কখনো ভেবে দেখেছেন আপনার বাড়ির ছাদ হতে পারে চাষের জায়গা? চাষের কিছু অংশ নিজেদের জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে আপনি হতে পারেন লাভবান | অবাক হচ্ছেন? কিন্তু, এটাই সত্যি! আপনার বাড়ির ছাদে অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে একই সাথে মাছ ও সব্জি চাষ সম্ভব|
আপনার বাড়ির ছাদ কি খালি পরে আছে? তবে এখনই শিখে নিন এই পদ্ধতি;
অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতি (Aquaponics farming) :
অ্যাকোয়াপনিক্স মূলত মাছ চাষের (Fish cultivation) একটি পদ্ধতি। তবে, এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে আপনি সব্জি চাষও করতে পারেন | এ ক্ষেত্রে মাছ বিচরণ করা দূষিত জল গাছের পুষ্টির যোগানদাতা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং আবার স্বচ্ছ পরিষ্কার জল হয়ে পুনরায় মাছের ট্যাংকে ফিরে আসে। এ পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী একটি বহুল প্রচলিত বাস্তবসম্মত এবং দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা, যার ক্ষুদ্র ও বৃহৎ যে কোনো পরিসরেই বাস্তবায়ন সম্ভব। এতে মাছে ব্যাকটেরিয়া ও গাছ পুনঃসঞ্চালন প্রক্রিয়া তথা পদ্ধতিতে কাজ করে। এ পদ্ধতিতে মাটি ছাড়াই সবজি উৎপাদন করা যায়।উল্লেখ্য যে, এ ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া জলের ময়লা তাৎক্ষণিকভাবে দূরীভূত করে |
বাড়ির ছাদে অনেকেই শাক-সব্জি, ফলমূল চাষ করে থাকেন | তবে, মাছ চাষ খুব কম লোকই করে থাকে | কারণ, অনেকেরই এ পদ্ধতি অজানা | এই পদ্ধতি অবলম্বনে সব্জির সাথে মাছও চাষ করতে পারবেন অনায়াসে | এতে বাড়তি খরচও নেই | এ পদ্ধতিতে শুধু মাছের জন্য খাবারের প্রয়োজন পড়বে। সব্জি চাষের জন্য দরকার হবে না কোনো সার ও কীটনাশকের | সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে অধিক ফলন পাওয়া যায় |
অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে মাছ চাষের কিছু পদ্ধতি (Aquaponics methods):
পুকুরে মাচা পদ্ধতি:
অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে পুকুরে বাঁশের চটি দিয়ে মাচা তৈরি করে নিতে হয়। তৈরিকৃত মাচাটিকে জল ভর্তি চল্লিশটি বোতল দিয়ে ভাসিয়ে রাখতে হবে। বোতলের তলায় কয়েকটি ফুটো করে তার মধ্যে নারকেল ছোবড়া বা কোকোপিট ও নুড়ি পাথর কয়েকটি স্তরে সাজিয়ে তাতে সবজির চারা রোপন করতে হবে। এরপর পুকুরে কিছু মাছের পোনা ছাড়তে হবে। প্রতিটি মাচায় চারটি করে কচু, পুদিনা, কলমিশাক, ঢেঁড়স ও টমেটো ইত্যাদির সর্বমোট ২০ থেকে ২৫ টি চারা ব্যবহার করতে পারবেন।
প্লাষ্টিক ড্রাম পদ্ধতি:
এই পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের ড্রাম লম্বালম্বিভাবে অর্ধেক করে কেটে নুড়ি পাথর ও কোকোডাস্ট, পটিং মিক্স ইত্যাদি স্তরে স্তরে সাজিয়ে কচু, পেঁপে ও বেগুনের চারা রোপণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে মাছের ট্যাংকের বর্জ্য জল পাম্প করে প্রতিদিন দুইবার ড্রামের নুড়ি পাথরের মাঝে সরবরাহ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় গাছের শিকড় প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে এবং পরিষ্কার জল পুনরায় মাছের ট্যাংকে ফিরে আসে। এ পদ্ধতি এক কথায় অসাধারণ ও তাজ্জবময় | এ পদ্ধতিতে দারুণভাবে মাছ ও সব্জি উৎপাদিত হয়ে থাকে | বেশিরভাগ মানুষ, এই পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে |
আরও পড়ুন - জানুন আধুনিক উপায়ে কাঁকড়া চাষের পদ্ধতি
গ্যালভানাইজড পদ্ধতি -
এ পদ্ধতিতে গ্যালভানাইজড পাত দ্বারা ৫ ইঞ্চি x ২ ইঞ্চি ও ৫ ইঞ্চি x ১০ ইঞ্চি আকারের ট্রে তৈরি করতে হবে। জল নির্গমনের জন্য উক্ত গ্যালভানাইজড পাতে একটি ৪ ইঞ্চি লম্বা পিভিসি পাইপ বসাতে হবে। এরপর জল ভর্তি একটি ট্রের সাহায্যে ভাসমান মাচা পদ্ধতিতে এবং অপর একটি ট্রেতে নুড়ি পাথর বিছিয়ে সব্জি চাষ করা হয়। ট্রেগুলোকে একটি ভাসমান বাঁশের মাচার ওপর রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে চারটি করে টমেটো, লেটুস ও পুদিনার চারা একটি শোলার পাতের মাঝে ছিদ্র করে রোপণ করা হয়। অপরদিকে, নুড়ি পাথরের ট্রেতে টমেটো, লেটুস ও কলমিশাক রোপণ করে যথা নিয়মে মাছের ট্যাংকের জল সরবরাহ করা হয়। কিছু পরিচর্যার পরে লক্ষ করা গেছে, উভয় পদ্ধতিতেই সব্জির চারা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়। দেখা গেছে মাটিতে উৎপাদিত কচুর তুলনায় অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে জন্মানো কচুর বৃদ্ধি প্রায় দশ গুণ বেশি |
আলনা পদ্ধতি -
এ পদ্ধতিতে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল দিয়ে আপনার বাড়ির ছাদে আলনা তৈরি করতে পারেন । সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি কাঠের আলনায় আনুভূমিকভাবে ৬টি, উপরে নিচে তিন সারিতে ১৮ টি এবং উভয় পাশে মোট ৩৬ টি বোতল সাজিয়ে রাখা হয়। বোতলগুলোর ছিপির ভেতরে এক টুকরো স্পঞ্জ দিয়ে তার ওপর নুড়ি পাথর বসিয়ে প্রতি বোতলে দুটি করে সবজির চারা রোপণ করতে হয়। এতে একটি আলনায় ৩৬টি বোতলে সর্বমোট ৭২ টি চারা লাগানো যায়। এভাবে ৫০০ লিটার জলের ট্যাংকে ৩৫০ লিটার জল দিয়ে তাতে ৬০ টি তেলাপিয়া মাছের পোনা ছাড়তে পারবেন।
অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতির সুবিধাসমূহ (Benefits of Aquaponics method):
এই প্রযুক্তিটি সামান্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই আপনিও শিখে নিতে পারবেন। পলিথিন দিয়ে শেড তৈরি করে সারা বছরই মাছ চাষ করার সুলভ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির জন্য তেলাপিয়া ও কই মাছ সর্বাধিক উপযোগী। কেননা, এ মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া, অধিক ঘনত্বেও চাষ করা সম্ভব। দেখা গেছে, ২০০০ লিটারের ট্যাংক থেকে ৮ মাসে ১০০-১২০ কেজি তেলাপিয়া বা কই মাছ উৎপাদন সম্ভব। অ্যাকোয়াপনিক্স খাদ্য উৎপাদনের আধুনিক জৈব পদ্ধতি। এর মাধ্যমে খুব সামান্য কিছু উপাদান ব্যবহার করে পুষ্টিকর বিষমুক্ত সব্জি উৎপন্ন (Vegetables farming) করা যেতে পারে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভালো ফলন হতে শুরু করে | সব্জি উৎপাদনে স্বল্প পরিমাণ জল দরকার হয়। শুধুমাত্র বাষ্পীভূত জল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - মুরগির চেয়েও বেশি লাভজনক! ক্যাম্পবেল হাঁস পালনের পদ্ধতি
Share your comments