কর্ষণ সাধারণত ৩ প্রকার – প্রাথমিক, মাধ্যমিক, অন্তর্বর্তী। বিনা কর্ষণ পদ্ধতিতে প্রাথমিক কর্ষণটি সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মাধ্যমিক কর্ষণ করে একটি দাগ টেনে বীজ ও সার ছড়ানো হয়। বিগত ১০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি দপ্তর ধান ও গমের উপর এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এছাড়া মুসুরি, খেসারি, ছোলাতেও এই পদ্ধতির ব্যবহার চলছে। পাট, সর্ষে, সূর্যমুখী চাষ গবেষনা স্তরে রয়েছে।
-
বিনা কর্ষণের সুবিধা (Zero tillage farming) –
শীতের সময়োপযোগী একটি পদ্ধতি হল বিনা কর্ষণে চাষ। এছাড়াও আরও সুবিধাগুলি হল – চাষের খরচ কম, জলের খরচ কম, ফলন বেশী, আগাছার উপদ্রব কম, পরিবেশ দূষণ কম, মাটির জৈব পদার্থ বৃদ্ধি, ভূমিক্ষয় কম সর্বোপরি মাটির স্বাস্থ্য বৃদ্ধি।
-
বিনা কর্ষণে ব্যবহৃত যন্ত্র ও তার কার্যাবলী –
বিনা কর্ষণে ব্যবহৃত যন্ত্রটি হল “জিরো টিল সীড কাম ফার্টিলাইজার ড্রিল”। সহজ সরল একটি যন্ত্র। সাধারণ বা ১১ টি ফলা যুক্ত ট্রাক্টরের ফলার পিছনে দুটি পাইপ থাকে। পাইপ দুটি বাক্সে থাকা সার ও বীজের সাথে যুক্ত থাকে। সামনের চাকার সাথে চেইন দিয়ে বাক্স দুটির যোগাযোগ থাকে। চাকা ঘোরার সাথে সাথে নিয়ন্ত্রিত পরিমানে বীজ ও সার জমিতে পড়তে থাকে। উল্টো ‘T’ এর ন্যায় যুক্ত একটি ফলা বীজের গভীরতা নিয়ন্ত্রন করে। যন্ত্রটি ৪ ফলা থেকে শুরু করে ১২ ফলা অবধি ট্র্যাক্টর দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা যায়।
- বিনা কর্ষণের চাষ যোগ্য জমি – যে কোন সমতল জমিতে এই পদ্ধতিতে চাষ সম্ভব। জমি অসমতল হলে সে ক্ষেত্রে একটি প্রাথমিক চাষ দিয়ে জমিটিকে সমতল করে নিতে হবে।
এছাড়া কৃষি দপ্তর থেকে “লেজার লেভেলার” নামক যন্ত্র দিয়ে সমতল করা হয়, তারপর ফসল চাষ করা হয়।
বিনা কর্ষণে গম চাষ পদ্ধতি –
ধান কাটার পর জমিতে আগাছা থেকে থাকলে গ্লাইফোসেট নামক সর্বাঙ্গবাহী একটি আগাছা নাশক ওষুধ ৬-৮ মিলি প্রতি লিটার জলে দিয়ে স্প্রে করতে হবে। তারপর বিঘা প্রতি ১০-১২ কেজি বীজ ও সার (১০ : ২৬ : ২৬ – ১.৫ কেজি প্রতি কাঠা ও ইউরিয়া – ৮ কেজি প্রতি বিঘা ) এই মেশিনের সাহায্যে ছড়াতে হবে। সার বাছাই এর সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে সার নতুন হয় অর্থাৎ সারে যেন কোন জল না থাকে। জল থাকলে তা মেশিনের পক্ষে ক্ষতিকর।
জমিতে আগাছা না থাকলে পেন্ডিমেথালিন নামক আগাছানাশক দিতে হবে ১.৫ কেজি সক্রিয় উপকরণ প্রতি বিঘাতে, ২ দিনের মধ্যে। তবে এটি দেওয়ার আগে নজর রাখতে হবে মাটিতে যেন যথেষ্ট পরিমাণ রস থাকে।
বিনা কর্ষণে চাষ সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য –
১) জমি সমতল হলে রোটাভেটর ব্যবহার এর কোন প্রয়োজন নেই।
২) এই মেশিন যে কোন ব্লকের কৃষি আধিকারীকের সাথে যোগাযোগ করলে ছাড় (সাবসিডি) সহ পাওয়া যাবে।
৩) এই মেশিনের দাম খুব বেশী নয়। সহজ কথায় কোন চাষী ভাই ৪০ বিঘা জমিতে একবার গম চাষ করলে মেশিনের দাম উঠে যাবে।
৪) এটি প্রতি ঘন্টায় ৩ বিঘা পর্যন্ত জমি চাষ করতে পারে। অর্থাৎ কোন গ্রামে ৩০০ বিঘা জমি থাকলে তা ১০ দিনে চাষ করা সম্ভব হবে ।
লেখক - ডঃ বেনুকর বিশ্বাস (বরিষ্ঠ গবেষক, এ আই সি আর পি -এগ্রোফরেস্ট্রি ও সহযোগী অধ্যাপক, শষ্যবিজ্ঞান বিভাগ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) এবং
শাওলী বৈদ্য ও মহফুজার রহমান (গবেষক, শষ্যবিজ্ঞান বিভাগ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়);
Imge Source - Google
(SBI Gold Loan) স্বল্প সুদে কৃষি স্বর্ণ লোণ নিতে চান? কৃষকবন্ধুরা আবেদন করুন এই পদ্ধতিতে