
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক বিষয়গুলোর একটি হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এর প্রভাব পড়ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, বিশেষত কৃষিক্ষেত্রে। চাষবাস নির্ভর করে মূলত আবহাওয়া ও প্রকৃতির উপর, আর সেখানেই বড়সড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে—অনিয়মিত বৃষ্টি, অতিরিক্ত গরম, দীর্ঘ খরা, অকাল বন্যা ইত্যাদি।এই পরিবর্তনের ফলে কৃষকরা পড়ছেন চরম বিপাকে। ফসলের উৎপাদন কমছে, গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন হাজার হাজার চাষি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান প্রভাব কী কী?
১. বৃষ্টিপাতের অনিয়মিততা
আগে যেখানে নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি হতো, এখন তা অপ্রত্যাশিত সময়ে হচ্ছে অথবা একেবারেই হচ্ছে না। খরিফ চাষে যেমন ধানের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে জল দরকার, তা না পেলে ফসলের ক্ষতি হয়।
২. খরা ও জলাভাব
গ্রীষ্মে দীর্ঘ সময় ধরে খরা দেখা যাচ্ছে। জমি শুকিয়ে যাচ্ছে, সেচের জল পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে রবি ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
৩. অকাল বন্যা ও ঝড়
অনেক সময় অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সম্পূর্ণ ফসল ডুবে যাচ্ছে বা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
৪. উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব
অতিরিক্ত গরমে ফসলের ফুল ঝরে পড়ে, ফল কমে যায়, আবার কিছু রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যায়।
কৃষকের করণীয় কী?
১. জলবায়ু-সহনশীল জাত নির্বাচন
বিজ্ঞানীরা এমন অনেক ধান, গম, ডাল বা সবজির জাত তৈরি করেছেন যা খরা, অতিবৃষ্টি বা লবণাক্ত মাটি সহ্য করতে পারে। এই জাতগুলো বেছে নিয়ে কৃষকরা ক্ষতির পরিমাণ কমাতে পারেন।
২. পুনর্ব্যবহৃত ও সাশ্রয়ী জল ব্যবস্থাপনা
ড্রিপ ইরিগেশন বা স্প্রিংকলার প্রযুক্তি ব্যবহার করে জল কম লাগিয়ে ফসল চাষ করা সম্ভব। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করেও সেচের জন্য ব্যবহার করা যায়।
৩. ফসল পরিবর্তন (Crop Diversification)
একই জমিতে একাধিক ধরণের ফসল চাষ করলে ঝুঁকি কমে। যদি একটিতে ক্ষতি হয়, অন্যটি থেকে কিছু আয় করা সম্ভব।
৪. আবহাওয়ার পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে চাষের পরিকল্পনা
সরকারি ও বেসরকারি অনেক সংস্থা এখন কৃষকদের মোবাইলে আবহাওয়ার সঠিক তথ্য দিচ্ছে। এই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে বপন, সার প্রয়োগ, সেচ, বা ফসল কাটার সময় ঠিক করা যেতে পারে।
৫. জৈব চাষ ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা
জৈব পদ্ধতিতে চাষ করলে মাটির গুণগত মান ভালো থাকে ও জল ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ে, ফলে খরার সময়ও কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যায়।
সরকারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ
- সাবসিডি ও ঋণ সহায়তা: জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং টেকসই কৃষিপদ্ধতি গ্রহণে সহায়তা করা দরকার।
- প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা: কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও জলবায়ু মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।
- ইনস্যুরেন্স স্কিম: ফসল বিমা থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কিছুটা আর্থিক সুরক্ষা পান।
জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকার করার মতো নয়, এবং এটি কৃষির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং কিছু পরিবর্তন আনতে পারলে কৃষকরা এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সফল হতে পারেন।
Share your comments