স্যার জগদীশ চন্দ্র বোস হলেন প্রথম বিখ্যাত ভারতীয় ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে প্রকাশিত করেন যে এই পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়েই উভয়ের পরিপূরক। তিনি হাতে কলমে প্রমাণিত করেন যে প্রাণীদের মতো উদ্ভিদ জগৎ বিবিধ উদ্দীপনা যেমন তাপ, শৈত, আলো, শব্দ ইত্যাদি বহিঃউদ্দীপনায় সাড়া দেয়। জগদীশ চন্দ্র বোস এই বিষয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য একটি যন্ত্রও তৈরি করেন যার নাম ক্রেস্কোগ্রাফ্। এই বিশেষ যন্ত্রটি প্রতিমূহূর্তে একটি উদ্ভিদের উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়া ও তার সেই উদ্দীপনায় প্রতিক্রিয়াকে নজরান্দাজ করতে সক্ষম। তাছাড়া এই যন্ত্রের মাধ্যমে উদ্ভিদ কলার অন্তর্গত বিবিধ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোশ সমূহের গতিশীলতাকে তার প্রকৃত আয়তনের চেয়ে প্রায় ১০০০০ গুণ বেশী আয়তনে প্রকাশ করতে সক্ষম, এবং এক্ষেত্রে দেখা গেছে উদ্ভিদ ও প্রাণী কোশের উদ্দীপনাতাড়িত বিচলনের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।
তুরস্কের ইজ্মার টেকনোলজি ইন্সটিটিউট ডিপার্টমেন্ট অফ্ মলিকিউলার বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স একটি বিশেষ প্রজাতির টমাটোকে উন্নীত করেছে যা কিনা কোনো বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন খরা ও লবণ ইত্যাদি যে কোনো অবস্থাতেই জন্মাতে ও বেড়ে উঠতে সক্ষম এবং তার স্বাদও হয় অত্যন্ত সুন্দর এবং এই ধরণের বিরূপ পরিবেশে সাধারণত এই টমাটো প্রজাতিটি স্বাভাবিক জলবায়ুর তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশের বেশী উৎপাদিত হতে পারে।
প্রতিকূল পরিবেশ বলতে আমরা যা বুঝি সেগুলি হলো মাটির লোনা ভাব, অনাবৃষ্টি, প্রখর তাপমাত্রা ইত্যাদি যার ফলে জীবের জৈব রাসায়নিক ও ভৌত রাসায়নিক অবস্থাগুলি বিশেষ ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। আসলে এই বিষয়গুলি এমন কিছু কারণ যা জীবজগতের বিপাক ও শারীরবৃত্তীয় বিবিধ কার্যকে প্রভাবিত করে। এই সমস্ত প্রাকৃতিক প্রভাব গুলিকে কাটানোর জন্য এক বিশেষ প্রজাতির প্রতিকূলতা প্রতিরোধী জিন্ অথবা কিছু প্রকারের নিম্ন-যৌগিক রাসায়নিক পদার্থই এই ধরণের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। এই প্রতিকূলতা প্রতিরোধী টমাটো প্রজাতিটিকে “Upgraded” নামক একটি প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নীত করা হয়েছে। যে বিশেষ বীজটিকে এখানে তৈরি করা হয়েছে সেটি হল আসলে বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির জিনের ক্লাস্টার ও কিছু প্রতিকূলতা প্রতিরোধী উৎসেচকের একটি সম্মিলিত রূপ যার ফলে এই বীজের সহনশীলতা পরিমাণ অনেকটাই বেশী।
টমেটো হলো একটি বহুল উৎপাদিত ফসল যা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উৎপাদিত হয়ে থাকে। টমাটোর অ্যান্তি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্তি-ক্যান্সার খাদ্যগুণ থাকার কারণে খাদ্য হিসাবে সারা বিশ্বে এর ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাই হোক, এই বিশেষ প্রজাতির টমাটোটি সারা বিশ্বে এর প্রতিকূলতা প্রতিরোধী ক্ষমতার কারণে সমাদৃত হয়েছে, কারণ এই মূহূর্তে প্রতিকূলতা সহনশীল জাতের ফসল পৃথিবীতে খুবই কম রয়েছে। যদিও এই বিষয়টিতে এখনো কিছু জিনগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি রয়েছে। অবশ্য কোনো উদ্ভিদের জিনগত চরিত্রের পরিবর্তন ঘটাতে হলে সেই উদ্ভিদ সম্পর্কীত বিশেষ জ্ঞান থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তুরস্কে কৃষকরা এইধরণের ফসল চাষ করছে আজ প্রায় বছর তিনেক হলো। তাদের উৎপাদিত টমাটো সারা বিশ্বের শংসাপত্র পেয়েছে। গবেষকদের মতে এই মূহুর্তে তুরস্কের কৃষি অবদান এই দেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্বকে অনেক বেশী প্রভাবিত করবে।
তুরস্কের কৃষিতে জলসেচ ও সারপ্রয়োগ এই দেশের কৃষিজমির লবণের ঘনত্বকে অনেকটাই কমাতে পেরেছে। তাই গবেষকরা উন্নয়নশীল চাষবাস শুরুর উপড় আস্থা রেখেছেন। কোনো কারণে যদি জলসেচের বা প্রযুক্ত সারের মাত্রা অনেকটা বেড়েও যায় সেক্ষেত্রে এই প্রজাতির টমাটোর চাষের ব্যাপারকে ব্যাহত করতে পারে না এবং এই প্রজাতির ক্ষেত্রে খানিকটা উলটো প্রভাব পড়ে। অধিক সার বা জলসেচ এক্ষেত্রে টমাটোর স্বাদ কমানোর পরিবর্তে একে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। যেখানে টমাটোর স্বাভাবিক জাতের উৎপাদন হয় প্রতি ১০০০০ বর্গফুটে ১২ টন, সেখানে এই বিশেষ প্রজাতির ফলন হয় ওই একই পরিমাণ জমিতে ১৭ টন।
- প্রদীপ পাল
Share your comments