
সম্প্রতি জানা গেছে, চীন –এ সরকারি উদ্যোগে গত দশ বছরে সারা দেশ জুড়ে দু’হাজার কোটি নিমচারা লাগানো হয়েছে। আগামী পরিকল্পনায় চীন দেশে ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে নিমচারা লাগানো হবে। তথ্যানুসার, ভারত –এ মাত্র ২ কোটি নিমগাছ আছে। এদেশে আশু প্রয়োজন ব্যপক নিমচাষ (Neem Farming)। চীন দেশে ব্যাপক হারে নিমচাষের ফলে ক্যানসার সহ নানাবিধ মারণ ব্যাধির ওষুধ তৈরির যেমন সুরাহা ওনারা পাবেন তেমনই আবহাওয়া তত্ত্বানুসারে (Meteorological point of view) বৃষ্টির মেঘ ভারত থেকে চীনে দিকে ধাবিত হবে ফলে এদেশের আবহাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়বে।
আগামী দিনে সারা পৃথিবী জুড়ে বর্তমানে প্রচলিত কেমিক্যাল ওষুধগুলির ব্যবহার কমে আসবে, কারণ ওই ওষুধগুলির অনিষ্টকর সাইড এফেক্ট। পরিবর্তে গাছ-গাছালি দিয়ে তৈরি আয়ুর্বেদিক ওষুধের দিন আসবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন এই ভবিতব্য আগাম বুঝতে পেরে সারা দেশ জুড়ে ব্যাপকভাবে নিমগাছ লাগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে গরম ও বালি ভিত্তিক অঞ্চল (arid zone ) –এ চীনে প্রচুর পরিমাণে নিমগাছ লাগানোর কর্মযোজ্ঞ চলেছে।
বিষাক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার ও জৈব কীটনাশক তৈরি ও ব্যবহারে নিম অপরিহার্য। উল্লেখ করা যেতে পারে, সম্প্রতি গুজরাট ও রাজস্থান সরকারের নার্সারিগুলিতে নিমচারা তৈরি করে লাগানো ও বিতরণ করা হচ্ছে। উন্নত জাতের নিমচারা তৈরি ও গবেষণায় দি ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (The Indian Agricultural Research Institute) রাজস্থানের যোধপুরের দি অ্যরিড জোন ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (The Arid Zone Forest Research Institute) ও লখনউ –এর বোটানিকাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (Botanical Research Institute) চেষ্টা করে চলেছে। মুম্বাই –এর নিম ফাউন্ডেশন (Neem Foundation) “Greening India with Neem” –এর কর্মসূচীর বাস্তবায়নে লাগাতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা বলছেন, প্রতি দশজন ভারতবাসীর জন্য একটি করে নিমগাছ হিসেবে প্রয়োজন ১০ কোটি নিমগাছের এবং তা লাগাতেই হবে। এই কর্মসূচীর সাথে স্বনামধন্য অভিনেত্রী জয়া বচ্চনও সক্রিয় অংশগ্রহণ করে চলেছেন।
আমেরিকান ন্যশনাল রিসার্চ কাউন্সিল-এর নিমগাছের ওপর মূল্যবান ও বিস্তৃত গবেষণার (National Research Council, USA, 1992, Neem : A Tree for solving Global Problems) ফলশ্রুতিতে নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রসঙ্গিক তথ্যগুলি উঠে এসেছে:
- আফ্রিকার সোমালিয়া থেকে মরিতানিয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটি দেশকেই সাহারা মরুভূমির আগ্রাসন থেকে রক্ষায় নিমগাছ উপকারী ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছে।
- বাইরে শস্যক্ষেত্র, ভেতরে ঘরবাড়ির পোকামাকড় ও মানুষের শরীরের জ্বর, ব্যথা-বেদনা, চর্মরোগ প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিম রক্ষাকর্তার ভূমিকায়। স্বাভাবিক ভাবেই নিমকে বলা হয় ‘গ্রামীণ ঔষধালয়’ (Village Pharmacy)
- সুদানে মাইলের পর মাইল শস্যক্ষেত্র ও গাছপালায় পঙ্গপাল (locust) – এর ব্যাপক ধ্বংসলীলায় দেখা গেছে নিমগাছগুলি অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিমপাতা পঙ্গপাল খেতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে বিখ্যাত জার্মান পতঙ্গবিজ্ঞানী (entomologist) হেইনরিখ স্কুমুটার (Heinrich Schmutterar) দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করেন। গবেষণালব্ধ তথ্য আফ্রিকার দেশগুলিতে পঙ্গপালের ধ্বংসলীলা ও ব্যাপক শস্য ও ফসলহানি রুখতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
- গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিম কীটপতঙ্গ (insects) তৎক্ষণাৎ মেরে না ফেলে (not outright killers) তাদের জীবন প্রণালী (Life process) –তে পরিবর্তন (metamorphose) এনে দেয়। ফলে কীট পতঙ্গ প্রজননে ও ক্ষতিসাধনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। নিমের দুটি ক্ষমতাধর যৌগ (outstanding components) – সালানিন (Salanin) ও অ্যাজাডিরাকটিন (azadirachtin) এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- আমেরিকায় কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত নতুন তিনটি ওষুধ অ্যাজাটিন (Azatin), টারপ্লেক্স (Turplex) ও অ্যালাইন (Align) খাদ্য সামগ্রী রক্ষায় ই পি এ –এর (EPA, US Environmental Protection Agency) অনুমোদন ও প্রশংসা পেয়েছে।
- নিমগাছের বিষয়ে কিছু সাবধানতাও অবলম্বন করা উচিত। পুকুর ও জলাশয়ের ধারে নিমগাছ থাকলে তার পড়া পাতার বিষাক্ত (toxic) প্রভাবে বিশেষ বিশেষ মাছ মারা যায়। হাইতিতিতে দেখা গেছে, নিম গাছের পাতা পুকুরে পড়ায় তেলাপিয়া (tilapia) মাছ মারা গেছে।
তথ্য সূত্র – শ্রী বিজয় কুমার চন্দ্র
- রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)
Share your comments