১৯৫০ এর দশকে, স্বাধীন ভারতের চরম খাদ্য সংকট দেখা দেয়। সেই সময় খাদ্য সংকট শুধুমাত্র ভারতে সীমাবদ্ধ ছিল না। সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার (দক্ষিণ আমেরিকার) অনেক দেশেই চলছিল খাদ্য সংকট। তাই বিশ্ব বিজ্ঞানী মহলে আর্জি গেল – নতুন ধরণের উচ্চ ফলনশীল জাত প্রয়োজন। চেষ্টা শুরু হল, কিন্তু প্রচলিত লম্বা জাত অবলম্বনে খাটো জাতের ফসল সৃষ্টি করার ব্যাপারটি সহজ ছিল না। অবশেষে অনেক বাঁধা পেরিয়ে সৃষ্টি হল সেই স্বপ্নের জাত। প্রথম পর্বের একরকম জাতের একটি ধান হল আই আর-৮, এরপর থেকে একে একে সৃষ্টি হল আরো জাত। নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত এল। সার প্রয়োগের মাত্রা বেড়ে গেল, ফলন বেড়ে গেল অনেক। দেশে খাদ্য সংকট আর রইল না। কৃষিতে এক বিপ্লব ঘটে যায়, যার নামকরণ করা হয়, সবুজ বিপ্লব'।
বিগত শতাব্দীর সত্তরের দশকের প্রথম ভাগে ভারতে সবুজ বিপ্লব ঘটে। এই বিপ্লবের কিছু সুফল দেখা যায় ভারতে।

সবুজ বিপ্লবের সুফল -
ক) সুফল – সবুজ বিপ্লবের সুফল প্রধানত দুটি, কিন্তু এর গুরুত্ব অপরিসীম।
১) সবুজ বিপ্লবের প্রধান এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুফল হল ভারতের খাদ্য সংকট-এর অবসান হওয়া। স্বাধীনতার পর ভারত যখন চরম খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, তখন দেশে লোকসংখ্যা ছিল হয়ত ৪০ কোটি বা তার কাছাকাছি। বর্তমানে লোকসংখ্যা প্রায় তিনগুণ, কিন্তু দেশে এখনও খাদ্য সংকট বলতে যা বোঝায়, তা নেই।
২) সবুজ বিপ্লবের ফলে আমরা ধানের যে নতুন জাত পেলাম, তা হল সময়বদ্ধ শ্রেণীর। বীজ ফেলা থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তে ধান কাটা যায়। এই জাতের ধানের তিনটি শ্রেণী আছে –
স্বল্পমেয়াদী – বীজ ফেলা থেকে ধান কাটা পর্যন্ত সময় লাগে ১০০-১২০ দিন।
মধ্যমেয়াদী - বীজ ফেলা থেকে ধান কাটা পর্যন্ত সময় লাগে ১২০-১৩০ দিন।
দীর্ঘমেয়াদি - বীজ ফেলা থেকে ধান কাটা পর্যন্ত সময় লাগে ১৩০-১৬০ দিন।
রবিখন্দের জন্যে কখন জমি খালি করতে হবে, সেই সময়টি মাথায় রেখে তিনটি শ্রেণী থেকে যে কোন জাত বেছে নিয়ে তার সময়কাল হিসাব করে পিছিয়ে এসে বীজতলাতে বীজ ফেললে নির্দিষ্ট সময়েই জমি ফাঁকা হবে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা স্মরণে রাখতে হবে – রবিখন্দে অধিকাংশ ফসলের বীজ বপনের আদর্শ সময় হল কার্ত্তিক মাস। বপনে বিলম্ব হলে প্রত্যাশা মত ফলন পাওয়া যাবে না।

বর্তমানের জনপ্রিয় দীর্ঘমেয়াদী জাতের পরিবর্তনের কথাও ভাবতে হবে। একেবারে নয়, বিকল্প জাত দেখে বুঝে নিয়ে তারপর পর্যায়ক্রমে পুরানো জাতকে ছাড়তে হবে। তাতে বিঘা প্রতি দু মণ ধান কম হলেও ক্ষতি নেই। দীর্ঘমেয়াদী শ্রেণীর ধান কেটে চটজলদি জমি তৈরি করতে সমস্যা হয়। সময় মতো রবিশস্যের বীজ বপন হয় না, ফলন মার খায়। কাজেই, মধ্যমেয়াদী শ্রেণী থেকে জাত বেছে নিতে হবে।
আগে যে ধরণের ধানের জাত ছিল, তা হলের ‘ঋতুবন্ধ’ শ্রেণীর। অর্থাৎ বীজ যখনই বপন করা হোক না কেন, এই ধানে কার্ত্তিক মাসের মাঝামাঝি শীষ বের হত এবং অঘ্রাণ মাসের মাঝামাঝি পাকত। ধান কাটতে কাটতে পৌষ মাস এসে যেত। তখন রবিশস্য করার মত কোনও সময় থাকত না। এর পাশে এখন নানা রকমের রবিশস্যের চাষ করা যাচ্ছে। প্রকৃত প্রস্তাবে এখন এসেছে প্রকৃত শস্য বৈচিত্র্য। জমিতে এখন এক বা দুই ফসলের পরিবর্তে বহুফসলি চাষ ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
তথ্য সংগ্রহকারক – অমরজ্যোতি রায়
Share your comments