
অনেক সময় কৃষকরা শুনে থাকেন – “চাষ তো করলাম, কিন্তু ঠিক দামে ফসল বিক্রি হলো না।”
পরিশ্রম করে উৎপাদন করলেও, যদি সঠিক বাজার বা বিক্রয় কৌশল না জানা থাকে, তাহলে লাভের বদলে লোকসান হয়। এই ব্লগে আমরা জানবো, কীভাবে একজন কৃষক তাঁর উৎপন্ন ফসল লাভজনকভাবে বিক্রি করতে পারেন।
কোথায় বিক্রি করবেন?
১. স্থানীয় হাট/পৌর হাট/সাপ্তাহিক বাজার
- সবচেয়ে প্রচলিত ও সহজ উপায়
- মধ্যস্বত্বভোগীদের চাপ থেকে কিছুটা মুক্তি
- দাম একটু কম হলেও দ্রুত নগদ টাকা পাওয়া যায়
২. সরকারি MSP ক্রয় কেন্দ্র
- ধান, গম, সরষে ইত্যাদি ফসলের জন্য সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) রয়েছে
- স্থানীয় প্যাকেজিং কো-অপারেটিভ বা FCI অফিসে যোগাযোগ করলে জানা যাবে ক্রয় কেন্দ্র কোথায়
- লাভজনক ও নিরাপদ
৩. সরাসরি খুচরো বিক্রি (Direct-to-Customer)
- রাস্তার ধারে, স্থানীয় দোকান বা গৃহবাজারে বিক্রি
- সবজি, ফল, ফুল, দুধ জাতীয় পণ্যে বেশি কার্যকর
লাভ বেশি কারণ মধ্যস্বত্বভোগী নেই
৪. আড়ত/মাণ্ডি বিক্রি
- বড় পরিমাণ ফসল থাকলে আড়তে বিক্রি লাভজনক
- তবে দরদাম ভালোভাবে বোঝা দরকার
- সতর্কতা: ওজনে কম দেওয়ার বা দাম কম বলার প্রবণতা থাকতে পারে
৫. সরাসরি রপ্তানি (Export Opportunity)
- আম, লিচু, পাট, ফুল ইত্যাদি আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হয়
- কৃষি রপ্তানিকারক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হলে দাম অনেক বেশি পাওয়া যায়
- কৃষি মার্কেটিং দফতর বা APEDA (India) এ রেজিস্ট্রেশন করে শুরু করা যায়
অনলাইন বিক্রয় কৌশল
eNAM (Electronic National Agriculture Market)
- একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেখানে দেশের যেকোনো কৃষক তাদের পণ্য দেশের যেকোনো আড়তে বিক্রি করতে পারেন
- প্রয়োজন: মোবাইল, রেজিস্ট্রেশন, স্থানীয় APMC লাইসেন্স
- https://enam.gov.in/
AgriBazaar, KrishiJagran, DeHaat ইত্যাদি অ্যাপ
- মোবাইলের মাধ্যমে বাজার দর জানা, ফসল বিক্রি, ও পেমেন্টের সুবিধা
- কৃষকদের নেটওয়ার্কের সুযোগ বাড়ে
বাজারে সঠিক দামের জন্য কৌশল
১. বাজার দর নিয়মিত নজরে রাখুন
- স্থানীয় কৃষি অফিস বা “কৃষক বন্ধু অ্যাপ”-এ প্রতিদিনের দর পাওয়া যায়
- “Agmarknet.gov.in” ওয়েবসাইটেও বাজার দর দেওয়া থাকে
২. মৌসুম বুঝে বিক্রি করুন
- ফসল যখন কম পাওয়া যায়, তখন দাম বেশি হয়
- কিছু ফসল (যেমন: আলু, পেঁয়াজ, রসুন) সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করলে লাভ হয়
৩. চাষিদের সমবায় গড়ুন (Farmer Producer Group - FPO)
- একক বিক্রির বদলে দলবদ্ধভাবে বিক্রি করলে দরদাম ঠিক রাখা যায়
- ফ্রেট খরচও কমে
৪.সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে দামের সময় ভিন্নতা কাজে লাগান
- হিমঘর/ঠান্ডা স্টোরেজ ব্যবহার করলে বাজার বুঝে ফসল ছাড়ার সুবিধা পাওয়া যায়
ফসল চাষ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ সঠিক বাজারে বিক্রি করা। মধ্যস্বত্বভোগীদের ফাঁদে না পড়ে কৃষকদের উচিত সরাসরি বাজার বা প্রযুক্তির মাধ্যমে বিক্রির দিশা খোঁজা। আধুনিক অ্যাপ, সরকারি সহায়তা ও সম্মিলিত উদ্যোগ থাকলে কৃষক নিজের ফসলের প্রকৃত মূল্য পেতে পারেন।
Share your comments