আধুনিক কৃষিতে চাষবাস মানেই বাজারের রাসায়নিক সার, কৃষিবিষ ও উচ্চফলন ও হাইব্রিড বীজ দিয়ে চাষ করা। সবুজ বিপ্লবের নামে বিগত ৪০ বছর ধরে এই চাষই চলছে। কৃষক থেকে সাধারণ মানুষ সবাই ধরে নিয়েছেন এর কোন বিকল্প নেই। সেই ভাবেই ক্রমাগত প্রচার করে বোঝানো হয়েছে। এটাই নাকি বৈজ্ঞানিক কৃষি।
প্রথম দিকে কৃষকদের দ্বিধাদ্বন্দ থাকলেও ধীরে ধীরে ম্যাজিক বীজের ফলন দেখে এই চাষেই ঝুঁকে পড়েছিলেন। জমিতে কয়েক বছর চাষ করার পর কৃষি বাস্তুতন্ত্র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর বাইরের উপকরনের আর বিশেষ প্রয়োজন হয় না। তবে বহু বিতর্কিত জীন পরিবর্তিত বিটি শস্য আলাদা বিষয়।
ফসলে শুধুমাত্র লেদা পোকার আক্রমন প্রথম দিকে কম হলেও গৌন পোকার আক্রমনের জন্য আরো বেশী বিষ স্প্রে করতে হয়, লেদা পোকারও প্রতিরোধ শক্তি বেড়ে যায়। তাছাড়া পরিবেশে এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া প্রমানিত এবং জৈব কৃষিতে গ্রহনযোগ্য নয়।
প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনা (Natural control and management) -
জৈব কৃষির একটি সহজ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হল তরল সার -
একটি ৩০-৪০ লিটার জল ধরবে এই রকম একটি মাটির জ্বালায় ২ কেজি গোবর, ৪ লিটার গোচনা, ২০০ গ্রাম করে কুচো করা আতা, বাসক, নিসিন্দা ও ভাট পাতা, ২০০ গ্রাম করে টক দই, চিটে গুড় ও ব্যসন দিয়ে জল ভরে দিতে হবে। উপরে সরা চাপা দিয়ে রাখতে হবে এবং রোজ দু-এক বার করে নাড়তে হবে যাতে বাতাস চলাচল ভালো হয়। এক মাস পর গন্ধ কমে গেলে ওই তরল সার বালতি বা অন্য পাত্রে স্থানান্তরিত করে শেষবার ধান জমিতে চাষ করার পর ছিটিয়ে দিতে হবে। তিনটি জ্বালা রাখতে হবে এক বিঘা জমির জন্য, ১৫-২০ দিন অন্তর ছেটাতে হবে। এক রাত ধরে কাপড়ের ঝুলিতে ছেঁকে নিয়ে এক ভাগ ছাঁকা তরল সারের সঙ্গে ৩ ভাগ জল মিশিয়ে সবজিতে স্প্রে করলে অনুরুপ ফল পাওয়া যাবে।
দয়ে পোকা, মাকড় ও জাব পোকা নিয়ন্ত্রনের জন্য বরফ ঠান্ডা জল বা ১০০ গ্রাম এরারুটের আঠা বা ১০০ গ্রাম এটেল মাটি ১০ লিটার ঠান্ডা জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। বেগুন ও টমাটোর ফল ছিদ্রকারী পোকার জন্য ৫০ গ্রাম রসুন, ৩০ মিলি কেরোসিন তেলে থেতো করে একরাত ভিজিয়ে রাখতে হবে, ছেঁকে নিয়ে ২০ লিটার জলে সামান্য সাবান (৫-৭ গ্রাম)গুলে স্প্রে করতে হবে। তামাক পাতা ভেজানো জল স্প্রে করলে অনেক পোকা কম থাকে। সিট্রোনেলা তেল ৩ মিলি এক লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে ধানের গন্ধি পোকা কম হয়। ১০ লিটার জলে এক কেজি গোবর গুলে (ছেকে নিয়ে) তার সঙ্গে ২ লিটার গোচনা মিশিয়ে ধানে ও অন্যান্য ফসলে স্প্রে করলে রোগ পোকা কমে ও বৃদ্ধি ভালো হয়। এর দ্বারা ধানের গন্ধি পোকা কমে। এক কেজি কেঁচো সার ১০ লিটার জলে গুলে নিয়ে ভালো করে ছেঁকে নিয়ে স্প্রে করলে গাছের রোগ পোকা কম হয় ও বৃদ্ধি ভালো হয়।
৩০ মিলি বাদাম পাতার রস ১০ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে বাদাম ছাড়া অন্য ফসলের অনেক রোগ কমে যায়। রোগ পোকা নিয়ন্ত্রনের জন্য এই ধরনের অনেক দেশজ পদ্ধতি আছে। এই সব পদ্ধতি হাইব্রিড বা আধুনিক জাতের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। মাঠে ইঁদুর দেখা দিলেই ইঁদুর নিয়ন্ত্রনের জন্য ইঁদুর কল ফাঁদ, বাঁশের তৈরী বিশেষ ফাঁদের ব্যবহার। পটল মূলের রসে/ঢোল কলমির পাতার রসে ভেজানো গম বীজ ইঁদুরের গর্তে ছড়িয়ে দেওয়া। আলকুশির বীজের উপরের রোঁয়া ইঁদুরের গর্তের মুখে ছড়িয়ে দিতে হবে। ইঁদুরের শরীরে ওই রোঁয়া লাগলে ইঁদুরের অস্বস্তি হয়, ওই জায়গা ছেড়ে পালায়।
আরও পড়ুন - Terrace Farming: ছাদে বাগান করার পদ্ধতি ও মাটি প্রস্তুত পদ্ধতির বিবরণ
এক ভাগ সিমেন্টের সঙ্গে তিন ভাগ আটা মিশিয়ে (শুকনো অবস্থায়) কাগজের উপর জমিতে রেখে দিতে হবে। পাকস্থলীতে ওই মিশ্রণ জমাট বেঁধে মৃত্যু ঘটায়। ইঁদুরের গর্তে শুকনো লংকার ধোঁয়া দিলে পালিয়ে যায়। এই ধরনের বহু দেশজ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা আছে।
আরও পড়ুন - Profitable Farming - পতিত জমিতে মুসুর চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ
Share your comments