পিস লিলি ইনডোর প্ল্যান্ট (Indoor plant) সবচেয়ে জনপ্রিয় | গোড়া থেকে পাতা গুচ্ছাকারে বের হয়। ফুলটি অপরুপ সুন্দর। পিস লিলির ফুল সাদা। এর ফুলকে স্পেডিক্স বলা হয়। স্পেথ নামক সাদা পাপড়ি দিয়ে স্পেডিক্স জড়ানো থাকে। পাতা সবুজ ও বড়। পিস লিলির (Peace lilies) জলের চাহিদা খুবই কম৷ সপ্তাহে ১ দিন জল দিলেই এরা সম্পূর্ণ ঠিক থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পিসলিলি বাতাস পরিশুদ্ধ করে। বিশেষ করে বাতাসের বেনজিন ও ফরম্যাল্ডিহাইড দূর করে।
গাছের অবস্থান নির্বাচন(Place selection):
এই গাছ সাধারণত আধা ছায়ায় ভালো হয় | এজন্য কাঙ্ক্ষিত গাছ থেকে বেশি সুফল পেতে রোদের/আলো-বাতাস প্রাপ্তি অবস্থা বুঝে গাছের অবস্থান চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। ইনডোর প্লান্ট এর ক্ষেত্রে ঘরের আকৃতি ও ধরনের ওপর লক্ষ রেখে গাছ নির্বাচন করতে হবে এবং সূর্যের আলো একেবারেই পায় না এমন হলে সপ্তাহে অন্তত ১ দিন গাছগুলোকে রোদে দিতে হবে।
মাটি(Soil):
যে কোন চারা রোপণের পূর্বেই সঠিক জায়গা ও মাটি নির্বাচন করা উচিত। পর্যাপ্ত সূর্যালোক ও যেখানে জল না জমে এমন উঁচু জায়গা নির্বাচন করে জায়গাটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সঠিক মাটি নির্বাচনের জন্য উপরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য থেকে এ বিষয়ে ধারনা নেওয়া যেতে পারে। টবে রোপণ করা গাছের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে টবের মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দেয়া ভাল, এতে গাছের শিকড় সহজে বাড়বে।
সেচ:
পিস লিলি গাছের ক্ষেত্রে জলসেচ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পিস লিলি শুকনো মাটি ভালোবাসে না। আবার বেশি জলেও পিস লিলির বিপদ, সেক্ষেত্রে গোড়া পচে গাছ মরে যেতে পারে। তাই পিস লিলি গাছে সর্বদা পরিমিত জল দেওয়া উচিত। সাধারণত সপ্তাহে দুবার জল দিলেই টবের পিস লিলির পক্ষে যথেষ্ট। তবে পিস লিলি গাছে ধরাবাঁধা রুটিনে জল দেওয়ার চেয়ে গাছের মাটি পরীক্ষা করে জল দেওয়া ভালো। অর্থাৎ, চোখে দেখে ও আঙুলের ডগা দিয়ে অনুভব করে যখন বোঝা যাবে টবের মাটি প্রায় শুকিয়ে গেছে, তখন পিস লিলি গাছে জল দিতে হবে। গাছে জল দেবার সেরা সময় ভোরবেলা।
আরও পড়ুন - Vegetable Planting Calendar: ১২ মাসে কোন ফসল কোন সময়ে চাষ করবেন?
সার প্ৰয়োগ(Fertilizer):
পিস লিলি গাছের মাটি তৈরির সময় অল্প পরিমানে জৈব সার মেশানো যেতে পারে। এছাড়া এ গাছে ঘন ঘন সার দেওয়ার দরকার হয়না। পিস লিলি গাছে কোনো রকম রাসায়নিক সার লাগে না।
পরিচর্যা:
১ )ট্যাপের জলে ক্লোরিন বা ফ্লুওরিন থাকলে সেই জল পিস লিলি গাছে দেওয়া ঠিক নয়। দিলে পাতা হলুদ হয়ে গাছ আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যদি একান্তই এ ধরনের ট্যাপের জল পিস লিলি গাছে দিতে হয়, তবে তা অন্তত একদিন আগে বালতিতে তুলে রেখে তারপর ওপরের দিক থেকে দিতে হবে।
২) পিস লিলির পাতা বাতাসের ভাসমান ধুলো আকর্ষণ করে। তাই পাতাগুলোকে মাঝেমধ্যে স্প্রেয়ার দিয়ে বা জল ছিটিয়ে ধুয়ে দেওয়া ভালো। তাতে পাতাগুলো তরতাজা থাকবে ও ঝকঝকে দেখাবে। পিস লিলি গাছ বেশি আর্দ্রতা ভালোবাসে। তাই একটা জলের ট্রের ওপর পিস লিলির টব রাখতে পারলে আরো ভালো।
৩) পিস লিলি ছায়ার গাছ। এই গাছ সরাসরি রোদে রাখা চলবে না। পরোক্ষ সূর্যালোক ও কৃত্তিম আলোই পিস লিলির জন্য যথেষ্ট। তা বলে আবার একে একেবারে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় ফেলে রাখাও ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে পিস লিলির বাড় ব্যাহত হবে ও ফুল ফুটবে না।
৪) টবে পিস লিলি গাছ রাখলে বছরে একবার টব ও মাটি বদলে দিতে হবে। বদলানোর সময় পিস লিলির নতুন টব পুরোনো টবের চেয়ে একটু বড়ো হওয়া দরকার। গাছের ঝাড় যদি খুব ঝাঁকড়া হয়ে যায়, এই সময় সেটাকে ভাগ করে আলাদা আলাদা টবেও লাগানো যেতে পারে।
প্রুনিং(Pruning):
পিস লিলি গাছ বেশি ঝাঁকড়া হয়ে গেলে প্রুনিং বা ছাঁটাই করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ফুল ফুটে শুকিয়ে যাওয়ার পর গাছের ঐ কান্ডটা কেটে দেওয়া যেতে পারে। পিস লিলির একটা কান্ডে একটাই ফুল ফোটে, ফুল ফুটে শুকিয়ে গেলে ওটা আর ভালো দেখায় না।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
পিস লিলি গাছে রোগপোকার আক্রমণ কমই দেখা যায়। এ গাছকে উপযুক্ত মাটি, দরকার মতো জল ও আলো সহ সঠিক পরিবেশ দিতে পারলে এমনিতেই এর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
পিস লিলি গাছে অতিরিক্ত জল দিলে গোড়া-পচা রোগ হতে পারে। এ রোগ একবার হলে গাছকে বাঁচানো কঠিন। এ রোগ এড়ানোর উপায় হলো পিস লিলি গাছের গোড়ায় কখনো জল জমতে না দেওয়া।
পিস লিলি গাছের পাতা বাদামি হয়ে শুকিয়ে গেলে বুঝতে হবে গাছ দরকার মতো জল পাচ্ছে না অথবা খুব শুষ্ক পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে অথবা গাছে রোদের তাত বেশি লাগছে। অনেক দিন হয়ে যাওয়ার পরেও পিস লিলি গাছ ঠিকঠাক না বাড়লে বা তাতে ফুল না ফুটলে বুঝতে হবে গাছ দরকারের চেয়ে আলো কম পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে টবের অবস্থান বদলে পিস লিলি গাছকে আরেকটু বেশি আলো দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
পিস লিলি গাছে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ সাধারণত দেখা যায়না। তবু যদি কখনো এ ধরণের রোগ হয়, রোগ মোকাবিলায় রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ করার চেয়ে জৈব পদ্ধতি অবলম্বন করা ভালো। রোগ একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরতে পারলে, আক্রান্ত অংশ কেটে বাদ দিয়েও রোগের বিস্তার থেকে গাছকে বাঁচানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
পিস লিলি গাছে স্কেল, মিলি বাগ বা অ্যাফিড জাতীয় পোকামাকড়ের আক্রমণ ঘটলে আক্রান্ত গাছটাকে প্রথমেই অন্যান্য গাছ থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে। আক্রান্ত অংশ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলা যেতে পারে। নিম তেল প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া যায়। আরেকটা পদ্ধতি হলো রাবিং অ্যালকোহল (আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল)-এ তুলো ভিজিয়ে আক্রান্ত অংশটা সাবধানে মুছে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন - Composting Cow Dung: কিভাবে গোবর থেকে জৈব সার বানাবেন? শিখে নিন পদ্ধতি
Share your comments