
ফসল উৎপাদন ও বীজ উৎপাদন পদ্ধতির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। বীজ উৎপাদনের সময় বিশেষ কিছু ব্যপারের উপর নজর দিতে হয়, এবং সেই পদ্ধতিগুলি ফসল ভিত্তিক বিভিন্ন। এবারে ধান ও ডালশষ্যের বীজ উৎপাদন পদ্ধতি সংক্ষেপে দেওয়া হল।
ধান – উচ্চ ফলনশীল, দেশীয় জাতের ধানের বীজ উৎপাদন পদ্ধতি –

- জলবায়ু ও কৃষি ক্ষেত্র নির্বাচন – পশ্চিমবঙ্গের যেসমস্ত এলাকাতে ধান চাষ হয় সেই এলাকাগুলিতে বীজ উৎপাদন সম্ভব হলেও পশ্চিমাঞ্চলের এলাকাগুলি যেমন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও পশ্চিম মেদিনিপুরে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম থাকার দরুন বীজ উৎপাদনের সময় রোগ পোকা কম আক্রমণ হয় বলে বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আদর্শ।
- জাত – কৃষি জলবায়ুভিত্তিক শেষ ১০ বছরের উদ্ভাবিত জাতগুলি চিহ্নিত করণ করে বীজ উৎপাদন করতে হবে।
- বীজশোধন – কর্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম / বীজ বা ২ গ্রাম / লিটার জল।
- বীজতলা – প্রতি শতক বীজতলায় ১ কেজি ২০০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। আল উঁচু করতে হবে। বীজতলায় কোন চারা অন্য জাতের বা রোগ আক্রান্ত হলে তুলে ফেলতে হবে।
- চারা রোপন - জাতের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে একটি করে চারা ১৫ x 20 সেমি দূরত্বে রোপন করতে হবে।
- সার - যথেষ্ট পরিমাণে জৈব সার ও খরিফ মরশুমে বিঘা প্রতি ১০ : ৫ : ৫ বা বোরো মরশুমে ১৮ : ৯ : ৯ কেজি হারে নাইট্রোজেন : ফসফেট : পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।
- সেচ - হালকা সেচ ও পর্যায়ক্রমে জমি থেকে জল বের করে দেওয়া জরুরি । শ্রী পদ্ধতি অবলম্বন করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে ।
- অন্তরন দূরত্ব - ৩ মিটার । অবাঞ্ছিত গাছ তুলে ফেলতে হবে ।
- রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ - বীজ বাহিত রোগ গুলির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নাইট্রোজেন সার কম প্রয়োগ করা উচিত । কপার হাইড্রক্সাইড ২ গ্রাম / লি. জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
- ফসল কাটা - ৮০% মত ফসল পেকে গেলে ফসল কেটে নিতে হবে।
ডালশস্য - মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে ডাল শস্যের চাষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। অন্যান্য খাদ্যশস্যের তুলনায় ডালশস্যের অনেক গুনাবলী থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয় সমগ্র ভারতবর্ষে ডালশস্যের উৎপাদন প্রয়োজনের নিরিখে অনেক কম।

নিম্নে ডালশস্যের বীজ উৎপাদন পদ্ধতি সংক্ষেপে বিবৃত হল-
কৃষি পদ্ধতি |
জাত |
বোনার সময় |
বীজের হার (কেজি/বিঘা) |
বীজ বোনার দূরত্ব (সেমি) |
সারের পরিমাণ ( N : P : K) (কেজি / বিঘা) |
সেচ |
কলাই |
সারদা, গৌতম, বসন্তবাহার, সুলতা, উত্তরা |
ফেব্রুয়ারি-মার্চ এবং আগস্ট |
৩–৪ |
সারিতে ৩০ x ১০ |
৩ : ৬ : ৬ |
ফুল আসার আগে এবং প্রয়োজন মত |
মুগ |
সম্রাট, বীরেশ্বর, সুকুমার, SML – 668, পন্থমুগ- 4 |
ফেব্রুয়ারি-মার্চ এবং আগস্ট |
৩–৪ |
সারিতে ৩০ x ১০ |
৩ : ৬ : ৬ |
ফুল আসার আগে এবং প্রয়োজন মত |
মুশুর |
সুব্রত, মৈত্রী, শুভেন্দু HUL -57, বি – 62, বি - 177 |
অক্টোবর -নভেম্বর |
৪ |
সারিতে ৩০ x ১০ |
৪ : ৮ : ৮ |
ফুল আসার আগে এবং প্রয়োজন মত |
মটর |
ধূসর, জি.এফ – ৬৮, ডি. ডি. আর-২৩, রচনা শংকর |
অক্টোবর -নভেম্বর |
৬.৫ |
সারিতে ৩০ x ১০ |
৩ : ৬ : ৬ |
ফুল আসার সময় ও শুটি ধরার সময় |
ছোলা |
মহামায়া ১, ২, অনুরাধা, বিদিশা, বি -৭৫, বি - ৯৮ |
নভেম্বর - ডিসেম্বর |
৮ |
সারিতে ৩০ x ১০ |
৩ : ৬ : ৬ |
প্রয়োজন মতো এবং শুঁটি ধরার সময় |
- রুনা নাথ
Share your comments