ক্ষেতে আগাছা বা পোকামাকড় আক্রমণ এক বড় বিষয়। ফসল বাড়ার সঙ্গে পোকামাকড়ের আক্রমণ তো ঘটেই, সাথে সাথে ক্ষেতে আগাছাও বেড়ে উঠতে থাকে। গবেষণায় উঠে এসেছে এক তথ্য। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসলের তো ক্ষতি হয়ই, কিন্তু আগাছাও ফসল নষ্টের জন্য প্রায় ৪০ শতাংশ দায়ী। তাই ফসল ফলাতে গেলে নিয়মিত আগাছা সাফ করতে হবে। পোকামাকড়ের সাথে আগাছা দমন না করলে ফসল ক্ষতির সম্ভাবনা ভীষণ।
আগাছার শ্রেণী সাধারণত তিন ধরনের (3 types of Weed):
১) ঘাস জাতীয় ২) মুথা জাতীয় : Cyperus rotundus ৩) চওড়া পাতা জাতীয়
পরিচর্যা পদ্ধতি (Weed Control):
বর্ষাকালে আগাছা থেকে বাঁচতে গেলে চাষি ভাইদের দ্রুত ফলন হয় এমন ফসলের চাষ করা উচিত। মরসুম অনুযায়ী সবসময় চাষাবাদ করা উচিত। কখনো জমি ফেলে রাখা উচিত নয়, এতে আগাছা বেড়ে ওঠে। আগাছা থেকে ফসলকে বাঁচাতে গেলে, নিয়ম করে প্রতিনিয়ত জমি চাষ করা, লাঙল দেওয়া উচিত। জমিতে নিয়মিত কর্ষণের সাথে সাথে প্রয়োজন পড়লে জমি জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
খুরপি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার জমি ভালো রাখার অন্যতম প্রাচীন উপায়। লাঙল, হুইল, উইডার, কালটিভেটর যন্ত্রাদির মাধ্যমে ক্ষতিকর আগাছা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়াও অন্য আরও এক রকম পদ্ধতি। পরে থাকা জমির আগাছা কেটে ফেলে পুড়িয়ে দেওয়াও আগাছা দমনের আরও এক পদ্ধতি। জমির উপর খড়, কচুরিপানা বিছিয়ে দিলেও আগাছা রোধ করা যায়।
আগাছা দমনের জৈব পদ্ধতি (Weed control In Biological method):
জৈবিক পদ্ধতিতেও আগাছা দমন করা যায়। আগাছার প্রাকৃতিক শত্রু বিভিন্ন রোগ পোকা অথবা অন্যান্য প্রাণীর মাধ্যমেও আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দুধিকানি, বিছুটি, ঘেটু হলদের মতন ফসলের মতন ক্ষতিকর আগাছাকে, মোজাইক ভাইরাস জব্দ করতে পারে। বিশেষ এক শ্রেণীর স্পাইডার মাইট ক্ষেতের আগাছা উত্তম উপায়ে দমন করতে সক্ষম। বাজারেও বিভিন্ন রকমের জৈব আগাছা নিয়ন্ত্রণ আজকাল পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলি ব্যবহার করলেও আগাছা ভালোই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে।
আগাছা দমনে রাসায়নিক পদ্ধতি (Weed control in Chemical method):
রাসায়নিক দিয়েও সহজে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রাসায়নিক, ফসল অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলে আগাছার দমন ঘটানো সম্ভব। তবে নিয়ম না মেনে ভুলভাল রাসায়নিক প্রয়োগে, ক্ষেতের মাটি থেকে শুরু করে, পশু-পাখি এমনকি মানুষের সমূহ বিপদের আশংকা থাকে।
আরও পড়ুন: Prawn Cultivation: জেনে নিন চিংড়ি মাছ চাষের দুর্দান্ত সহজ পদ্ধতি
নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত-- দুই ধরনের আগাছা নাশক মূলত দেখা যায়। নির্বাচিত আগাছা নাশক প্রয়োগ করলে নির্দিষ্ট কিছু আগাছাকে মেরে দেয়। অনির্বাচিত আগাছা নাশক জমির সমস্ত গাছকে মেরে ফেলে।
আগাছা নাশক, গুঁড়ো আর তরল এই দুইরকমের মূলত হয়। বালি অথবা জল-- এদের দুইয়ের সাথে মিশিয়েই আগাছা নাশক ক্ষেতে প্রয়োগ করা উচিত। মূলত বীজ বোনার আগে, বীজ বোনার পর ও আগাছা জন্মানোর আগে এবং আগাছা জন্মানোর পর এই তিন আলাদা আলাদা সময়ে আগাছা নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করা যায়।
কখনোই চোরা বাজার থেকে নিষিদ্ধ আগাছা নাশক কিনে জমিতে প্রয়োগ করা উচিত নয়। নিষিদ্ধ আগাছা নাশকে আখেরে ক্ষতি হবে চাষ যোগ্য জমিরই।
আরও পড়ুন: Post Harvest Resolution: কৃষিক্ষেত্রে ফসল কাটার ওপর বৈজ্ঞানিক বাস্তুসংস্থানের প্রয়াস
Share your comments