
ফল ও সবজিতে নাইট্রেট থাকে, এবং এই নাইট্রেট আসে প্রধানত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ক্যালসিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম নাইট্রেট, ইউরিয়ার মতো নকল রাসায়নিক সারযুক্ত মাটি স্থানান্তরের মাধ্যমে।
ফল ও সবজি নাইট্রোজেন শোষণ এর মাধ্যমে, নাইট্রেট লবণ সমূহ ক্ষণিকের জন্য তাদের মধ্যে সঞ্চিত থাকে। রাসায়নিক উপাদান সমূহ শাকসবজির পাতাতে (যেমন-পালং পাতা, বাঁধাকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, লেটুস, বীট, ফুলকপি, মূলো পাতা, চেনোপডিয়াম ও অন্যান্য)
সঞ্চিত থাকলেও তার পরিমাণ অনেকটাই কম থাকে, এবং টাটকা সব্জি খেলে এই মাত্রায় কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু যদি সবজি বাসি হয় সেক্ষেত্রে নাইট্রেট পরিবর্তিত হয়ে নাইট্রাইট-এ পরিণত হয়, এবং তা অনেক বেশী পরিমাণে সঞ্চিত হয়।
অল্প সময়ে বেশী পরিমাণে সবজি খেলে, অধিক পরিমাণে নাইট্রেট ক্ষুদ্রান্ত্র নালীতে জমা হয়, ক্ষুদ্রান্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে সেই নাইট্রেট নাইট্রাইটে পরিণত হয় খুব তাড়াতাড়ি, এবং সেই নাইট্রাইট রক্তে মিশে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া ঘটায়, ঘাটা সবজিতে অনেক মাত্রায় নাইট্রাইট থাকে, ৭-৮ দিনের মধ্যে সেই মাত্রা চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায়, এর পর ১৫ দিনের মাথায় কমতে থাকে ও ২০ দিন পর তা একেবারে বিনষ্ট হয়ে যায়। এই ধরণের অসুবিধা এড়ানোর জন্য তাজা ফলমূল ও শাকসবজিকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই, যদি মজুদকরণ করা হয় সেক্ষেত্রে খুব কম তাপমাত্রায় (হিমাংকের নিচে) তা করতে হবে।
নাইট্রাইট হলো একপ্রকার অধিবিষ, যা প্রধানত খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ক্ষেত্রে সোডিয়াম নাইট্রাইট নামে পরিচিত। এই সোডিয়াম নাইট্রাইট লবণকে আমরা রোজই প্রায় গ্রহণ করে থাকি কোনো না কোনো প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মাধ্যমে যেমন খাদ্যে ব্যবহৃত রং, প্রক্রিয়াজাত মাংস, সসেজ, কৌটোজাত মাংসের মাধ্যমে। এছাড়া ফল ও সবজিতে যেহেতু নাইট্রেট খুব সহজেই নাইট্রাইটে পরিণত হয় তাই সকলকে তাজা ফল ও সবজি গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
কিভাবে বোঝা যাবে যে ফল বা সবজিটা তাজা কিনা? আমরা সাধারণত সকালেই সবজি ও ফল কিনে থাকি, কারণ সেই সময় সবে মাত্র ফল ও সবজি বাজারে আসে, অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত তাজা। দ্বিতীয়ত আমরা যে পদ্ধতিটি সাধারণত ব্যবহার করে থাকি এইটা দেখার জন্য যে সবজির পাতাগুলো হলুদ কিনা,বা পাতাটা পচা কিনা ইত্যাদি। এছাড়াও তাজা সবজি গুণমান নির্ণয় করার জন্য ছুঁই ব্রিলিয়্যান্ট ও রুট ফার্টিলাইজার্স যন্ত্র সরাসরি ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও, বর্তমানে নাইট্রেট ডিটেক্টর যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে যা ফল ও সবজিতে উপস্থিত নাইট্রেট এর পরিমাণ নির্ণয় করা যায় এবং ফল ও সবজি টাটকা কিনা তাও বোঝা যায়। এই নাইট্রেট টেস্ট কিট দ্বারা ফল ও সবজিতে নাইট্রেট ও কীটনাশক আছে কিনা তাও নির্ণয় করা যায়, যাতে করে ফল ও সবজি খাওয়ার আগে বিষাক্ত বস্তুর দৈহিক প্রবেশ আটকানো যায়।
গ্রীণ টেস্ট হলো ছোটো নাইট্রেট টেস্টার যা দিয়ে ফল ও সবজিতে নাইট্রেটের মাত্রা খুব শীঘ্রই জানা যায়, এর সাহায্যে জানা যায় যে আপনার খাদ্যের মধ্যে নাইট্রেট এর মাত্রা স্বাস্থ্যসম্মত কিনা, এই গ্রীণটেস্টার আপনার পরিবার এর পরিশুদ্ধ আহার এর সন্ধান দিতে সক্ষম, কারণ অতিরিক্ত মাত্রায় নাইট্রেট আমাদের শরীরে নাইট্রেট বিষক্রিয়াকরণ ও ক্যান্সারের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গ্রীণটেস্ট ইকো হল একধরণের উচ্চবিকিরণসম্পন্ন শুদ্ধতাপরিমাপক যন্ত্র, যা ফল ও সবজিতে নাইট্রেট দূষণের সাথে সাথে বিভিন্ন যন্ত্রাদির দ্বারা নির্গত তেজস্ক্রিয় বিকিরণের পরিমাণ ও ক্ষতিকারক দিকও বুঝতে সাহায্য করে।

খাদ্য সুরক্ষা সংস্থা Alvarita বিশ্বে প্রথম এমন ছোটো নাইট্রেট ডিটেক্টর যন্ত্র বানিয়েছেন। সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে গ্রীণটেস্ট হলো একটি জটিল যন্ত্র যা জলে, মাংসে, ফলে, সবজিতে নাইট্রেটের পরিমাণ তা নির্ণয় করতে পারে, যা মানুষকে প্রতিদিন নাইট্রেটের গ্রহণ থেকে রক্ষা করবে এবং মানুষকে সঠিক খাদ্য নির্বাচনে সাহায্য করে।
মানব স্বাস্থ্যের পক্ষে কতখানি নাইট্রেট মাত্রা থাকা প্রয়োজন তা নির্ণয় করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO।
ফল ও সবজিতে নাইট্রেট এর মাত্রা অনেক কম থাকে যা শরীরের পক্ষে অতটা ক্ষতিকারক নয়, কিন্তু বর্তমানে এই মাত্রা ৫০ বৎসর আগের নাইট্রেটের পরিমাণের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ অধিক, যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক।
গ্রিণটেস্ট নির্মাতা আনমেজ এর কথানুসারে, নাইট্রোজেন সার হলো বর্তমানে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত রাসায়নিক, সেই কারণেই বর্তমানে খাদ্যের মধ্যে এত বেশী নাইট্রেট এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
WHO এর মতে একদিনে প্রতি কিলোগ্রাম দৈহিক ওজনের হিসেবে ৩.৭ মিলিগ্রাম নাইট্রেট সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। কিন্তু একজন মানুষ বর্তমানে নির্ধারিত মাত্রার প্রায় ১০ গুণ বেশি নাইট্রেট গ্রহণ করছে, যা ডায়াবেটিস, অ্যালজাইমার্স ও পার্কিনসন্স রোগের পরিমাণ বেড়ে চলেছে।
- প্রদীপ পাল
Share your comments