বিভিন্ন রকমের তৈল বীজের চাষ আমাদের রাজ্যে হয়। রেড়ি, সয়াবিনের তেল ছাড়াও সর্ষের তেল বাঙালিদের অত্যন্ত কাছের। বিভিন্ন ভোজ্য তেলের মধ্যে সর্ষে তেলের চাহিদা রাজ্য তথা দেশ জুড়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় সর্ষে বীজের চাষ হয়ে থাকে। গোটা বছর ধরে এই তেলের চাহিদা থাকায়, সর্ষের চাষ করে বহু কৃষক লাভবান হচ্ছেন। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টন সর্ষের তেল আমাদের দেশে উৎপন্ন হয়।
প্রতি হেক্টরে ভারতবর্ষে সরিষার ফলন হয় ৬০০- ৭২৫ কেজি। অঞ্চল অনুযায়ী ফলন কম বা বেশিও হতে পারে। সর্ষের বীজে ৩৮-৪৪% তেল থাকে, আর বাকিটা খোল। সর্ষের এই বাকি অংশ খোল, চাষের ক্ষেতে সার হিসাবে ব্যবহার হয়, সাথে গৃহপালিত পশু খাদ্যের জন্যও এই খোল ব্যবহৃত হয়।
সর্ষে চাষের প্রয়োজনীয় মাটি (Soil):
জল নিষ্কাশন সহজে হবে এরকম জমিতে সর্ষে চাষ করা উচিত। এছাড়া দো-আঁশ মাটি ও বেলে দো-আঁশ মাটি সর্ষে চাষের জন্য আদর্শ। পলিমাটিতেও সর্ষে চাষ করা যায়।
বীজ বপন (Planting time):
সর্ষের বীজ বপনের উপযুক্ত মাস হল অক্টবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ।
জমি তৈরী (Land Preparation):
এই চাষের জন্য জমি ঝুরঝুরে করে চাষ দিতে হবে। জমি এমন ভাবে চাষ দিলে, বীজ থেকে চারা গজাতে সহজ হবে। কম করে ৫ থেকে ৬ বার জমিতে আড়াআড়ি ভাবে চাষ দিতে হবে। সঠিক ভাবে মইও দিয়ে নিতে হবে এই জমি চাষের জন্য। সর্ষে চাষের জমির মাটি কখনো ঢেলা হয়ে থাকা উচিত নয়, সবসময় এই চাষের জন্য মাটি সমতল ও ঝুরুঝুরে হয় উচিত। জমিতে যাতে জল না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে সেচ ও জল নিকাশের সুবিধার জন্য জমির চারদিকে নালা বানিয়ে নেওয়া উচিত।
রোপণ (Planting):
সর্ষে বীজ ছিটিয়ে বপন করা ছাড়াও, সারিতেও বীজ পোঁতা যায়। বীজ ছিটিয়ে বুনলে শেষ চাষে বীজ পুঁতে মই দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখা উচিত যদি সারিতে বীজ বপন করা হয়। মনে রাখতে হবে সর্ষের বীজ কম করে ২-৪ সেমি গভীরতায় বপন করা উচিত। সর্ষের বীজ আকারে ছোট হওয়ায় পোঁতার সুবিধার জন্য বীজের সাথে ঝুরঝুরে মাটি অথবা ছাই মিশিয়ে নেওয়া উচিত। মাটির রস বুঝে সবসময় সর্ষের চাষ করা উচিত। যেই মাটিতে পর্যাপ্ত রস আছে সেই মাটিতে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে চারা গজাবে।
সেচ (Irrigation):
সর্ষে ক্ষেতে দুইবার সেচ দেওয়া উচিত। বীজ পোঁতার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ গাছে ফুল ফোটার আগে, এবং পরের সেচ ৫০-৫৫ দিনের মধ্যে দিতে হবে অর্থাৎ ফুল ফোটবার সময়। চারা গজানোর ১০-১৫ দিনের মধ্যে একটি হালকা সেচ দিয়ে নেওয়া উচিত। তবে, সর্ষে জমিতে জল না জমতে দেওয়াই উচিত। মনে রাখতে হবে সর্ষের জমিতে যাতে জল জমতে না পারে।
জমিতে সার প্রয়োগ (Fertilizer):
সর্ষে চাষের জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করা খুব ভালো, এছাড়াও জমিতে আবর্জনা অর্থাৎ পচা সারও ব্যবহার করা যেতে পারে। জমি তৈরী করার সময়, জমিতে অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি এবং জিপসাম সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। চারাতে ফুল যখন আসবে সেইসময় বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে দিতে হবে। বিকেলের দিকে সর্ষের ক্ষেতে সার প্রয়োগ করা উচিত। জৈব সার সর্ষে চাষের জন্য সবথেকে উপযুক্ত সার হিসাবে বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুন:Poppy Seed Cultivation: দেখুন কিভাবে পোস্ত বীজ রোপণ করা যায়
রোগবালাইয়ের হাত থেকে উদ্ধার (Pest and Disease Control)
জাবপোকার আক্রমণ সর্ষে খেতে ভীষণ রকমের লক্ষ্যণীয়। এই পোকার আক্রমণ ফুলের কুঁড়ি আসা মাত্রই দেখা যায়। ডাইক্রেমন ১০০ সিসি অথবা ম্যালাথিয়ন ৫৭ সিসি এই পোকাকে বিনাশ করতে পারে। সর্ষে ক্ষেতে অল্টারনিয়া রোগেরও প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এই ক্ষেত্রে ডায়াথেন এম ৪৫ অথবা রোভরাল স্প্রে করলে এই রোগ থেকে গাছ মুক্তি পায়। ফুল একবার ফুটে গেলে ১৫ দিন বাদে বাদে দুই বার স্প্রে করা উচিত।
ফসল সংগ্রহ (Harvest):
হলুদ রঙের ফল সর্ষে গাছে দেখা দিলে, ফসল সংগ্রহ করা উচিত। গাছের গোড়া ধরে টেনে শিকড় সহ উবরেও আনা যায়। তবে মাটি নরম থাকলেই তা সম্ভব। বীজ ভালো করে ৪ থেকে ৫ দিন রোদে শুকিয়ে নিলেই তা সংরক্ষণের উপযোগী হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: Snail Farming Procedure and its Future শামুক চাষ করে হয়ে উঠুন সম্পদশালী কৃষক
Share your comments