
আমরা জানি যে ধান বা গম চাষ করে একর প্রতি ৩০,০০০ টাকার বেশী পাওয়া যায় না, যতটা না পাওয়া যায় সুগন্ধি উদ্ভিদ ও জড়িবুটি চাষের ক্ষেত্রে। কিছু জড়িবুটি যেমন – আতিশ, কুথ, কুউটকী, কারাঞ্জা, কাপিকাছু এবং সুঙ্খপুষ্পি ইত্যাদি এই ধান ও গমের তুলনায় ওই সমপরিমাণ জমিতে ধানের ও গমের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশী আয় দেয়। এইসব সুগন্ধি জড়িবুটি প্রসাধন ও স্বাস্থ্যকর পণ্যের উৎপাদনশিল্পের জন্য বিশেষ ভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যদি কৃষক এই সব ফসল চাষের বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে তাহলে তার একর প্রতি ৩০,০০০ টাকার বেশী আয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সব উৎপাদিত ফসল বিভিন্ন প্রসাধন ও সুগন্ধি উৎপাদন সংস্থা যেমন ডাবর, হিমালয়া, ন্যাচারাল রেমিডি, ও পতঞ্জলি এরা প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে থাকে। তাই কোনো সুগন্ধি জড়িবুটি উৎপাদন করে এই সব সংস্থার সাথে যোগাযোগ করলে প্রচুর দাম পাওয়া সম্ভব।
পতঞ্জলির সি.ই.ও শ্রী বালাকৃষ্ণার সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, সারা বিশ্বে চীন হল একমাত্র দেশ যেখানে প্রচুর সুগন্ধি উদ্ভিদ ও জড়িবুটি উৎপাদিত হয়ে থাকে এবং এই ব্যাপারে ভারতের কাছে অনেক সুযোগ রয়েছে আয় বৃদ্ধি করার। সুগন্ধি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এই মূহুর্তে সব থেকে বেশী লাভ জনক হল কুতকি, শতাভরি এবং চিরায়তা। পতঞ্জলি কৃষকদের এই উদ্ভিদসমূহকে বৃহৎ পরিমাণে চাষের সুযোগ করে দিয়ে তাদের আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। ভারতের কাছে এই উদ্ভিদসমূহের উৎপাদন ও আয় উভয় প্রকার লাভ তোলারই সুযোগ রয়েছে।
বড় বড় খিলাড়ি সংস্থাসমূহ এই বিষয়ে প্রবলভাবে যুক্ত হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে, ডাবর তাদের জৈব-সম্পদ উন্নয়ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মহৌষধি উদ্ভিদ সমূহের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পরিমাণ ২৫% দেখিয়েছে, এবং তাদের সমীক্ষা অনুসারে ১৯ টি রাজ্যের প্রায় ৫০০০ একর জমিতে এই জড়িবুটির চাষ করা সম্ভবপর হয়েছে এবং এর থেকে প্রায় ২৪০০ কৃষক পরিবার উপকৃত হয়েছেন। ডাবর ইন্ডিয়ার সি.এস.আর প্রধান মিঃ এ সুধাকরের মন্তব্য থেকে উপরিউক্ত তথ্যাদি বেরিয়ে এসেছে। হিমালয়া ড্রাগ কোম্পানি প্রায় ৮০০ চাষিদের নিয়ে কাজ করছেন, যেখানে তারা মোট ৩৫০০ একর জমি নিয়ে এই উদ্ভিদের চাষ করছে।

যে সব চাষিরা এইসব ফসল উৎপাদন করেছেন তারা প্রতি একরে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছেন, এবং তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ফসল হিসাবে তারা এই ভেষজ সুগন্ধি উদ্ভিদ চাষ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এই ফসলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এতটাই বেশি যে একজন কৃষক ইচ্ছা করলেই ৬০,০০০ টাকা প্রতি একরে উপার্জন করতে সক্ষম হবে এবং এদের উৎপাদিত ফসলের চাহিদাও সুনিশ্চিত হবে।
হিমাচল প্রদেশের কিন্নাউর জেলার সাঙলা গ্রামের একজন সফল কৃষক বিদ্যা করণ এর সাফল্যের গল্প থেকে জানা যায় যে তিনি আতিশ চাষ করে ২.৫ থেকে ৩ লাখ প্রতি একর, রাটন জট থেকে ১.১৫ লক্ষ প্রতি একর, এবং কারু চাষ করে ১.৫ থেকে ২ লাখ প্রতি একর উপার্জন করেছেন। তিনি অন্য কৃষকদের কীভাবে এই জড়িবুটির চাষ করা যায় সেই বিষয়ে সুবিধাজনক পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে এই সব উদ্ভিদের একটাই সুবিধা সেটা হল এই সব উদ্ভিদে রোজ জল দেওয়া বা ছড়ানোর দরকার নেই এবং সারের প্রয়োজনীয়তাও অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেকটাই কম। তিনি আর বলেন যাদের কৃষিতে উন্নতির ইচ্ছা রয়েছে তাহলে তাদের এই উৎপাদন থেকে অনেক সুবিধা পেতে পারে।
তিনি বলেছেন “আমাদের এই চাষে বেশি জলের প্রয়োজন হয় না এবং বেশি পরিমাণ সারের খরচও নেই”। এই ফসল এমন জমিতে চাষ করা সম্ভব যেখানে সারা বছরই কোনো ফসলই ভালোভাবে ফলানো সম্ভব নয়, এমনকি যেসমস্ত স্থানে বৃষ্টিপাত হওয়া সম্ভব নয়, সেখানেও এই ধরনের ফসলের উৎপাদনে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে না। ডাবর কৃষকদের সাথে সহযোগিতা করে রাজস্থানের বারমেরে সংখপুষ্পির মতো ভেষজ উদ্ভিদের চাষ সাফল্যের সাথে করে চলেছে।
অপর একটি সাফল্যগাথা পাওয়া যায় জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা জেলার খেল্লানি গ্রামের ভারত ভূষণের কাছ থেকে। তিনি এককালে তার দুই একর জমিতে ভুট্টা চাষ করতো, বর্তমানে তিনি সেই জমিতে বিগত ২০ বছর ধরে ল্যাভেন্ডার চাষ করে প্রচুর সাফল্য অর্জন করে আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এখন তিনি ১০ একর জমিতে এই উদ্ভিদ চাষ করছেন। প্রথম ২০০০ সালে ল্যাভেন্ডার চাষ করেছিলেন এবং প্রথম বারেই তিনি ভুট্টার তুলনায় ছয়গুণ বেশি লাভ পেয়েছেন। তিনি প্রধানত ল্যাভেন্ডার চাষ করেন এর বীজ পিষে তেল উৎপাদনের জন্য, এই ফুলের শুকনো অংশও কোনো না কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, সুতরাং এই ফুলের সমস্ত অংশেরই মূল্য রয়েছে।
- প্রদীপ পাল
Share your comments