খারিফ মরশুমে আমন ধান কাটার দু'সপ্তাহ আগে একই জমিতে আমন ধানের মধ্যে পরবর্তী ফসল হিসাবে খেসারি অথবা মুসুরির বীজ ছিটিয়ে বোনা হয়। এই পদ্ধতি আবার ‘পয়রা’ বা ‘উটেরা’ চাষ নামেও পরিচিত। বর্তমানে রিলে পদ্ধতিতে ধানের পতিত জমিতে তৈলবীজ হিসাবে ‘টোরিয়া’ চাষও করা হচ্ছে।
‘রিলে’/পয়রা চাষের সুবিধা -
১) মাটিতে সঞ্চিত রস ও খাদ্য উপাদান কে কাজে লাগিয়ে বীজের অঙ্কুরোদগম ও প্রাথমিক বৃদ্ধি করা সম্ভব।
২) নতুন করে জমি তৈরি করতে হয় না।
৩) জমির সদ্ব্যবহার হয়ে থাকে।
৪) পয়রা ফসল তুলে পরবর্তী ফসল সহজেই চাষ করা যায়।
৫) পয়রা চাষ পদ্ধতি হলো সহজ-সরল ও লাভজনক।
পতিত জমিতে ডাল শস্য চাষ কেন করবেন?
১) ডাল শস্য চাষে খুব কম উপাদান প্রয়োজন।
২) স্বল্প খরচে লাভজনক চাষ।
৩) দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষজনকে প্রোটিনের যোগান দিয়ে খাদ্য সুরক্ষা প্রদান।
৪) ডাল শস্য চাষের ঘাটতি মেটাতে পারে।
৫) ‘রিলে’ বা ‘পয়রা’ চাষের জন্য উপযুক্ত ফসল।
৬) জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে ধান নির্ভর পরিবেশবান্ধব চাষবাস।
বীজ বোনার সময় -
ধান পরবর্তী পতিত জমিতে ডাল শস্য বীজ বোনার সময় হল মাঝারি ও মাঝারি নবি জাতের আমন ধানের ক্ষেত্রে ফুল আসার ১৫ দিন পর অথবা ধান কেটে নেওয়ার দুই সপ্তাহ আগে ধানগাছ দাঁড়ানো জমিতে অর্থাৎ আশ্বিনের শেষ কার্তিক ও অগ্রহায়ন মাসের মাঝামাঝি।
ধান গাছের গোড়া কোন উচ্চতায় কাটা দরকার?
ধান কাটার সময় গোড়া জমি থেকে ১৫-২০ সেমি উপরে কাটলে ভালো হয়। কারণ ধানের গোড়ার উচ্চতা সঠিক রাখলে ফসলের সংলগ্ন এক অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক দিন পর্যন্ত মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে।
ধানের পতিত জমিতে সম্ভাব্য ফসল (Cultivation on fallow lands) -
১) ছোলা চাষ -
-
স্বল্প দিনে পাকার উপযোগী এবং তাপমাত্রা সংবেদনশীল এমন জাতের নির্বাচন করা। যেমন JG ১৪, JG ১৬ JG ১৩০।
-
ধান-ছোলা এই শস্য পর্যায়ে নবি জাতের ধান অথবা সংকর ধান চাষ করা।
-
ভালো মানের বীজ ব্যবহার করা এবং প্রতি তিন বছর অন্তর বীজ পরিবর্তন করা উচিত।
-
রাইজোবিয়াম @১০ গ্রাম/কেজি বীজ হিসেবে ব্যবহার করা।
-
ধান কাটার অব্যবহিত পরেই মাটিতে থাকা সঞ্চিত রসের সঠিক কার্যকারিতা গ্রহণ করার জন্য জিরো টিলেজ মেশিনের ব্যবহার করা।
-
বীজের হার : ১২ থেকে ১৪ কেজি/বিঘা
মসুরি চাষ -
-
আমন ধানের জমিতে পয়রা ফসল হিসেবে মসুরি খুব ভালোভাবে চাষ করা সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গে আমন ধান মুসুর (পয়রা ফসল) শস্য পর্যায় টি বহুল প্রচলিত ।
-
ছোট দানাযুক্ত এবং উইল ও রস্ট প্রতিরোধক জাত নির্বাচন করা যেমন kLS 218, HUL 57, NM 9, PANT L 639, PANT L 306.
-
৮ কেজি/বিঘা এই বীজের হার মুসুরের প্রয়োজনীয় ফলন দিতে সক্ষম, ধান মুসুর এই শস্য পর্যায়ে (Relay cropping-এ)।
খেসারি চাষ :
-
খেসারির দানাতে বিটা এন অক্সালিন অ্যামিনো অ্যালপিন (ODAP) অথবা বিটা এন এল আলফা বিটা ডাই অ্যামিনো প্রোপিওনিক অ্যাসিড নামক একটি পুষ্টি বিরোধী উপাদান থাকায় ভারতবর্ষে এর চাষে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন জাতে ODAP-এর পরিমাণ থাকে = ০.৯%-১.৫%।
-
খেসারি খরা সহনকারী ফসল এবং বিভিন্ন জলধারণকারী মাটিতে চাষ করা যায়।
-
পয়রা ফসল হিসাবে খেসারির চাষ খুবই উপযুক্ত এবং বহুল প্রচলিত। ছোট দানাযুক্ত জাতগুলি ১২-১৫ কেজি/বিঘা পয়রা ফসল হিসাবে চাষ করা হয়।
-
খেসারি ভারতবর্ষে প্রধানত পয়রা ফসল হিসাবেই চাষ করা হয় এবং একক ফসল হিসাবে খুবই কম চাষ করা হয়।
-
উচ্চ ফলনশীল এবং কম ODAP যুক্ত জাতগুলি হল –
BIO L ২১২ (রতন), প্রতীক, নির্মল, মহাতেওড়া।
অন্যান্য ফসল চাষ –
-
উপকূলবর্তী এলাকাগুলির জন্য ‘পাউডারি মিলডিউ’ প্রতিরোধী কলাইয়ের জাত যেমন LBG ১৭, LBG ৬০২, LBG ৬২৩ এবং মুগের জাত যেমন, পুশা ৯০৭২, NARM ১/২/১৮ –কে নির্বাচিত করা করা।
-
অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা ও উত্তর পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চলে ধানের পতিত জমিতে বাদামের কিছু জাত নির্বাচন করা হয়েছে, যেমন কাদিরি ৪, কাদিরি ৬, TAG ২৪, গ্রিশমা, রোহিণী, ত্রিপুরা, নারায়িনী।
-
বর্তমানে কিছু তৈলবীজ যেমন রেপসিড-সরিষা, ধানের পতিত জমিতে চাষ করা হচ্ছে জিরো টিলেজ পদ্ধতিতে।
আরও পড়ুন - পোকার আক্রমণে পেঁয়াজ ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? জানুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ (Onion Crop Pest Management)
Share your comments