কৃষিজাগরন ডেস্কঃ চাষ বলতে আমরা যা বুঝি তা হল যে কোনো কৃষি ফসলকে তার জীবনের কোনো নির্দিষ্ট পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে বড় করে তোলা। মোহনায়ে মাছ চাষ (লোনা জলের মাছের জলজ চাষ) – এসবের প্রণালী শুধু মাত্র অল্প কয়েকটি নীতির উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে যা হল – সঠিকভাবে পুষ্টিকর মাছের ছাড়া নির্ধারণ করা এবং সেটিকে জলজ চাষের জলের সাথে পরিচয় করানো, বৈজ্ঞানিক এবং নির্দিষ্ট ভাবে খাবার প্রয়োগ করা, প্রতি অন্তর জলের এবং মাছের স্বাস্থের পরীক্ষা করা এবং সর্বশেষে মনোযোগ সহকারে মাছের হারভেস্ট করা।
মাছের খাবার আমাদের দিতে হবে জলজ প্রাকৃতিক খাবার অর্থাত্ ফাইটো বা জূপ্ল্যাঙ্কটনের উপর নির্ভর করে নইলে তা একাধারে যেমন জলের একপাশে উচ্ছিষ্ট হয়ে পরে থাকবে আবার অপরদিকে তা পচন প্রক্রিয়ায় সামিল হয়ে চাষের জলকে করে তুলবে মাছের বসবাসের পক্ষে অনুপযোগী । এছাড়াও মাঝে মধ্যে, জলের প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ যাচাই করে দেখা, দ্রবীভুত অক্সিজেনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা, বর্জপদার্থ পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা – এইসব তো আছেই। কিন্তু খাবারের পরিমাণ আবার মাছের বয়সের উপরেও নির্ভর করে থাকে যা সাধরনত বয়স বারার সাথে সাথে কমতে থাকে সঙ্গে খাবার প্রয়োগের ব্যবধানের সময়সীমাও।
আরও পড়ুুনঃ মাছেদের জীবনে কী আদৌ মোহনার কোনও উপকারিতা আছে ?
যে সমস্ত মাছ লোনা জলে চাষ করার উপযোগী তাদের মধ্যে দু-প্রকারের মাছ সাধারণত দেখা যায় – মাংসাশী ও তৃণভোজি। তৃণভোজিদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হল পায়রাচাঁদা (Etroplus suratensis), মুক্তোগাছা (Scatophagus argus), খরশুলা (Rhinomugil corsula)।
এদের চাষ করার মূলত যে ধাপগুলি পালন করা হয় – সঠিক ছাড়া চিনে চাষের জলে প্রয়োগ করা, কিন্তু এর আগে অতি অবশ্যই দেখে নেওয়া জলে পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রাকৃতিক খাবারের পরিমাপ, এবং শেষে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর সেই ছাড়াগুলিকে অন্যত্র স্থাপন করা বা বিক্রি করা। এখেত্রে চাষের পুকুরে যদি মাছেদের প্রাকৃতিক খাবারের পরিমাণে ঘাটতি লক্ষ্য করা যায় তবে আমরা সেটিকে আলাদা করে চাষ করেও পুকুরে যোগ করতে পারি যার বিশেষ একটি উদাহরণ হল রটিফার (একটি হল এক ধরনের জূপ্ল্যাঙ্কটন)।
আরও পড়ুনঃ ভারতের সবচেয়ে দামি ৪টি মহিষ! দাম কয়েক কোটি
মাছগুলি একটি নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করার পরেই তাদের কৃত্রিম খাবারের সঙ্গে পরিচয় করান হয়। এই কৃত্রিম খাবার দেওয়া হয় প্রতিদিন একটি নির্ধারিত সময়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে যার কথা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। এই ভাসমান বা ডোবা খাবারগুলি বানানো হয় কিংবা তৈরি করা হয় নানান রূপে – দানাদার বা পেলেটেড, পেয়ারসন স্কুউয়ের প্রক্রিয়ার দ্বারা। এই একি ধাপগুলি দ্বিতীয় প্রকার অর্থাত্ মাংসাশী মাছের প্রজাতির জন্য শুধু একটাই পার্থক্য বাদে – এখেত্রে মাছের কৃত্রিম খাবার এর তালিকায় বা তাদের খাবারের বেশ খানিকটা অংশ জুড়ে থাকবে পশুমাংসের পরিমাণ। কিন্তু দুঃখ জনক ভাবে, যদিও পশ্চিমবঙ্গে মোহনায় মাছ চাষ ওরফে লোনা জলের মাছ চাষের হার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কম তবে যে সমস্ত জায়গায় এটি বিপুল আকারে এটি চর্চা করা হয় তাদের মধ্যে গঙ্গাসাগর-কাকদ্বীপ একটি অন্যতম স্থান হিসাবে পরিচিত।
কিন্তু চিংড়ি চাষের প্রণালীর নীতি আবার সম্পূর্ণ রূপে নির্ভর করে সঠিকভাবে ও সঠিক পরিমাণে খাদ্যের এবং হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা বা রক্ষ্যনাবেক্ষ্য়নের উপর তার কারণ চিংড়ি চাষের সাফল্যের মুল চাবিকাঠি-টিই লোকনো রয়েছে উপযুক্ত স্থানে হ্যাচারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই যাতে আমরা অতি সহজেই ব্রুডষ্টকের সাহায্যে নিয়ন্ত্রীত অবস্থায় উচ্চমানের চিংড়ির ছাড়া ওরফে মীন পেতে পারি।
ঊর্ণা ব্যানার্জী ও প্রতাপ মুখোপাধ্যায়
Share your comments