোবর সার, চাপান সার ও তরল সার। নিমের গুড়ো খোল, কাঠের ভষ্ম, গুঁড়ো হাড়, ও গোবড় সার মিশিয়ে তৈরী করা যায় চাপান সার। বর্ষাকাল থেকে হেমন্তকাল পর্যন্ত তরল সার দেওয়া উচিত
পরিচর্যা (Caring)
বসন্ত কালে বাংলায় এই ফুল ফোটে এবং বর্ষার শেষ পর্যন্ত এই ফুল গাছে থাকে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। সার হিসেবে চাপান সার বা তরল সার দিতে হবে। কৃষ্ণচূড়া গাছে জল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গোড়ায় জল না জমে। তবে নিয়মিত প্রচুর পরিমানে জল দিতে হবে। মাসে দু'বার টবের মাটি খুঁচিয়ে দেওয়া উচিত।
ডাল ছাঁটাই
কৃষ্ণচূড়া গাছ বড় হলে ডালের বেশ কিছুটা ছেটে দিতে হবে। অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে গাছের সিজনের ফুল দেওয়া শেষ হয়েছে কিনা। এরপর মঞ্জরীও ছেঁটে দেওয়া যেতে পারে। এরপর কয়েকদিন পর কান্ডের পাশ থেকে শাখা বের হবে, তাদের মধ্যে কয়েকটি শাখা রেখে বাকীগুলি ভেঙে দিতে হবে। এরপর গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে। গাছের পার্শ্ব কুঁড়িগুলি ছাটলে, অনেক ফুল হবে। বেশী ফুল পেতে হলে গাছের আগা ভেঙে দেওয়া উচিত। এতে গাছ ঝাঁকড়া হবে। যেহেতু কৃষ্ণচূড়া গাছের ডাল পালা,শাখা প্রশাখা অনেকটাই বিস্তৃত হয়, তাই বেশী পরিমানে শাখা,ডাল পালা ছাঁটাই করা উচিৎ। বছরে একবার ছাঁটাই করে চাউবান্টিয়া পেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া গোবরও দেওয়া যেতে পারে।
কৃষ্ণচূড়া ফুলের ভেষজ গুণ ( Medicinal Benefits)
কৃষ্ণচূড়া গাছের বিভিন্ন ভেষজ গুণ রয়েছে। আয়ুর্বেদে কৃষ্ণচূড়ার ব্যবহারের বহু কথা শোনা যায়। কৃষ্ণচূড়ার পাতার রস মধু দিয়ে খেলে জ্বর দূর হয়। কৃষ্ণচূড়ার ফুল রস করে মাথায় লাগালে চুল ভাল থাকে। এছাড়াও কৃষ্ণচূড়ার পাতা জলে ফুটিয়ে খেলে বাত ঠিক হয়।
আরও পড়ুন: Sunflower Farming Process: জেনে নিন তৈল উৎপাদনকারী সূর্যমুখী চাষের পদ্ধতি
Share your comments