আলু চাষের ৪০% খরচ বীজ কন্দ কেনার পেছনে হয়। আবার এই প্রচুর পরিমাণ বীজ কন্দ পরিবহনের সমস্যাও অনেক। অথচ সঠিক গুণমানের সংশিত বীজকন্দ সংগ্রহ করা যেমন সমস্যা তেমনই বাইরের থেকে দেখে বীজকন্দ নীরোগ কিনা সেটাও বোঝা খুব মুশকিলের। তাই সবসময় আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য প্রকৃত আলুবীজ (ট্রু পটাটো সিড / টি পি এস) লাগিয়ে বীজকন্দ তৈরী করে নেওয়া যায়। এভাবে তৈরী বীজকন্দ নীরোগ হয়, কম বীজকন্দ লাগে, চাষের খরচ কমে ও ফলন বৃদ্ধি পায়।
প্রকৃত আলু বীজ (টি পি এস) দেখতে অনেকটা বেগুনের বীজের মত। টি পি এস এর মাধ্যমে দু-ভাবে আলু চাষ করা যায়।
- সরাসরি বীজ বুনে পরবর্তী বছরের জন্য বীজকন্দ উৎপাদন – সমতল এলাকাতে কার্তিক মাসে (নভেম্বর) টি পি এস বোনা হয়। এর জন্য ঝুরঝুরে বা মিহি করে মাটি তৈরি করে নিতে হয়। মাটির মধ্যে উই , ঘুরঘুরে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। মাটিতে রস না থাকলে ঝারি দিয়ে বীজতলা ভিজিয়ে দিতে হয়। বীজ তলায় কখনোই সরাসরি জল ঢালা যাবে না। প্রতি ১০০ বর্গমিটার বীজতলায় ২৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ তলায় আঙ্গুল দিয়ে ১০ সেমি অম্তর নালা টেনে ১০ সেমি অন্তর ২-৩ টি বীজ পুঁততে হয় ও ০.৫ সেমি পুরু করে চালুনী চালা গোবর সার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। টি পি এস বোনার ৫-১০ দিন পর চারা বের হয়। এই সময় রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণে বিশেষত ধ্বসা ও শোষক পোকার ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে। বীজ বোনার ৫ সপ্তাহ পরে দুটি বীজতলার মাঝের ফাঁকা অংশ থেকে মাটি নিয়ে চারার গোড়ায় মাটি ধরানো হয়। ৪ সপ্তাহ পর থেকে ১ বার করে মোট ৪ বার ইউরিয়া স্প্রে করতে হয়। চারার বয়স ৬ মাস হলে নালার মাধ্যমে সেচ দেওয়া হয়। মোট ৫ – ৬ টি সেচ দিতে হয়। বীজ বোনার ৯০ – ১০০ দিনের মধ্যে বীজ কন্দ তৈরি হয়। এই সময় মাটির ওপরের সবুজ অংশ কান্ড থেকে কেটে সরিয়ে ফেলতে হয়। এর পর মাটির নিচে ১০ – ১৫ দিন রেখে দিলে খোসা শক্ত হবে । এরপর আলু তুলে ছায়াযুক্ত মেঝেতে ৮-১০ দিন বিছিয়ে রেখে দিতে হবে। এরপর ৩ গ্রাম বোরিক অ্যসিড প্রতি লিটার জলে গুলে বীজকন্দ ঐ দ্রবণে ২০ মিনিট ভিজিয়ৈ রাখতে হবে। এইভাবে প্রতি ১০০ বর্গ মিটার বীজতলা থেকে ৪০.০০০ – ৫০,০০০ বীজকন্দ পাওয়া যাবে।
- বীজতলায় বীজ থেকে তৈরি চারা মূল জমিতে রোয়া করে আলুচাষ – এক্ষেত্রে ৮০ বর্গমিটার বীজতলায় ৮০ গ্রাম টি পি এস বুনে চারা তৈরী করে এক একর জমিতে রোয়া করা হয়। কার্তিক মাসের মধ্য বীজ বোনার কাজ সম্পন্ন করতে হয়। বীজতলায় ৫ সেমি অন্তর নালা কেটে ১-২ সেমি অন্তর ১-২ টি করে টি পি এস বোনা হয়। ১৪ -১৮ দিন পর ঝারির সাহায্যে ১ শতাংশ ইউরিয়া স্প্রে করা হয়। ৪ সপ্তাহ পর মূল জমিতে চারা রোপন করতে হয়। চারা তোলার দিন বীজতলায় সেচ দিয়ে একটু বেলা হলে খুরপির সাহায্যে চারা তুলে মূল জমির নালায় ১৫ সেমি অন্তর ২ – ৩ সেমি গভীরে রোপণ করতে হবে। রোপণের পর ঝারির সাহায্যে সেচ দিতে হবে তার পর নালায় জল ঢুকিয়ে ছিটান দিতে হবে। ৪টি ছিটান সেচ দেওয়ার পর ভেলি বেঁধে স্বাভাবিক সেচ দেওয়া হয়। ১০-২০ দিন পরে ৬ কেজি নাইট্রোজেন ও ৩৩৫-৪০ দিন পরে ২৪ কেজি নাইটট্রোজেন প্রয়োগ করতে হবে। ৩ ও ৬ সপ্তাহে ০.৫ গ্রাম চিলেটেড জিঙ্ক ও ১ গ্রাম অক্টোবোরোট প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। চারা রোয়ার ৮০ দিন পর আলুগাছ মাটির লেভেল বরাবর কেটে ফেলতে হয় ও ৭ – ১০ দিন পর আলু তুলতে হয়। আলু তেলার ১৫ দিন আগে সেচ বন্ধ করতে হয়। ১০ – ৪০ গ্রাম ওজনের আলু বীজকন্দ হিসেবে রেখে অবশিষ্ট অলু বিক্রি মজুত বা খাবার কাজে ব্যবহার করতে হয়। এইভাবে একর প্রতি ৮৮ – ১০ কুইন্টাল ফলন পাওয়া যেতে পারে।
- রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)
Share your comments