অন্যান্য ব্যাবসার মতো মৌমাছি চাষও বেশ লাভজনক ব্যবসা | ফলন বৃদ্ধিতে মৌমাছির যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমন মধুর অনেক উপকারিতাও রয়েছে। তাই মধুর চাহিদা সর্বকালের, সর্বজনবিদিত। মৌমাছি পালন খুব একটা কঠিন কিছু নয়। আর মৌমাছি পালনের (Bee farming) মাধ্যমে অনায়াসে বিকল্প আয়ের দিশা দেখতে পারেন কৃষকরা।
মৌ পালনে কৃষকরা ব্যাপক লাভ করতে পারেন | মধু উৎপাদনের জন্য প্রায় ৬-৭ রকমের মৌমাছি মূলত পালন করা হয়। তার মধ্যে ‘এটিস মেলিফেরা নামে ইটালিয়ান প্রজাতির মৌমাছি পালন বেশ গুরুত্বপূর্ণ । এই প্রজাতির মৌমাছি দেশীয় প্রজাতির মৌমাছির তুলনায় অনেক বেশি মধু উৎপাদন করে।
মৌমাছি পালনের সরঞ্জাম (Beekeeping Equipment) :
মৌমাছি পালনের জন্য মৌ-বাক্স, ধোঁয়াদানি, বটম বোর্ড, ব্রড চেম্বার, সুপার চেম্বার, টপ ব্রুড চেম্বার, ক্রাউন বোর্ড, মধু নিষ্কাষন যন্ত্র, রানি মৌমাছি অবরোধ জাল, ডামি বোর্ড, টুপি ও বোরখা, পুরুষ মৌমাছি ধরা ফাঁদ, হাইভ স্ট্যান্ড ইত্যাদি জিনিসের প্রয়োজন হয় |
সুবিধা :
উৎকৃষ্ট ধরনের পরাগ সংযোগের দ্বারা কৃষিজাত সম্পদ বৃদ্ধি করা। উপযুক্ত পরাগ সংযোগের ফলে বীজ সুপুষ্ট ও ফল বা শষ্যের আকৃতি বৃদ্ধি পায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১০-১৫ গুণ পর্যন্তও বৃদ্ধি পায়। মৌমাছি পালন বা সংখ্যাবৃদ্ধি ও কৃষিক্ষেত্রে সমৃদ্ধি পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। খাঁটি মধু অমৃতসমান উপকারী বলে বিবেচিত।
উপযুক্ত পরিবেশ (Climate):
মৌ-বাক্স রাখার জন্য নির্বাচিত স্থানটি ছায়াযুক্ত, শুকনো ও আশপাশে মৌমাছির খাদ্য সরবরাহের উপযোগী গাছ-গাছালি দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়া অতি-প্রয়োজনীয়। প্রয়োজনে কিছু কিছু ঋতুভিত্তিক গাছ জরুরি ভিত্তিতে লাগানো যেতে পারে। নির্বাচিত স্থানের আশপাশে যেন বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী এবং ধোঁয়া উৎপাদনকারী কোনো কিছু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মৌমাছি পালনের নিয়ম:
যে জায়গায় বাক্সে মৌমাছি পালন করা হয় তার পাশাপাশি প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মধু সংগ্রহ করবে মৌমাছিগুলি। পাশাপাশি জমিগুলির ফসলের ফুল, বিভিন্ন গাছের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবার মৌমাছিগুলি ফিরে আসবে কাঠের বাক্সে। অন্য কোথাও উড়ে পালানোর সম্ভাবনা নেই। অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মৌমাছিগুলির মধু উৎপাদনের সময়। এই মরশুমের মধ্যে ১৫ বার পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করা যায়। এক একটি কাঠের বাক্স থেকে গড়ে ৭০ কেজি করে মধু পাওয়া যাবে। এক একটি কাঠের বাক্সে প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত চাষ করা যায়। তবে বর্ষাকালে কাঠের বাক্সগুলিকে খোলা জায়গা থেকে তুলে ছাউনি দেওয়া জায়গায় রাখতে হবে। যাতে বৃষ্টিতে ক্ষতি না হয়। বর্ষায় মৌমাছি মধু সংগ্রহ করতে পারে না। তাই সেসময় মৌমাছিগুলিকে রক্ষা করার জন্য সময়ে সময়ে চিনির রস বাক্সে দিতে হবে |
আরও পড়ুন - Cow-food preserving method: জেনে নিন বর্ষায় গো-খাদ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি
রোগবালাই ও দমন (Disease management):
বিভিন্ন প্রকার শত্রু ও রোগের আক্রমনে মৌমাছি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে । ভিজে, স্যাতসেঁতে আবহাওয়ায় মোমপোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশী হয়। চাকের কুঠুরির উপরে মাকড়সার জালের ন্যায় আবরণ দেখেই বোঝা যায় মৌমাছিদের মোম-পোকা আক্রমণ করেছে। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন বৃষ্টির মধ্যে বাক্স না থাকে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Quail Farming: কোয়েল পাখি পালন করে আপনিও হতে পারে লাভবান
Share your comments