কৃষিজাগরন ডেস্কঃ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে কৃষি মৌসুমকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। মৌসুম তিনটি হলো- খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি। এই নিবন্ধে মাস অনুযায়ী ফসল চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
মাঘ(মধ্য জানুয়ারি – মধ্য ফেব্রুয়ারি):
আলু, পেঁয়াজ, রসুনের গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া, সেচ, সার প্রয়োগ, টমেটোর ডাল ও ফল ছাঁটা, মধ্যম ও নাবী রবি সবজির সেচ, সার, গোড়া বাঁধা, মাচা দেওয়া এবং আগাম খরিফ-১ সবজির বীজতলা তৈরি বা মাদা তৈরি বা বীজ বপন করতে হবে। বীজতলায় চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশি সচেতন হতে হবে। ফল গাছের পোকামাকড়, রোগাবালাই দমন ও অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে।
ফাল্গুন(মধ্য ফেব্রুয়ারি – মধ্য মার্চ):
নাবী খরিফ-১ সবজির বীজতলা তৈরি, মাদা তৈরি, বীজ বপন, ঢেঁড়স, ডাঁটা লালশাকের বীজ বপন করতে হবে। আগাম খরিফ-১ সবজির চারা উৎপাদন, মূল জমি তৈরি, সার প্রয়োগ ও চারা রোপণ করতে হবে। আলু, মিষ্টি আলু সংগ্রহ, রবি সবজির বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাগানের অন্যান্য ফসলের পরিচর্যা করতে হবে। আলু সংরক্ষণে বেশি যত্নবান হতে হবে। এক্ষেত্রে জমিতে আলু গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে সমুদয় গাছ কেটে গর্তে আবর্জনা সার তৈরি করতে হবে।
চৈত্র(মধ্য মার্চ – মধ্য এপ্রিল):
গ্রীষ্মকালীন বেগুন, টমেটো, মরিচের বীজ বপন/চারা রোপণ করতে হবে। নাবী জাতের বীজতলা তৈরি ও বীজ বপন করতে হবে। যেসব সবজির চারা তৈরি হয়েছে সেগুলো মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। সবজি ক্ষেতের আগাছা দমন, সেচ ও সার প্রয়োগ, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন করতে হবে। নাবী রবি সবজি উঠানো, বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি হলে ফলের গুটি/কড়া ঝরে যায়। তাই প্রয়োজনীয় সেচ প্রদানসহ পোকামাকড় এবং রোগবালাই দমনের ব্যবস্থা অতি সত্তর নিতে হবে।
আরও পড়ুন - Composting Cow Dung: কিভাবে গোবর থেকে জৈব সার বানাবেন? শিখে নিন পদ্ধতি
বৈশাখ(মধ্য এপ্রিল–মধ্য মে):
লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এবং গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা রোপণ করতে হবে। মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় দমন ও সেচ সেচ প্রদান করতে হবে। খরিফ-১ মৌসুমের সবজির বীজ বপন, চারা রোপণ করতে হবে। ডাঁটা, পুঁইশাক, লালশাক, বরবটি ফসল সংগ্রহ করতে হবে। খরিফ-২ সবজির বেড প্রস্তুত ও চারা তৈরি করতে হবে।
জ্যৈষ্ঠ(মধ্য মে–মধ্য জুন):
আগে বীজতলায় বপনকৃত খরিফ-২ এর সবজির চারা রোপণ, সেচ ও সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন পরিচর্যা করতে হবে। সজিনা সংগ্রহ এবং গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা রোপণ ও পরিচর্যা করতে হবে। ঝিঙা, চিচিংগা,
ধুন্দুল, পটল, কাঁকরোল সংগ্রহ ও পোকামাকড় দমন নিতে হবে। নাবী কুমড়া জাতীয় ফসলের মাচা তৈরি, সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হবে।
আষাঢ়(মধ্য জুন–মধ্য জুলাই):
গ্রীষ্মকালীন বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচের পরিচর্যা, শিমের বীজ বপন, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন করতে হবে। আগে লাগানো বেগুন, টমেটো ও ঢেঁড়সের বাগান থেকে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। খরিফ-২ সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যা, সেচ, সার প্রয়োগ করতে হবে। ফলসহ ওষুধি গাছের চারা/কলম রোপণ, খুঁটি দিয়ে চারা বেঁধে দেওয়া, খাঁচা/বেড়া দেওয়াসহ ফল গাছে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
শ্রাবণ(মধ্যজুলাই–মধ্যআগস্ট):
আগাম রবি সবজি যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো, বেগুনের বীজতলা তৈরি এবং বীজ বপন করা শুরু করতে হবে। খরিফ-২ এর সবজি উঠানো ও পোকামাকড় দমন করতে হবে। শিমের বীজ বপন, লালশাক ও পালংশাকের বীজ বপন করতে হবে। রোপণকৃত ফলের চারার পরিচর্যা, উন্নত চারা/কলম রোপণ, খুঁটি দেওয়া, খাঁচি বা বেড়া দেওয়া, ফল সংগ্রহ, বাজারজাতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ/ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
ভাদ্র(মধ্য আগস্ট–মধ্য সেপ্টেম্বর):
অধিকাংশ খরিফ-২ সবজির সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও খরিফ-১ এর সবজি বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আগাম রবি সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, সবুজ ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, লাউের জমি তৈরি, চারা রোপণ ও সার প্রয়োগ করতে হবে।
আশ্বিন(মধ্য সেপ্টেম্বর – মধ্য অক্টোবর):
আগাম রবি সবজির চারা রোপণ, চারার যত্ন, সেচ, সার প্রয়োগ, বালাই দমন, নাবী রবি সবজির বীজতলা তৈরি, বীজ বপন, আগাম টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সবুজ ফুলকপি, ওলকপির আগাছা দমন ও গোড়া বেঁধে দিতে হবে। শিম, লাউ, বরবটির মাচা তৈরি ও পরিচর্যা করতে হবে। রসুন, পেঁয়াজের বীজ বপন, আলু লাগানো। ফল গাছের গোড়ায় মাটি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার ও সার প্রয়োগ করতে হবে।
কার্তিক(মধ্য অক্টোবর – মধ্য নভেম্বর):
আলুর কেইল বাঁধা এবং আগাম রবি সবজির পরিচর্যা ও সংগ্রহ করতে হবে। মধ্যম রবি সবজি পরিচর্যা, সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান করতে হবে। নাবী রবি সবজির চারা উৎপাদন, জমি তৈরি/চারা লাগান ব্যবস্থা করতে হবে। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপির গোড়া বাঁধা/ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। মরিচের বীজ বপন/চারা রোপণ করতে হবে। ফল গাছের পরিচর্যা,সার প্রয়োগ না করে থাকলে সার ব্যবহার ও মালচিং করে মাটিতে রস সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
অগ্রহায়ণ(মধ্য নভেম্বর – মধ্য ডিসেম্বর):
মিষ্টি আলুর লতা রোপণ, পূর্বে রোপণকৃত লতার পরিচর্যা, পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচের চারা রোপণ, আলুর জমিতে সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান করতে হবে। অন্যান্য রবি ফসল যেমনঃ ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন ওলকপি, শালগমের চারার যত্ন, সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান, আগাছা পরিষ্কার, সবজি সংগ্রহ, ফল গাছের মালচিং এবং পরিমিত সার প্রয়োগ করতে হবে।
পৌষ(মধ্য ডিসেম্বর – মধ্য জানুয়ারি):
আগাম ও মধ্যম রবি সবজির পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন, সবজি সংগ্রহ করতে হবে। নাবী রবি সবজির পরিচর্যা, ফল গাছের পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন এবং অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে।
আরও পড়ুন -Monsoon business ideas: বর্ষায় এই কয়েকটি ব্যাবসায় আপনিও হতে পারেন লাভবান
Share your comments