জৈব পদার্থের পচন বা গাঁজনের ফলে যে সার তৈরি হয় তাই হল জৈব সার। সাধারনত গাছের লতাপাতা,গৃহস্থলীর আবর্জনা,ফুল,ফল,প্রাণির দেহ ও মল-মূত্র ইত্যাদি পচন বা গাঁজানের মাধ্যমে কম্পোস্ট বা জৈব সার তৈর হয়। জৈব সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ মাটির জৈব রাসায়নিক গুন বৃদ্ধি করে।যেমন-খামারজাত সার,মুরগির বিষ্ঠা,গোবর,কেঁচো সার , প্রেসমাড,ইত্যাদি।
কেঁচো সার Vermicompost fertilizer একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয় । ১ মাসের বাসী গোবর বা তরকারির ফেলে দেওয়া অংশ,ফলমূলের খোসা,উদ্ভিদের লতাপাতা,হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, ছোট ছোট করে কাটা খড়কুটো খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যে সার তৈরি হয় তাঁকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়। এ সার সব ধরনের ফসল ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। এটি পৃথিবীতে অধিক ব্যাবহৃত জৈব সারের অন্যতম,পরিবেশবান্ধব সার।
কেঁচো সার তৈরির সময় কি কি সতর্কতা নেওয়া দরকার?
মনে রাখতে হবে কেঁচো সার তৈরি করার সময় হাতে গ্লাভস এবং মুখে মাক্স অবশ্যই পরতে হবে।এছাড়া কেঁচোর খাবার হিসাবে লেবু-তেতুল-টমেটো,মশলার গাছ,বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যেন না থাকে।বেশি সূর্যের তাপ বা বৃষ্টির জল যেন কেঁচো সারে না পরে।ছুঁচো বা পাখির হাত থেকে কেঁচোকে বাঁচাতে নেট বা মশারি দিয়ে চৌবাচ্চা অথবা যে স্থানে কেঁচো সার তৈরি করবেন সেই স্থানটিকে ভালো করে ঢেকে দিন। লাল পিঁপড়ে হল কেঁচোর প্রধান শত্রু তাই এর হাত থেকে কেঁচোকে বাঁচাতে রাসায়নিক ব্যবহার করতে হবে বা লক্ষন রেখা কিনে চৌবাচ্চার চারিদেকে দাগ দিয়ে দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ পুকুর থেকে পোনা তৈরি,রইল গলদা চিংড়ি চাষের যাবতীয় খুঁটিনাটি,শিখে নিলেই কেল্লাফতে
কেঁচো সার কিভাবে তৈরি করবেন ?
১। কেঁচো কম্পোষ্ট তৈরি করতে হলে প্রথমে গর্ত অথবা চৌবাচ্চা তৈরি করতে হবে। এরপর এসব গর্তে ঘাস, আমের পাতা বা খামারের ফেলে দেয়া অংশ এসবের যেকোনো একটি ছোট ছোট করে কেটে এর প্রায় ২৫ কেজি হিসেবে নিতে হয়।
২। পাঁকা চৌবাচ্চর তলদেশে ৩ইঙ্চি পুরু করে পাথরকুচি ও ইঁটের টুকরো দিয়ে ভরাট করতে হবে। এর উপর এক ইঙ্চি মোটা বালি সমান করে বিছিয়ে নিতে হবে। এর ফলে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা সুচারু ভাবে কার্যকর করতে হবে। চৌবাচ্চার অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের জন্য নীচের দিকে ১-২টি ছিদ্র রাখা যেতে পারে।
৩। বালির উপর ৩ইঙ্চি মাপের নারকেল ছোবড়া,খড়,পাতা দিয়ে একটি স্তর তৈরি করতে হবে।
৪। এই পচা জৈব পদার্থের স্তরের উপর ভেজা চট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে এই চটের ওপর জল দিয়ে ভেজাতে হবে। মোটামুটি ৪০-৪৫ দিনের মাথায় কেঁচোসার তৈরি হয়ে যাবে ।তবে শীতকালে এক সপ্তাহ বেশি সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুনঃ কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশি? কৃষি জাগরনের মতে তিনটি সেরা জাত
কেঁচো সার ব্যবহারে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়
-
কেঁচো সার মাটিতে জল ধরে রাখার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
-
মাটির নাইট্রোজেন হ্রাস রোধ করে।
-
মাটির ভৌত,জৈব ও রাসায়নিক গুনাগুন উন্নত করে এবং মাটির অম্লক্ষার ভারসাম্য ঠিক রাখে।
-
ফসলের শিকরের বৃদ্ধি ও গঠনকে উন্নত করে।
-
সেচের চাহিদা কমায়
-
ফসলের উৎপাদন খরচ কমায় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে
-
কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
Share your comments