ভারতবর্ষের প্রায় ৫৮ শতাংশ গ্রামীণ পরিবার এখনও পর্যন্ত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল এবং ভারতীয় জি.ডি.পি-এর প্রায় ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ আসে এই কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে। সংরক্ষিত চাষাবাদ একটি নতুন যুগের কৃষি প্রযুক্তি যা কিনা ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয়কে দ্বিগুণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর যে প্রচেষ্টা তাঁকে সম্পূর্ণ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ তাতে একটি মহত্মপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে চলেছে। কৃষিকাজের প্রতিবন্ধক সৃষ্টিকারী বিভিন্ন কারণসমূহ, যেমন-রুক্ষ জমি, জলের আকাল, অনিয়ন্ত্রিত মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালী চরিত্র, ইত্যাদি বিষয়গুলিতে সংরক্ষিত কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা করা যায়, এবং কৃষি উৎপাদনকে অনেক বেশী অনুকূল, আকর্ষনীয় করতে সক্ষম, শুধু তাই নয় সংরক্ষিত কৃষিতে নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোক্লাইমেট, সুরক্ষা রোগ, মরশুমের বিরুপতার জন্য উৎপাদন বন্ধ, উত্তাপ, হাওয়া, বৃষ্টি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সমূহকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং ফসল সুরক্ষার ব্যাপারে অনেক বেশী ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
সেন্টার অব রিসার্চ ইন রুরাল এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট (ক্রিড) এর থেকে একটি নিরীক্ষণ অনুসারে, সংরক্ষিত ক্ষেতে সাধারণ খোলা মাঠের ক্ষেতের তুলনায় ৫ থেকে ১০ গুণ অধিক সবজি বা ফুলের উৎপাদন হয়ে থাকে। আসলে ভারতে সংরক্ষিত ক্ষেতের পরিমাণ মাত্র ০.২ % এর মতো রয়েছে, অর্থাৎ বলা যায় একেবারেই নবজাত অবস্থা, যা কিনা নেদারল্যান্ড, তুর্কী ও ইজরায়েলের সংরক্ষিত ক্ষেতের তুলনায় অনেক কম। সংরক্ষিত ক্ষেতের প্রবণতা ও সম্ভাবনা বোঝা বা তার থেকে রোজগার সৃষ্টি করা, কৃষি উৎপাদন থেকে গ্রামীণ ভারতের আয় বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকে বোঝা, ভারত সরকারের সাথে সাথে রাজ্যসরকার, “রাষ্ট্রীয় বাগবানী বোর্ড”-এর মতো আরও কিছু সংস্থা বা মাধ্যম রয়েছে যেখানে ভর্তুকী প্রদান করে সংরক্ষিত কৃষির সংস্কৃতিকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।
এন.এইচ.এম, মিশন ফর ইন্টিগ্রেটেড ডেভলপমেন্ট অফ হর্টিকালচার (এম আই ডী এইচ) ইত্যাদি আরও কিছু সরকারি যোজনা যেমন-প্রধানমন্ত্রী কৃষি সেচ যোজনা, পলিহাউস সম্পর্কীত সরকারী নীতি সমূহ ইত্যাদি। সংরক্ষিত ক্ষেত্র তৈরির কাজ একটি ব্র্যান্ড হিসাবে শুরু করেছিলো গরবারে টেকনিক্যাল ফাইবার্স লিমিটেড, এই সংস্থা সংরক্ষিত ক্ষেত্রের সংগঠন করে এগ্রোটেক্সটাইলের উন্নয়ন ঘটিয়েছিলো। সরকারি নীতি ও সরকারি ভর্তুকীসমূহের সাথে মিলঝুল রেখে বিভিন্ন প্রয়োগগুলিকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছে। সংরক্ষিত ক্ষেত্রের জন্য প্রযুক্তি রুপে উন্নত গুণের মনোফিলামেন্ট নেট প্রদান করা ছাড়াও, গরবারে সংস্থাটি ভারতে সংরক্ষিত ক্ষেতির জমির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য “প্রোজেক্ট তরক্কী” নামক একটি পরিকল্পনা শুরু করেছিলো। আসলে সংরক্ষিত ক্ষেতে যে ফসল অনেক বেশী সুনিশ্চিত ও সুরক্ষিত থাকে সেই ব্যাপারটিকে ভালো করে বোঝানোর জন্যই তাঁরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। এই প্রোজেক্টের মাধ্যমে তাঁরা কৃষকদের সংরক্ষিত কৃষির ব্যাপারে প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং প্রশিক্ষণের পরবর্তী সময় উন্নত কৃষকদের শংসাপত্রও প্রদান করা হয়। তাঁরা চাইছেন দেশের আরও বিভিন্ন কন্সাল্টেন্সি সংস্থাগুলি এই কৃষকদের সংরক্ষিত ক্ষেতির প্রশিক্ষণের ভার নিক এবং তাঁদের কাছে উপার্জনের একটা রাস্তা তৈরি হোক। কৃষকদের একটি ডেমো ক্ষেতের মধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো এবং সেখানে অনেকগুলি কৃষক সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। এই সব কৃষক সভায় গরবারের কৃষিবিশেষজ্ঞরা এসে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন, এখানে কৃষকদের কৃষির বিভিন্ন বিষয়সমূহ যেমন-উন্নত কৃষি পদ্ধতি, কৃষি জমিতে চাষ করা যায়, এমন সভাবনাময় ফসল, রোগ ও কীট দমনের পদ্ধতি, বিনিয়োগের উপর আনুপাতিক আয়, উৎপাদিত পণ্যের বিপণন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চলে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে “প্রোজেক্ট তরক্কী” ধীরে ধীরে তাঁদের শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছে।
কৃষকদের অবস্থা উন্নতিতে এই প্রোজেক্ট কাজ করছে
কৃষি উপযোগী এক বিশেষ ধরণের কাপড় যেমন- মনোফিলামেন্ট নেট শেড, ক্ষেতের আভ্যন্তরীণ জলবায়ু, আবহাওয়া জনিত অবস্থা, উত্তাপ ও আলোর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি করতে সক্ষম। এছাড়াও মনোফিলামেন্ট তার সূক্ষ্ম ছিদ্রের সাহায্যে বিভিন্ন ক্ষতিকারক কীট বা পতঙ্গ এবং বিভিন্ন ধরণের বিষাক্ত জীবাণুকে ক্ষেতে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এই শেড নেট এর সাহায্যে উত্তাপ নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে ফলে এর ভিতরকার গাছপালা সবই স্বাভাবিকের থেকে বেশী বৃদ্ধি পায়, ফলে এই শেড নেটের ভিতরকার শাক সবজি ও ফুলের উৎপাদন অনেকটাই বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদিত ফসলের গুণমান অনেক ভালো থাকে। ভারতে সংরক্ষিত ক্ষেতি শুরু হওয়ার পর থেকে টেপ ইয়ার্ণ উপাদান থেকে তৈরি শেড নেট খোলা জায়গার চাষবাসের থেকে অনেক বেশী শস্য সুরক্ষা দিতে পেরেছে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির দিক থেকে একটি মহত্মপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এতকিছুর পড়েও প্রথমদিকে কিন্তু অতিবেগুনী রশ্মী ও অন্যান্য ক্ষতিকারক বস্তুর প্রভাব ছিলো যা কিনা শুরুতে উৎপাদনের অনেক ঘাটতি ফেলে দেয়। টেপ শেড নেটের এত ঘাটতি থাকার কারণে গরবারে সংস্থাটি একটি উন্নত প্রযুক্তির শেড নেটের ব্যবস্থা নিয়ে আসে, যা কিনা মনোফিলামেন্ট দ্বারা নির্মিত। এই মনোফিলামেন্ট নির্মিত শেডনেটে উৎপাদন ক্ষমতা টেপশেডনেটের থেকে অনেক বেশী কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারছে। গরবারে এই মনোফিলামেন্টের শেডনেটকে সম্পূর্ণ ত্রুটি মুক্ত করতে চেয়েছে, আর এই কারনে অত্যাধিক ঘন আর এন্ড ডি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই শেডনেটের উৎপাদন করেছে। গরবারে হলো ভারতের প্রথম কোম্পানি যাঁদের উৎপাদিত শেডনেট ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড এর সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হয়েছে।
- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)
Share your comments