জল গাছের বন্ধু, কিন্তু সেটা অতিরিক্ত পরিমাণে নয় | তাই, বর্ষায় আমাদের সাধের ছাদের বাগানের যত্ন নেওয়া খুবই প্ৰয়োজন | তাই এমন ভাবে বাগান সাজাতে হবে, যাতে শুধু বৃষ্টির জলটুকুই গাছ পায়। তার ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে বাগানকে। এই নিবন্ধে কি কি করণীয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
কি কি করতে হবে?
১) প্রুনিং:
বর্ষায় অনেক গাছই খুব ঝাঁকড়া হয়ে যায়। ফলে একটানা অনেক দিন বৃষ্টির পরে মাঝেমাঝে রোদ উঠলেও গাছের সব জায়গায় সেই রোদ পৌঁছয় না। বিশেষ করে শিকড়ে রোদ, অক্সিজেন না পৌঁছলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। তাই গাছের ডাল ছেঁটে দিতে হবে। ফুলের গাছে যে ডালে ফুল শুকিয়ে যাবে, তা কেটে দিতে পারেন। তা হলে সেখান থেকে আবার নতুন কুঁড়ি জন্মাবে।
২) চারা ছায়ায় রাখতে হবে:
প্রথমেই চারাগুলোকে কোনও শেডের তলায় নিয়ে গিয়ে রাখতে হবে। অথবা ছাদের একটা পাশে নিয়ে গিয়ে তার উপরে টিন বা অ্যাসবেসটস দিয়েও ঢেকে দিতে পারেন। শেডের সুবিধে না থাকলে চারাগুলিকে বারান্দার কোণে বা চিলেকোঠার ঘরের জানালার কাছেও রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন - Potato Farming: অর্থকরী ফসল আলুর চাষাবাদ পদ্ধতি
৩) কেঁচোর আনাগোনা:
বর্ষায় এদের আনাগোনা বাড়বেই। তবে এরা বন্ধু কীট। মাটি খুঁড়ে যেমন মাটি উর্বর করে তেমনই নাইট্রোজেনের জোগান দিয়েও গাছকে পুষ্টি দেয়। তাই কোনও গাছের গোড়ায় যদি দেখেন, একাধিক কেঁচো জমা হয়েছে, তাদের তুলে অন্যান্য গাছের টবে সমান ভাবে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এতে সব গাছেরই উপকার হবে।
৪) মাটির ক্ষয় রোধ:
অনেক সময়েই দেখা যায়, বর্ষার জলে গাছের মাটির উপরের স্তর ধুয়ে যায়। এর সঙ্গে কিন্তু মাটির সার, উর্বর অংশটুকুও ধুয়ে সাফ হয়ে যায়। ফলে গাছ জল পেলেও পুষ্টি পায় না। তাই গাছের কাণ্ড থেকে প্লাস্টিক বেঁধে টবের মাটি ঢেকে রাখতে পারেন। তবে অস্বচ্ছ আবরণের পরিবর্তে পারফোরেটেড শিট দিয়ে টবের উপরটা ঢেকে দিতে পারেন। এতে বৃষ্টির জল চুঁয়ে চুঁয়ে মাটিকে পুষ্ট করবে। এঁটেল মাটি বেশি ব্যবহার করতে পারেন। এরা খুব তাড়াতাড়ি জল টেনে নেয়।
৫) জলনিকাশি:
খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় যেন জল না জমে। তার জন্য টবের নীচে অন্তত দুটো গর্ত করে রাখবেন। মাটিতে একটা গর্তের মুখ বন্ধ হয়ে গেলেও অন্য গর্ত জমা জল বার করতে সাহায্য করবে। ২-৩ দিন বাদে দেখে নিতে হবে গর্তের মুখ বুজে গিয়েছে কি না। বাগানের জমিতে যাতে জল না জমে তার জন্য নালা কেটে বাগানের মধ্যে একটা জায়গায় গর্ত করে বড় টব বসিয়ে রাখতে পারেন। সারা বাগানের জল নালা দিয়ে সেই পাত্রে ভরে থাকবে। পরে অন্য কাজে ব্যবহার করে নিতে পারেন সেই জল। রেন ওয়াটার হারভেস্টও করতে পারেন। এতে বৃষ্টির জল বাগানচর্চায় কাজে লাগাতে পারবেন।
৬) কীটনাশক:
বর্ষার আর্দ্র পরিবেশে পোকামাকড়ের দৌরাত্ম্য বাড়ে। এরা নতুন পাতার রস খেতেও গাছে জড়ো হয়। ছোট পিঁপড়ে থেকে শুরু করে এক ধরনের সাদা পোকাও লেগে যেতে পারে গাছে। তাই বর্ষার শুরু থেকেই কীটনাশকের ব্যবহার শুরু করতে হবে। প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে নিম তেল, গোলমরিচ গুঁড়ো, শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো দিতে পারেন গাছের গোড়ায় বা পোকা লাগা অংশে। এতেও কাজ না হলে রাসায়নিক কীটনাশকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৭) সার:
যেহেতু বর্ষার জলে উপরের স্তরের মাটি অনেকটাই ধুয়ে যায়, তার সঙ্গে খানিক পুষ্টিও চলে যায়। তাই গাছে সার দিতে হবে নিয়মিত, যাতে গাছের পুষ্টির জোগানে ঘাটতি না হয়। তবে এ সময়ে গলা-পচা সারের তুলনায় শুকনো সারের উপরে ভরসা রাখাই ভাল। চায়ের পাতা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে, হাড়ের গুঁড়ো, ডিমের খোলা শুকিয়ে গুঁড়ো করে দিতে পারেন।
আরও পড়ুন -Native Cow Rearing: স্বল্প পুঁজিতে দেশি গরু পালনে ব্যাপক লাভ
Share your comments