চাষে খরচ কমানো এবং অধিক ফলন একটি বড় উদ্দেশ্য। স্বল্প খরচে অধিক আয়ের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে সুধা পদ্ধতিতে আমন ধান উৎপাদনে জোর দিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা কৃষি দপ্তর। প্রথাগত পদ্ধতির তুলনায় নতুন এই পদ্ধতির চাষে খরচ অনেক কম হয়। বীজতলায় বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সুস্থ সবল চারা তৈরি করে উৎপাদন সহজেই বৃদ্ধি করা যাবে। তবে বীজতলায় নিয়মিত আগাছা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এই পদ্ধতিতে বর্ষাকালীন বৃষ্টির উপর নির্ভর করতে লাগে না। এবছরই জলপাইগুড়ির জেলার বিভিন্ন ফারমার্স ক্লাব ও এফপিও’র মাধ্যমে সুধা পদ্ধতিতে আমন ধান চাষ করা হচ্ছে।
চাষে একর প্রতি বীজ লাগে সাড়ে চার কেজি। বিঘা প্রতি ২২ মন ধান উৎপাদন হবে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে সুধা পদ্ধতিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বীজতলা ও চারা তৈরি করতে হবে।
বীজতলা (Seedbed) -
এক একর জমির চারা রোপণ করার জন্য বীজতলা করতে পাঁচ ডেসিমেল জমি লাগবে। এই পরিমাণ বীজতলা জন্য ২০০ কেজি জৈব সার, ৫০০ গ্রাম নাইট্রোজেন, ২ কেজি ফসফেটের সঙ্গে ২০০ গ্রাম বরিক পাউডার এবং ৫০০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও ১৫ দিন অন্তর বীজতলায় প্রতিবারে ৪০০-৫০০ গ্রাম নাইট্রোজেন প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের ১০-২০ দিনের মাথায় আগাছা দমন করতে হবে। বীজতলায় ছিপ ছিপে জল রাখতে হবে। চারা তোলার ঠিক সাত দিন আগে বীজতলায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপন (Plantation) -
বীজতলা থেকে চারা তোলার ঠিক ছ’ঘণ্টার মধ্যেই মূল জমিতে চারা রোপণ করতে হবে। চারা নির্দিষ্ট দূরত্বে গুছিতে একটি করে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি আমন ধানের ক্ষেত্রে ৫০-৬০ দিনের চারা ২০ সেন্টিমিটার বাই ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে বসাতে হবে।
মধ্য ও স্বল্পমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ৪০-৪৫ দিন বয়সের চারা সারি থেকে সারি ও গাছ থেকে গাছ ২০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।
সার (Fertilizer) -
মূল জমিতে দীর্ঘমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ হবে ৮০ কেজি নাইট্রোজেন, ৩২ কেজি ফসফেট এবং ৪০ কেজি পটাশ। অর্থাৎ প্রথম চাপানে একের দুই ভাগ ও দ্বিতীয় চাপানে একের চার ভাগ নাইট্রোজেন যথাক্রমে একের দুই ভাগ পটাশ দিতে হবে।
মধ্য ও স্বল্পমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ৬০ কেজি নাইট্রোজেন, ২৪ কেজি ফসফেট, ৩০ কেজি পটাশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে একবার চাপান দিতে হবে একের দুই ভাগ নাইট্রোজেন ও পটাশ।
অনুখাদ্য হিসাবে ১ গ্রাম চিলেটেড জিঙ্ক, ২০ শতাংশ বোরন ২ গ্রাম, ইউরিয়া ১০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে প্রথমে সর্বাধিক পাশকাটি আসার সময় ও দ্বিতীয়বার থোর আসার আগে স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - Onion Farming - কন্দ পেঁয়াজের এই প্রজাতির চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ
বন্ধু পোকা -
ধান ক্ষেতে নানা উপকারী বন্ধু পোকা থাকে যারা অনিষ্টকারী পোকামাকড়কে খেয়ে ফেলে। বহুযুগ ধরে এরাই আগে ফসলকে শত্রুপোকার হাত থেকে রক্ষা করত। এরা গাছের উপরের দিকে থাকে । শত্রুপোকারা গাছের নিচের দিকে / ভিতরে থাকে। জমিতে যথেষ্ট বন্ধুপোকা থাকলে শত্রুপোকা বাড়তে পারে না।
ধান জমির পরভোজী বন্ধুপোকারা হল – মাকড়সা, টিপপোকা, ফড়িং, অ্যাসাসিন বাগ, পিপড়ে, ঘাশ ফড়িং এছাড়া ধান জমির জলের বন্ধুপোকা যেমন – হাসপোকা, জল মাকড়সা, মেসোভিলিয়া, মাইক্রোভিলিয়া ইত্যাদি।
ধানজমির অন্যান্য পরজীবি পোকা যেমন – বিভিন্ন ধরনের বোলতা ও মাছি।
এই সব বন্ধুপোকারা ধান জমিতে জলে ও গাছে সর্বদা ঘুরে বেড়ায় । এদের চিনতে না পেরে আমরা অনেক সময় কীটনাশক প্রয়োগ করে ধ্বংস করি। এদের সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। এদের চিনুন ও অপর চাষিবন্ধুদের চেনান।
শত্রুপোকা ও বন্ধুপোকার অনুপাত ২:১ থাকলে কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু নিয়মিত জমি পরিদর্শনের প্রয়োজন হয়। যদি শত্রুপোকার সংখ্যা বেড়ে যায় তবে দরকারমতো সঠিক মাত্রায়, সঠিক জায়গায়, সঠিক রাসায়নিক বিষ ব্যবহার করুন। সমগ্র জমিতে বিষ না ছড়িয়ে যেখানে রোগ পোকা লেগেছে সেই জায়গায় প্রয়োগ করুন।
আরও পড়ুন - জানুন উন্নত পদ্ধতিতে মাসকলাই এর চাষ কৌশল
Share your comments