স্বাস্থ্য ও উন্নততর খাদ্য বৈচিত্র্যে মিলেট শস্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে নাইজেরিয়া সম্প্রতি দ্বিতীয় বার্ষিক আন্তর্জাতিক মিলেট ফেস্টিভাল (ফেস্টিমিল) উদযাপন করেছে। এই উত্সবের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ডঃ লল্লা মালিকা ইসোফু (স্মার্ট ফুড অ্যাম্বাসেডর)। তিনি নাইজেরিয়ায় মিলেট শস্যের মূল্য শৃঙ্খলা বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি পরিকাঠামো গঠন করেন। তিনিই প্রথম এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণকারী নারী। প্রেসিডেন্সি এবং অন্যান্য হোটেলের শেফদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্যও স্মার্ট ফুড মাস্টার ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছিল।
নাইজার এবং অন্যান্য সাহেলিয়ান দেশসমূহের বিশিষ্ট গবেষকগণ এবং মিলেট বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে এই ‘ফেস্টিমিল ২০২০’- তে রন্ধনসম্পর্কীয় কর্মশালা, প্রতিযোগিতা এবং মিলেট শস্য সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে, কৃষি ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মিঃ আলবাদে আবুবা বলেছেন, ‘ফেস্টিমিল-এর লক্ষ্য, পরিবারের বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে, অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং সুষম পুষ্টি প্রচার। বৃষ্টিপাত এবং সেচের উপর নির্ভর করে, প্রক্রিয়াজাত করা বিভিন্ন মিলেট-ভিত্তিক পণ্য এবং এর পুষ্টিগুণকে প্রচার করা। আমাদের কৃষকরা যা উত্পাদন করছে, সেই নাইজেরিয়ান পণ্য আমরা গ্রহণ করি।’
স্থানীয় পণ্য প্রচারের জন্য ফেস্টিমিল নাইজার সরকার কর্তৃক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে। ডাঃ ইসোফু, তাতালী আইয়ালি (স্থানীয় ভাষায় পারিবারিক কল্যাণ) ফাউন্ডেশনের সভাপতি বলেছেন, “ফেস্টিমিল আমাদের আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছে যে, আয়রন এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ মিলেটের পুষ্টি বৃদ্ধিতে অনেক অবদান, এটি জনগোষ্ঠীর শারীরিক পুষ্টি পূরণে সহায়তা করে। ফেস্টিমিলের মাধ্যমে, অনেক নাইজেরিয়ান উপলব্ধি করেছে যে মিলেটএকটি স্মার্ট ফুড। এটি আমাদের সাহেলিয়ান দেশগুলির শুষ্ক জলবায়ুতে উৎপন্ন হয় এবং এটি উত্পাদনকারী ও গ্রহণকারী উভয়েরই উপকার করে। সর্বোপরি, এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় প্রথমে সাহেলে মিলেটের বিবর্তন ও অভিযোজন সম্পর্কে মিলেটের ব্রিডার এবং অন্যান্য গবেষকরা তাদের অন্তর্দৃষ্টি সম্পর্কে ব্যক্ত করেছেন -
ডাঃ আহমাদৌ ইসাকা, (পার্ল মিলেট ব্রিডার, ইনস্টিটিউট ন্যাশনাল ডি লা রিচারি অ্যাগ্রোনোমিক ডু নাইজার) বলেন, ‘আমাদের বার্ষিক উত্পাদন বছরে ৩- ৪ মিলিয়ন টনের মধ্যে থাকে। নাইজারে মিলেট আবাদকৃত জমির পরিমাণ ৬৫% এবং দেশে মোট উত্পাদনের ৭৫% অবদান এই শস্যের’।
সেনেগালের, সেনেগালিজ্ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর জেনেটিশিয়ান ডাঃ জিডো আরডো কেইন বলেন, ‘আমরা বাজরে এর উত্পাদন বৃদ্ধির জন্যে বৈচিত্র্যের ভিন্নতা আনতে পারি’।
আলোচনার দ্বিতীয় বিষয় ছিল মিলেট প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারে এর চাহিদাভিত্তিক আলোচনা -
ডাঃ মুস্তফা মুসা (পুষ্টিবিদ, ইরান) বলেন, বাজারে সম্প্রতি ১৫ টিরও বেশি মিলেট ভিত্তিক উদ্ভাবনী পণ্যের বৈচিত্র্য রয়েছে। তদুপরি, এর পুষ্টিকর গুণাবলী আরও সহায়তা করবে বাজারে এর চাহিদা বৃদ্ধিতে।
মিসেস আমিনাতা লিমানে (জুলেট প্রসেসর) বলেন, ‘পূর্বে, মিলেট কেবলমাত্র ঐতিহ্যবাহী খাবারে প্রক্রিয়াজাত করা হত এবং রাস্তায় বিক্রি হত। সম্প্রতি, আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি উদ্ভাবনী মিলেট-ভিত্তিক পণ্য রয়েছে, যার শংসাপত্র রয়েছে এবং বাজারে এর চাহিদাও অনেক। আমরা যদি আমাদের স্থানীয় শস্যের ব্যবহারকে বাড়িয়ে তুলতে পারি, তবে অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে’ ।
স্মার্টফুডের উদ্যোগে জোয়ার এবং বাজরা (মিলেট)-র ব্যবহারের বিভিন্ন উপায় সংক্রান্ত দুটি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজনও এই অনুষ্ঠানে করা হয়েছিল।
তারা এই ইভেন্টে সহায়তার জন্য সিজিআইএআর গবেষণা কার্যক্রম শস্য গ্রন্থাগার এবং ড্রিল্যান্ড সিরিয়ল কে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments