বহু প্রাচীন কাল থেকেই হলুদ নামক মসলাটি দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য পূর্বের দেশ গুলিতে ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।তবে এটি কেবল মাত্র মসলা হিসেবে নয় মানুষে বিভিন্ন দৈনন্দিন অসুখ থেকে শুরু করে রূপচর্চা রক্ষার কাজেও হলুদের ব্যবহার সবার আগে।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই যে বর্তমানে জৈব পদ্ধতিতে ফসল সুরক্ষার অন্যতম অস্ত্র এই হলুদ।কৃষকেরা যেভাবে ফসলের বীজ সুরক্ষার জন্য "ম্যাংগোজেব" জাতীয় বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে থাকেন, সেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করতে পারে হলুদ।ছত্রাক জনিত যে কোনো প্রকার রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হলুদের মধ্যে রয়েছে।আজ আমরা যখন পানীয় জল পান করি সর্বদা চেষ্টা করি বিশুদ্ধ পানীয় জল খেতে অথচ যখন ফসলের মধ্যে যে জলসেচ দি সেটা যে বিশুদ্ধ হওয়ার দরকার সেটা আজকাল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কৃষিগবেষকেরা স্বীকার করছেন এবং এটির আশ্চর্য সমাধান লুকিয়ে আছে এই হলুদের মধ্যে।আমাদের দেশের কিছু প্রান্তের কৃষক ধান চাষের জল সেচে এটি ব্যবহার করে উপকার পেয়েছেন।মাছ চাষের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হতে পারে এ সম্ভাবনা আছে।আসলে হলুদের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমান ফাইবার, পটাশিয়াম,ভিটামিন বি-৬,কারকিউমিন,ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন-সি এছাড়া এন্টি ব্যাকটেরিয়াল,এন্টি অক্সিডেন্ট, এন্টি ভাইরাল ও এন্টি ইনফ্লেমেটোরি গুন যা "অলৌকিক ভেজষ" হিসেবে খ্যাতি এনে দিয়েছে।
এবার আসুন এই হলুদ সম্পর্কে একটু জানি:
হলুদ বা হলদি (বৈজ্ঞানিক নামঃ Curcuma longa) হলো হলুদ গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক প্রকারের মসলা। ভারত, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রান্নায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি আদা পরিবারের (Zingiberaceae) অন্তর্গত একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ।
হলুদ গাছের আদি উৎস দক্ষিণ এশিয়া। এটি ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে জন্মে থাকে। হলুদ গাছের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের দরকার হয়। বছরে সাধারণত একবার হলুদ গাছের শিকড় তোলা হয়। পরের বছর পুরানো শিকড় থেকে নতুন গাছ গজায়।
হলুদ গাছের শিকড়কে কয়েক ঘণ্টা সিদ্ধ করা হয়, তার পর গরম চুলায় শুকানো হয়। এরপর এই শিকড়কে চূর্ণ করে গাঢ় হলুদ বর্ণের গুঁড়া পাওয়া যায়।এই হলুদ গুঁড়া দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশের খাদ্য প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়। তবে ঐতিহ্যগতভাবে এই শিকড় ভালোভাবে ধৌতকরণের পর শিল-পাটায় জল সহযোগে বেটে নিয়ে হলুদের লেই তৈরি করা হয় যা সরাসরি রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
হলুদ নামের উৎস আজও অজানা। মহাজাতি বা Genus নাম Curcuma হলুদ নামটা আরবি থেকে আসে। হলুদ হাজার হাজার বছর ধরে এশিয়া মহাদেশে রান্না শিল্পে ব্যবহার হয়ে আসছে। অন্য দিকে হলুদ একটি ঔষধি গাছ হিসেবে সুপরিচিত।
হলুদ একটি লতাপাতা সংক্রান্ত বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা ৬০ -৯০ সেমি উঁচু এবং এটা পাতা বড় আয়তাকার হয়ে থাকে। এবং উদ্ভিদটি এক মিটার লম্বা হয়। এটার গাছ বেড়ে উঠার জন্য ২০-৩০ ডিগ্রী তাপমাত্রা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত দরকার।হলুদ ফুলের রং হলুদ ও সাদা হয় এবং ৩০ -৪০ সেমি লম্বা এবং ৮ -১২ সেমি চওড়া। পুষ্পবিন্যাস এর দৈর্ঘ্যে ১০ -১৫ সেমি ।
তথ্য : উইকি
- অমরজ্যোতি রায়
Share your comments