
আন্তর্জাতিক ধান্য গবেষণা কেন্দ্র (IRRI) এবং ফিলিপাইন্স ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত লিফ কালার চার্ট বা এল সি সি সাধারণ কৃষকদের জন্য তৈরি একটি সহজলভ্য, সস্তা-সরল, প্লাস্টিকের স্কেলের ন্যায় যন্ত্র যা ব্যবহার করে কৃষকরা ধান, গম ও ভুট্টা ক্ষেতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগের প্রয়োজন আছে কি নেই সহজেই বুঝতে পারবেন।
লিফ কালার চার্ট বা এল সি সি একটি খুবই সাধারণ যন্ত্র, যার সাহায্যে ধান গাছে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগের সময় নির্ধারণ করা যায়। এটি ব্যবহার করে কৃষকরা সহজেই বুঝতে পারবেন ধান জমিতে কখন নাইট্রোজেন সার প্রয়োগের প্রয়োজন আছে। এটি বিশেষ ধরনের প্লাস্টিকের তৈরি একটি ইঞ্চি স্কেল। স্কেলের প্রতিটি ইঞ্চির রং বিভিন্ন। এই রং ধান গাছের পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ মেপে তৈরি করা হয়। স্কেলের রঙের সাথে ধান গাছের পাতার গুছির রঙ মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগের প্রয়োজন আছে কি নেই। স্কেলটির প্রথম ইঞ্চির রং হালকা হলদে-সবুজ এবং এর নম্বর ২। এই রং পরিবর্তন হতে হতে গাঢ় সবুজ হয়েছে যার নম্বর ৫।
নাইট্রোজেন সার মাটির নীচে চুঁইয়ে বেশি নষ্ট হয় এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে নাইট্রোজেন ব্যবহার না করলে রোগ-পোকার আক্রমণও বেশি দেখা যায়। এল সি সির মাধ্যমে ধান জমিতে প্রয়োজনভিত্তিক নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করা হয়। এল সি সি ব্যবহারের জন্য ধান রোয়ার সময় সব ফসফেট ও পটাশ ব্যবহার করা হলেও নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করা যায় না। আমন ধান রোয়ার ১৫ দিন পর এবং বোর ধান রোয়ার ২০ দিন পর মাঠে এল সি সি স্কেলটি নিয়ে পরীক্ষা শুরু করা হয়। মাঠে সমান ভাবে বেড়ে উঠেছে এমন জায়গা থেকে ২০ টি গুছি বেছে নেওয়া হয়। একটি গুছিতে সবচেয়ে ওপরের পুরোপুরি বের হয়ে যাওয়া পাতা বেছে নেওয়া হয়। ওই পাতার মাঝের অংশের পাশে এল সি সির রং মেলানো হয়। এল সি সির যে রঙের সাথে পাতার রং মিলবে, তার নম্বর লিখে নেওয়া হয়। যদি পাতার রং ৩ নম্বর ও ৪ নম্বরের মাঝামাঝি হয়, তা হলে তার নম্বর ৩.৫ লেখা হয়। প্রতি ১০ দিন অন্তর এভাবে মাপ নিয়ে নাইট্রোজেন প্রয়োগ করা হয়। যদি দেখা যায় ১০ দিনের মাথায় পরীক্ষায় সার প্রয়োগের দরকার পড়ছে না, তাহলে পরবর্তী চাপান সার হিসাবে নাইট্রোজেন ব্যবহারের জন্য এল সিসি একইভাবে ব্যবহার করা যায়। গম ও ভুট্টা চাষের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। দেখা গেছে এল সি সির ব্যবহারের ফলে ২৫% নাইট্রোজেন কম লাগে। এর ব্যবহারে ধান, গম ও ভুট্টার শীষে পুষ্ট দানার সংখ্যা বেশী হয় এবং রোগ পোকার আক্রমণও অনেক কম হয়।
লিফ কালার চার্ট বা এল সি সি ব্যবহারের উপকারীতা –
- বর্তমানে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও ইউরিয়া ব্যবহারের ফলে ভূমির প্রকৃতি নিদারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমিত ইউরিয়া ব্যবহারে চাষির খরচ বাঁচে।
- ফসল উৎপাদনের মান উৎকৃষ্ট হয়।
- সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমানে ইউরিয়াসার প্রয়োগ করা যায়।
- সরকারের নাইট্রোজেন সারের ভর্তুকির অর্থের সাশ্রয় হয়, যা অন্য ক্ষেত্রে চাষির কাজে লাগানো যাবে।
- প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় বা পরিমিত নাইট্রোজেন সার ব্যবহারের ফলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমান কমে যা পরিবেশ দূষণ কমায়।
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)
Share your comments