খাদ্য, বস্ত্র, এবং বাসস্থান এই তিন প্রয়োজনীয় উপাদান ছাড়া দৈনন্দিন জীবন থমকে দাঁড়াবে। খাদ্যর জন্য মানুষ কৃষিকার্যের উপর নির্ভরশীল। দিনে দিনে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে। প্রযুক্তিনির্ভর মানুষ খাদ্যের অতিরিক্ত যোগানের জন্য কৃষি নিয়ে শুরু করল পরীক্ষানিরীক্ষা। কৃষিজ ফলনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য নিত্যনতুন কৌশলেরও উদ্ভব ঘটছে। অতিরিক্ত ফসলের জন্য মানুষ রাসায়নিক সার, উন্নত বীজ, কীটনাশক ব্যবহার করে একই জমিতে বারবার ফসল ফলাতে শুরু করেছে বহুদিন। জমির উপর এই অতিরিক্ত চাপের জন্য কৃষিজমির ক্ষমতা ও উর্বরতা কমতে ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। বর্তমানে বহু চাষ জমি এর ফলে কৃষিকার্যের অনুপযুক্ত হয়ে উঠছে।
সুস্থায়ী কৃষিব্যবস্থার লক্ষ্য- (Aim of Sustainable Agriculture System)
সুস্থায়ী কৃষিকার্যের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল, বর্তমান ও ভবিষ্যতের খাদ্যের চাহিদাকে নিশ্চিত করা। ৮০ লক্ষ চাষের জমি প্রত্যেক বছর অনুর্বর হয়ে পড়ে, মানুষের এই অতিরিক্ত চাহিদায়। ফসলে রাসায়নিক সারের প্রয়োগ, আখেরে ফসলের মান কমিয়ে দিচ্ছে ক্রমশ। কীটপতঙ্গের হাত থেকে ফসলকে বাঁচাতে কীটনাশকের ব্যবহার ফসলের খাদ্যগুণ অনেকাংশে হ্রাস করে দেয়। জমিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদার্থ জমির উর্বরতা ক্ষমতাকে ক্রমশ কমাতে থাকে। অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়গে চাষযোগ্য উর্বর জমি হয়ে ওঠে অনুর্বর। অনেক দো-ফসলী অথবা তিনফসলী জমিতে এখন আর একবারের বেশি চাষ করা যাচ্ছে না। ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এখন তাই বৈজ্ঞানিক মহলে রীতিমতন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতে নিয়মিত গবেষণা চলছে। জঙ্গল কাটার মতন কু-প্রথার জন্য কৃষি ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে দিনকে দিন দুর্বল। ঝুম চাষের ফলে উর্বর জমিগুলি নষ্টও হয়ে পড়ছে। পাহাড়ি অঞ্চলে ঝুম চাষ বেশিমাত্রায় লক্ষ্য করা যায়। এই বিশেষ প্রক্রিয়ার ফলে জমির পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়, চাষের উপযোগী আর থাকে না।
সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থার সুফল: (Benefit of Sustainable Farming system)
মাছ চাষ, বন সংরক্ষণের মতন ক্ষেত্রগুলোতে অনেকদিন আগে থেকেই সংরক্ষণ ও সুস্থায়ীত্বকে নিয়ে আসা হয়েছে। দুঃখের বিষয় এটাই, কৃষিব্যবস্থার মতন পদ্ধতি এখন পর্যন্ত সুস্থায়ী রূপ পায়নি। আদিম যুগে জীবিকা ভিত্তিক চাষাবাদ চালু থাকায় উৎপাদন অথবা ফসলের ফলন কম হতো। পরবর্তীকালে সবুজ বিপ্লবের হাত ধরে, বৈজ্ঞানিক উন্নতির সাথে সাথে নিবিড় কৃষি ব্যবস্থায় কৃষি বিপ্লবের সম্ভাবনা এল। এই বিশেষ কৃষি পদ্ধতিতে ফসলের উৎপাদন হচ্ছিল ঠিকই কিন্তু অল্প কিছুদিন পরই বুঝতে পারা গেল এই ব্যবস্থায় ব্যয় হতে চলেছে অনেক। উৎপাদন সাথে তার জন্য যে খরচ হচ্ছিল তাতে কৃষক সমাজের খুবই কম লাভ হতে থাকে। জমির উর্বরতাও কমে যাচ্ছিল জমিতে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন দ্রব্যের জন্য। সুস্থায়ী কৃষি পদ্ধতিকে তাই নাকচ করার কোনও উপায় নেই। বাণিজ্যিক কৃষিকে কোনওভাবেই দূরে ঠেলে দেওয়া যায় না। বাণিজ্যিক কৃষি আছে বলেই দেশের উন্নতি রয়েছে এবং উন্নয়নও হচ্ছে। উৎপাদনশীল ও সুস্থায়ী কৃষির প্রয়োজনীয়তা তাই আজ বেশি বেশি রকমের অনুভব হচ্ছে বৈজ্ঞানিক মহলে।
আরও পড়ুন: Anjeer Farming process: ওষধি ফল আঞ্জির চাষ করে হয়ে উঠুন লাভবান
সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থার সাথে বিশ্বের পথ চলা- (Sustainable Agriculture System and world progress)
বর্তমান বিশ্বের প্রত্যেকটা দেশ সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থাই (Sustainable Agriculture System) একমাত্র বর্তমান ও ভবিষ্যতের ফসলের চাহিদাকে ঠিক রাখতে পারে। উন্নত দেশগুলির পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও তাই সুস্থায়ী কৃষিব্যবস্থার জয়জয়কার শুরু হয়ে গেছে। মানব সভ্যতার বিকাশে সুস্থায়ী কৃষি পদ্ধতিই যে একমাত্র বিস্তৃত ও উন্নত পথ, একথা অস্বীকারের আজ কোনও জায়গায় নেই।
আরও পড়ুন: Quinoa cultivation: কিনোয়া চাষে অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ বদলাচ্ছে চাষিভাইদের
Share your comments