বর্ষা (Monsoon) প্রায় এসেই গেছে | এই বর্ষায় ধানের সাথে মাছেরও চাষ (Mixed farming) করুন, কৃসকবন্ধুদের কজন্য রইলো দারুন টিপস | বর্ষায় ধান জমিতে জল জমলে স্বাভাবিক ভাবে পুঁটি, ট্যাংরা, ল্যাটা, কই, মাগুর, শিঙি, কুচো চিংড়ি জাতীয় মাছ জন্মায়। আবার বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ধানের সঙ্গে মাছ চাষ করা যেতে পারে।
সুবিধা হল, ধানখেতে সাধারণত মাছের জন্য আলাদা করে কৃত্রিম খাবারের দরকার হয় না। শুধু জিওল মাছ চাষের (Fish cultivation) জন্য প্রোটিন জাতীয় পরিপূরক খাদ্য দেওয়া যেতে পারে। ঘুনি বসিয়ে এবং শীতকালে টানা জালের সাহায্যে মাছ ধরতে হয়।
কি মাছ চাষ করা যেতে পারে(Type of fish):
এমন ধরনের মাছ নির্বাচন করতে হবে যারা কম গভীরতায় এবং অল্প জলে বাঁচতে পারে | এছাড়াও, বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে ও অল্প সময়ে তাড়াতাড়ি বাড়ে। যেমন, কাতলা, রুই, মৃগেল,তেলাপিয়া, পুঁটি, শিঙি, মাগুর, কই, চিংড়ি, সিলভার কার্প প্রভৃতি। তবে ধান খেতে কোনও ভাবেই ঘেসো রুই, আমেরিকান রুই, শাল, শোল, বোয়াল, ল্যাটা, চিতল প্রভৃতি চাষ করা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে, লাভ হয়না এবং চাষাবাদও হয়না সঠিকভাবে |
আরও পড়ুন -Corossol Fruit Farming: জেনে নিন ক্যান্সার প্রতিরোধক করোসল ফলের চাষাবাদ পদ্ধতি
কি জাতের ধান বপন করা উচিত(Type of paddy):
গভীর জলে উৎপাদনশীল ধানের জাত বাছতে হবে। যেমন, জলধি ১, জলধি ২, স্বর্ণ সাব ১। এই জাতের ধান গুলি জমিতে প্রচুর জল দাঁড়ালেও অনায়াসে চাষ করা যায় |
পোনার পরিমান:
ধান রোয়ার পর প্রতি হেক্টরে ২০০০-৩০০০ চারাপোনা ছাড়া হয়।
জমি প্রস্তুতি(Soil preparation):
জমিটি কমপক্ষে ৫-৬ বিঘা হলে চাষ ভালোভাবে করা যাবে। মোটামুটি ১ হেক্টর জমির চারদিকে ৪-৫ ফুট চওড়া এবং ২-৩ ফুট গভীর খাল কেটে ওই মাটি দিয়ে চারদিকে উঁচু আল দিতে হবে। ধান ক্ষেতের সঙ্গে পুকুরের বা অন্য বড় জলাশয়ের যোগ থাকলে ভাল। না হলেও জল ঢোকা এবং বেরনোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেই পথে জালের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ধানক্ষেত প্রয়োজনে জলে ডুবিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা যায় যেন।
মাছ চাষ পদ্ধতি(Fish farming process):
এইভাবে মাছ চাষ সাধারণত ২ভাবে করা যায় | যেমন, আহরণ পদ্ধতি ও পালন পদ্ধতি |
১) আহরণ পদ্ধতি:
আহরণ পদ্ধতিতে সংলগ্ন নালা থেকে মাছ জমিতে ঢুকে পড়ে। নালার জলের উচ্চতা ধান ক্ষেত থেকে ৩০ সেমি নীচে রাখা হয়। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ক্ষেতে সার দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়। শ্রাবণ মাসে বর্ষার জলে নালার জলের উচ্চতা বাড়ে। ওই সময় ধানক্ষেতের চারপাশের বাঁধের কিছু জায়গা কেটে দিলে নালার মাছ খেতে ঢুকে পড়ে। এরপর একই সঙ্গে ধানগাছ ও মাছের বৃদ্ধি হয়। ধান কাটার আগেই মাছ তুলে ফেলতে হবে।
২)পালন পদ্ধতি:
এই পদ্ধতিতে সরাসরি জমিতেই মাছের চারা ছাড়া হয়। এ ক্ষেত্রে ধান ও মাছ চাষ একসঙ্গে করা যায়। আবার আগে ধান ও পরে মাছ চাষ করা যেতে পারে। পরে মাছ চাষ করতে চাইলে জমি থেকে ধান কাটার পর চারপাশে বাঁধ দিয়ে ধানখেতটিকে একটি অস্থায়ী পুকুরে পরিণত করা হয়।
যদি বর্ষায় ধানের জমি জলে ডুবে যায়, তবে আপনিও এইভাবে ধান ও মাছের চাষ একসঙ্গে করতে পারেন | এইভাবে চাষ করলে কৃষকদের লাভও হয়ে থাকে ও আয়ের পরিমানও বাড়তে থাকে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Terrace Farming: ছাদে বাগান করার পদ্ধতি ও মাটি প্রস্তুত পদ্ধতির বিবরণ
Share your comments