উত্তরপ্রদেশে আমুলের অনুপ্রবেশ ছোটো ডেয়ারি কৃষকদের কাছে এক বরদান হতে চলেছে। আসলে এই রাজ্যের কৃষকদের বক্তব্য হলো তারা তাদের উৎপাদনের রোজগার রোজ পেলেও তা তাদের কাছে পর্যাপ্ত রোজগার নয়। কানপুরের জেলার দেহাত অঞ্চলের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান চন্দ্রমোহন সিং বলেছেন “আমুলের অনুপ্রবেশের আগে, এই অঞ্চলের ডেয়ারি কৃষকরা তাদের ওই সামান্য উৎপাদন বেচে যৎসামান্য উপার্জনের কল্যাণে বেঁচে থাকতো।“ কানপুরের দালালপুর গ্রামের অপর এক কৃষক ঘনশ্যাম সিং বাদোনিয়া বলেন ”কৃষকরা বিগত বৎসরগুলির তুলনায় বর্তমান বছরে অনেক বেশী দুগ্ধ উৎপাদনে উৎসাহিত হয়েছে, এর জন্য আমুলকে ধন্যবাদ। এখন এখানকার লোকজন তাদের গবাদিপশুদের অতি যত্ন সহকারে রাখছে, কারণ তারা গবাদিপশুদের এখন থেকে জীবন ধারণের উপায় হিসাবে মনে করছে।“
উত্তরপ্রদেশ ভারতের ডেয়ারি শিল্পের উন্নত একটি রাজ্য। সারা ভারতের মোট দুগ্ধ উৎপাদনের ১৭ শতাংশ উৎপাদন এই রাজ্য থেকে আসে। প্রতিদিন এই রাজ্যে ৭.৫৫ কোটি লিটার দুগ্ধ উৎপাদিত হয়, যা সারা ভারতের ডেয়ারি মানচিত্রে হঠাৎ বহ্নিশিখার মতো প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছে। প্রাদেশিক কো-অপারেটিভ ডেয়ারি ফেডারেশন হলো উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকারের একটি বিশেষ দুগ্ধ বিক্রয় পরিকাঠামো যা পরাগ ব্র্যান্ডের নামে দুগ্ধ বিপণন করে থাকে, তবে তার উপস্থিতি বাজারে এত বেশী উল্লেখযোগ্য নয়।
উত্তরপ্রদেশ গোয়ালাদের রাজ্য এবং কিছু বেসরকারি সংস্থার বিপণনের দ্বারা এই সব ছোটো কৃষকদের উৎপাদন বাজারজাতকরণ করা হত। এক্ষেত্রে এতদিন দুধের গুনগত মান নির্ধারণ, ভেজাল পরীক্ষা কিছুই তেমনভাবে করা হত না। এইসব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে যখন ওই রাজ্যে এশিয়ার সব থেকে বড় ডেয়ারি ‘বনস্ ডেয়ারি এই রাজ্যে তাদের বিপণি স্থাপন করে।
বনস্ ডেয়ারি, গুজরাটের কোয়ালিটি মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন এর সর্ববৃহৎ দুগ্ধ বিপণন সংস্থা, যারা আমুল ব্র্যান্ডের নামানুসারে তাদের পণ্য বাজারজাত করে। এই সংস্থার পাঁচ লক্ষ লিটার দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত করার দুটি প্ল্যান্ট রয়েছে একটি কানপুরে আর অপরটি হলো লখনৌয়ে। এই দুটি অঞ্চলের সমস্ত ক্ষুদ্র ডেয়ারি কৃষকরা এর পুরো সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে।
অমরিশ দ্বিবেদী বলেন “আমরা বর্তমানে প্রায় ১০০ টি ক্ষুদ্র ডেয়ারিকে তাদের উন্নত জীবনযাপনের উপায় করে দিতে পেরেছি। আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো আমরা মোট উৎপাদনের কড়া ভেজাল নির্ধারণের ব্যবস্থা করতে পেরেছি, যা আগে এখানে করা হোতো না।”
কে কানপুরের এই কাজগুলিকে দেখাশুনা করে? এই প্ল্যান্টটি কানপুরের মোতি অঞ্চলের থেকে ৫৫ কিমি দূরে অবস্থিত। দ্বিবেদী বাবু বলেন, “পুর্বে কৃষকরা দুধের সাথে নুন, চিনি মেশাতো যাতে তাদের উৎপাদিত দুধের SNF ( solids-not-fat portion) ঠিক থাকে। এই সব ভেজাল মেশানোর ফলে কৃষকরা দুধের ভালো দাম পেত। তারা এসবের পরেও দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য জল মেশাত”
দ্বিবেদী বাবুর মতে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। আজ তাদের কাছে প্রায় ৬.৫ লক্ষ লিটার দুগ্ধ সংরক্ষণকারী দুটি প্ল্যান্ট রয়েছে তাছাড়া কানপুর ও তার আশেপাশের অঞ্চলে ছোটো ছোটো কিছু শীতলীকরণ কেন্দ্র রয়েছে, কিছু আছে কনৌজ, বারানসী, এটাওয়া, দিব্যাপুর, ও লখনৌ-এ। এই সমস্ত অঞ্চলে প্রায় ১৩০০ টি দুগ্ধ সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে যাদের সদস্যসংখ্যা ১০ থেকে বর্তমানে ১০০ তে গিয়ে ঠেকেছে।
দ্বিবেদী বাবু আরও যোগ করেন, “ আমুলের অনুপ্রবেশ উপভোক্তাদেরও সাহায্য করেছে। মানুষের দুধের উপড় হারানো বিশ্বাস ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছে, তারা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপড় খুব সহজেই আস্থা অর্জন করছে। আসলে মানুষের স্বাদ বদলেছে, মানুষ এখন চাইছে সঠিক সময় সঠিক গুণমানের জিনিষ। আসলে আমুলের দুধ সমাজের মানুষের উপড় একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু এখনও অনেকটা পথ বাকি, কারণ প্যাকেট দুধের উপড় মানুষের আস্থা পুরোপুরি ফেরে নি, তবে এর বিক্রি আগের তুলনায় অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।“
- প্রদীপ পাল
Share your comments