সরিষার প্রধান কয়েকটি রোগ ও তার প্রতিকার

পশ্চিমবঙ্গে তৈলবীজ উৎপাদনকারী শস্যগুলির মধ্যে সরিষা অন্যতম। অন্নান্য ফসলের মতো সরিষাতেও প্রধান কয়েকটি রোগ দেখা যায়।

KJ Staff
KJ Staff

কৃষিজাগনর ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গে তৈলবীজ উৎপাদনকারী শস্যগুলির মধ্যে সরিষা অন্যতম। অন্নান্য ফসলের মতো সরিষাতেও প্রধান কয়েকটি রোগ দেখা যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাতা ধ্বসা, শিকড় ফোলা, সাদা মরচে, ডাউনি মিলডিউ, পাউডার রোগ, কাণ্ড পচা  প্রভৃতি। এরমধ্যে প্রধান রোগ হলো ধ্বসা রোগ। যার ফলে সরষের ফলন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। সময়মতো জমি পরিদর্শন করে আগাম প্রতিকার ব্যবস্থা নিলে অধিকাংশ রোগ দমন করা সম্ভব। নিচে বিভিন্ন প্রকার রোগ, তার লক্ষণ ও তার প্রতিকার ব্যবস্থা সম্বন্ধে আলোচনা করা হল।

. পাতা ধ্বসা রোগ (Leaf blight): প্রথমে পাতার ওপর গোলাকার বাদামী মৃত দাগ দেখা যায়। ঐ দাগ ঘিরে থাকে হলুদ আভা। দাগগুলির আকৃতি বাড়ে এবং কতকগুলি কালো বা বাদামী বর্ণের সমকেন্দ্রিক বৃত্তে পরিনত হয়। কাণ্ড ও শুঁটিতে একই দাগ দেখা যায়। প্রকট আক্রমনে শুঁটি কালো হয়ে যায় এবং পচন ধরে। বীজ গুলি কুঞ্চিত ও ছোট হয়। ২০-৫০ শতাংশ ফলন কমে যেতে পারে। সাধারনত ব্রাসিকি ছত্রাক ধূসর বর্ণের এবং ব্রাসিকলা ছত্রাক কালচে বর্ণের দাগ তৈরি করে। বিনয় ও ঝুমকা জাতের পাতা ধ্বসা বেশি দেখা যায়।রোগটি বীজবাহিত। মেঘলা ও আদ্র আবহাওয়ায় রোগ বাড়ে।

আরও পড়ুনঃ মাছ চাষে তাক লাগাচ্ছে প্রতিবন্ধী যুবক আশিষ মান্না

প্রতিকারঃ

(১) প্রতিরোধী জাত এবং নীরোগ বীজ লাগানো উচিত।

(২) প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি মিশিয়ে বীজ শোধন করা হয়।

(৩) ২ কেজি ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৫০ কেজি জৈব সারের সঙ্গে মিশিয়ে ছায়ায় এক সপ্তাহ জড়ো রেখে বীজ বোনার সময় এক একর জমির মাটিতে মেশানো হয়।

(৪) সময় মতো বীজ বোনা, সুষম সার ব্যবহার ও ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলা কার্যকরী।

(৫) আক্রমন বেশি হলে প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড বা ২.৫ গ্রাম ম্যানকোজেব বা ২ গ্রাম মেটাল্যাক্সিল বা ৩ গ্রাম আইপ্রডায়োন গুলে স্প্রে করা হয়।

. শিকড় ফোলা রোগ (Club root): রোগটি মূলত অম্ল মাটিতে (পি. এইচ ৫.৭-৬.২) হলুদ সর্ষেতে দেখা যায়। বীজ বোনার এক মাস পরে রোগের লক্ষন প্রথম প্রকাশ পায়। গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়। গাছে ফুল আসতে চায় না। যদিও বা দেরিতে ফুল আসে, শুঁটির সংখ্যা, আকৃতি ও শুঁটির ভিতরে দানার সংখ্যা ও আকৃতি হ্রাস পায়। ফুল আসার সময় গাছ দিনে ঝিমিয়ে পরে এবং রাতে স্বাভাবিক হয়ে যায়। আক্রান্ত গাছের শিকড় বিভিন্ন আকৃতির ফোলা অংশে পরিনত হয়। ছত্রাকটি মাটিতে ২-৫ বছর বেঁচে থাকতে পারে। যে কোন সময়ে সর্ষে গাছকে আক্রমন করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ বাজরা দিয়ে তৈরি করুন সুস্বাদু রাবড়ি,শিখে নিন পদ্ধতি

প্রতিকারঃ

(১) প্রতিরোধী হিসাবে কল্যাণ (ডবলু বি বি এন- ১) চাষ করা যায়।

(২) বীজ বোনার এক মাস আগে একর প্রতি ১০ কুইন্টাল চুন মিশিয়ে সেচ দিয়ে মাটির অম্ল কমানো যায়।

(৩) ২ কেজি ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৫০ কেজি জৈব সারের সঙ্গে মিশিয়ে ছায়ায় এক সপ্তাহ জড়ো রেখে বীজ বোনার সময় এক একর জমির মাটিতে মেশানো হয়। এছাড়া একর প্রতি ৬ কুইন্টাল নিম ও মহুয়া খোলের মিশ্রণ (১:১) জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করা যায়।

(৪) রসুন ও লবঙ্গ বাঁটা ৫০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে বীজ শোধন করা যায়।

(৫) আক্রান্ত ক্ষেতে সেচ বন্ধ করে দিতে হবে এবং আক্রান্ত ক্ষেত থেকে নিকাশি জল অন্য ক্ষেতে যাওয়া বন্ধ করতে হবে।

. সাদা মরচে (White rust): ঠাণ্ডা ও আদ্র আবহাওয়ায় জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ধ্বসা রোগ আক্রমনের পরে পরে এ  রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। প্রথমে নিচের দিকের পাতার নীচে সাদাটে হলুদ সামান্য উঁচু ছত্রাক পুসটুল দেখা যায়। পরে একটার সঙ্গে অন্য একটা দাগ মিশে গিয়ে পাতায় পচন ধরে। এই দাগ কাণ্ড ও পুষ্পস্তবকে দেখা যায়। ফুল বিকৃত হয় এবং বন্ধ্যা হয়। ফুলের মঞ্জরি অংশে পাতার মতো বৃদ্ধি দেখা যায়। ফুলের পাপড়ি সবুজ ও পুংদন্ড সবুজ গদার মতো হয়। শিকড় ছাড়া গাছের সমস্ত অংশ আক্রান্ত হয়।

. সাদা মরচে (White rust): ঠাণ্ডা ও আদ্র আবহাওয়ায় জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ধ্বসা রোগ আক্রমনের পরে পরে এ  রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। প্রথমে নিচের দিকের পাতার নীচে সাদাটে হলুদ সামান্য উঁচু ছত্রাক পুসটুল দেখা যায়। পরে একটার সঙ্গে অন্য একটা দাগ মিশে গিয়ে পাতায় পচন ধরে। এই দাগ কাণ্ড ও পুষ্পস্তবকে দেখা যায়। ফুল বিকৃত হয় এবং বন্ধ্যা হয়। ফুলের মঞ্জরি অংশে পাতার মতো বৃদ্ধি দেখা যায়। ফুলের পাপড়ি সবুজ ও পুংদন্ড সবুজ গদার মতো হয়। শিকড় ছাড়া গাছের সমস্ত অংশ আক্রান্ত হয়।

. ডাউনি মিলডিউ (Downy mildew): মাটির উপরে গাছের সকল অংশে এই রোগের লক্ষণ দেখা গেলেও মূলত পাতা ও পুস্পমঞ্জরী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঐ দাগের বিপরীতে পাতার নিচের দিকে সাদা ছত্রাকের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। প্রকট আক্রমণে পুস্পমঞ্জরী বিকৃত হয়। পাকানো এবং সাদা পাউডারে ছেয়ে যায়। আক্রান্ত পুস্পমঞ্জরীতে কোন শুঁটি ধরে না। পাতা আক্রান্ত হলে সেই গাছে ফুল আসতে চায় না বা আসলেও শুঁটি তেমন ধরে না। শুঁটি অপুষ্ট দানা হয়। ঠাণ্ডা ও আদ্র আবহাওয়ায় রাই সর্ষে তে এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়। ফসলের অবশিষ্টাংশ ও আগাছার মধ্যে রোগ জীবাণু আশ্রয় নেয়।

প্রতিকারঃ

(১) প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি মিশিয়ে বীজ শোধন কত্রা হয়।

(২) আক্রান্ত অংশে প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড বা ২.৫ গ্রাম মেটাল্যাক্সিল + ম্যানকোজেব গুলে স্প্রে করা হয়।

তথ্যসুত্র

সন্দীপন গরাই

সেখ মহম্মদ আজিজুর রহমান

শুভাশিষ প্রামানিক

মধুসুধন বেহেরা 

গৌরাঙ্গ কর

Published On: 07 March 2023, 04:31 PM English Summary: Some of the main diseases of mustard and their remedies

Like this article?

Hey! I am KJ Staff . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters