স্বাদে অতুলনীয় আমুর কার্পের চাষের সাফল্য পাওয়ায় সারা রাজ্যে এই মাছের চাষের আগ্রহ খুব বেড়েছে। তবে অনেকক্ষেত্রে মাছ চাষি ভাইয়েরা আমুর মাছের চারা বা ডিমপোনা কোথায় পাবেন এই ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু অতি সহজেই চাষি বন্ধুরা আমুর মাছের কৃত্রিম প্রজনন করে এর ডিমপোনা নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারবেন। আমুর কার্পের প্রজনন প্রযুক্তি অত্যন্ত সহজ ।
আমুর কার্প মাছের প্রজনন
আমুর কার্পের ব্রুড মাছ সংগ্রহ করে খুব সহজেই কৃত্রিম প্রজনন করা যেতে পারে। উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরে সরকারি ব্রুড ব্যাঙ্ক রয়েছে। ন্যাশানাল ফিসারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ড এর ব্রুড ব্যাংক। এখান থেকে আমুর মাছের চারা যেমন সরকারি দামে পাওয়া যাবে তেমনি ব্রুড মাছও পাওয়া যাবে। এখান থেকে ব্রুড মাছ নিয়ে চাষি ভাইয়েরা সহজেই আমুর কার্প মাছের প্রজনন করে ডিম পোনা তৈরি করতে পারবেন।
প্রজনন ক্ষেত্র প্রস্তুতি
পুকুরে পরিস্কার জল ভর্তি করতে হবে। এর পর দুই দিন রেখে দিতে হবে , দ্রবীভূত পদার্থ নিচে থিতিয়ে যাবে । জল আরো পরিস্কার হবে। মাছ ছাড়ার আগে জলের পি এইচ, তাপমাত্রা , দ্রবীভূত অক্সিজেন এই গুলি পরিমাপ করে নিতে হবে। এরপর হাপা টাঙিয়ে ফেলতে হবে। নিয়ন্ত্রিত ভাবে প্রজননের জন্য সিমেন্টের চৌবাচ্চা কিংবা হাপা ব্যবহার করা হয়।এখানে চৌবাচ্চা কিংবা হাপাতে ঝাঁঝি বা কচুরিপানা সাজিয়ে রাখতে হয়। আমুর কার্পের প্রজনন পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ কারণ এরা বদ্ধ জলাশয়ে ডিম পাড়ে। এদের ডিমগুলো একটু আঠালো হওয়ার জন্য কোনও জলজ উদ্ভিদের গায়ে লেগে থাকে। এই সমস্ত জলজ উদ্ভিদ ডিম সহ তুলে নিয়ে হাপাতে রেখে ডিম ফোটানো হয়।
আরও পড়ুনঃ মাছ চাষে পরজীবীর (উকুন) উৎপাত ও তার থেকে প্রতিকারের উপায়
প্রজননক্ষম মাছ নির্বাচন
পুরুষ ও মহিলা ব্রুড মাছ স্বনাক্তকরন করে নিতে হবে। সুগঠিত পরপক্ক স্ত্রী মাছের পেট ফোলা হয়, ডিম ভর্তি থাকে । লালচে এবং ফোলা ভেন্ট দেখা যায়।পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিলে সাদা মিল্ট বেরিয়ে আসে। স্ত্রী মাছ ১-১.৫ কেজি ওজনের আর পুরুষ মাছ ১-১.৩ কেজি ওজনের হতে হবে।
প্রজনন পদ্ধতি
সম সংখ্যক পুরুষ ও স্ত্রী মাছ ডিমপোনা উৎপাদন করার জন্য নেওয়া হয়। পুকুরের মধ্যে হাপা খাটিয়ে রাখা হয়।ব্রীডিং হাপায় সন্ধ্যে বেলায় স্ত্রী ও পুরুষ মাছ ছাড়া হয় ।
আরও পড়ুনঃ মাংস উৎপাদন ছাড়াও ছাগল পালনে রয়েছে বাড়তি আয়ের সম্ভবনা
মাছ ছাড়ার পর জলজ আগাছা (হাইড্রিলা) হাপার মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। তলাটা আগাছা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।ব্রুডার মাছের প্রতিকেজির জন্য ২ কেজি জলজ আগাছা দিতে হবে।
সন্ধ্যাবেলা প্রজনন উপযোগী স্ত্রী ও পুরুষ মাছ এদের মধ্যে ছাড়লে ৬ ঘণ্টা থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে প্রজনন হয়। সকালবেলা ঝাঁঝি বা কচুরিপানা তুলে দেখলে দেখা যাবে এদের সঙ্গে নিষিক্ত ডিম লেগে আছে। এখানে জলজ উদ্ভিদ ডিম সংগ্রাহকের কাজ করে। নিষিক্ত ডিমের রং ঈষৎ হলুদ এবং খারাপ ডিম সাদা হয়।ভালো প্রজনন হলে ১ কেজি স্ত্রী মাছ থেকে ১ লাখ ডিম পাওয়া যেতে পারে। প্রজননের পর পুরুষ ও স্ত্রী মাছগুলিকে হাপা বা চৌবাচ্চা থকে সারিয়ে নিতে হয়। ডিমযুক্ত জলজ উদ্ভিদ অন্য হাপাতে ফোটানোর জন্য স্থানান্তরিত করা হয়। নিষিক্ত ডিম থেকে ডিমপোনা বেরিয়ে আসতে ৪৮ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। হাপাতে ডিমপোনা ২ – ৩ দিন রাখার পরে নার্সারি পুকুরে ছাড়া হয়।
আমুর কমন কার্পের ডিম ছাড়ার জন্য পরিবেশগত প্রয়োজনীয় প্যারামিটার হল
জলের গুনগত মান, তাপমাত্রা , আলোর উপস্থিতি।দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান 5.0-5.5 mg/lt. ।এবং পি এইচ 7.0-8.0 সর্বোত্তম দিন তাপমাত্রা 18oC – 25oC ও জলের তাপমাত্রা 18oC – 22oC প্রয়োজন ।
Share your comments