কৃষিজাগরন ডেস্কঃ মাছ চাষে স্বাবলম্বী আত্মপ্রত্যয়ী পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম-১ নম্বর ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিবন্ধী যুবক আশিষ মান্না । মাছ চাষের মাধ্যমে আশার আলো খুঁজে পেয়েছে নন্দীগ্রাম-১ নম্বর ব্লকের কাঞ্চননগর গ্রামের বেকার যুবক আশিষ মান্না। গ্রামে তিনিই প্রথম বানিজ্যিক ভাবে হারিয়ে যাওয়া মাগুর শিঙ্গি মাছ চাষের গোড়াপত্তন করেন। অল্প দিনের ব্যবধানে মাছ চাষে অসামান্য সাফল্যের কারণে তিনি নামে এলাকায় পরিচিতি পান।
শাররিকভাবে অসুস্থ এই বেকার যুবক মৎস্য অফিসারের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে শুরু করছে চৌবাচ্চায় মাছ চাষ তার সাথে সাথে বাড়ির পাশের একটি এক বিঘা আয়তনের পরিত্যক্ত পুকুর পরিষ্কার করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করছেন। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে আশিষ এখন একজন সফল মাছ চাষি। তবে মাছ চাষে আরো উদ্যোগ গ্রহনে তৎপর। কম সময়ে আর্থিক স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হয়েছে জীওল মাছের চাষ। আশিষ সেই গ্রামে পরিত্যক্ত জমিতে নালা-পুকুর কেটে মাছ চাষ করে তাক লাগিয়েছে। উচ্চ বাজার মূল্য, ব্যাপক চাহিদা ও অত্যান্ত লাভজনক মাগুর শিঙ্গির চাষ করেছে। নিজে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আশিষ ব্লক মৎস্য দপ্তরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলে । ই-লার্নিং পদ্ধতিতে ব্লক মৎস্যবিভাগ থেকে প্রশিক্ষন পাচ্ছে । ইতিমধ্যে মৎস্য দপ্তরের থেকে সরকারি সহায়তায় পেয়েছে জীওল মাছ শিঙ্গি মাছের চারা। তার মাছ চাষের কারণে অনেকেরই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়া আশিষের দেখাদেখি ওই এলাকার অনেক বেকার যুবক ও তার বন্ধুরা মাছ চাষ করতে চান। ব্লক মৎস্য আধিকারিক সুমন কুমার সাহুর সহায়তায় তারা গঠন করেছে মৎস্য উৎপাদক গোষ্টি।
আরও পড়ুনঃ ছত্তিশগড়ে ছাগল প্রজনন কেন্দ্র চালু করা হবে, পাওয়া যাবে উন্নত জাতের ছাগল
বেকারত্বের অন্ধকার কাটিয়ে ছেলের এই সাফল্যে খুশি আশিষের মা মানসি মান্না , তিনি বলেন, আশিসের বাবাও বিকলাঙ্গ তবে ব্লক মৎস্য বিভাগের সাহায্যে শারীরিক বাধাকে কাটিয়ে আশিসের কর্মসংস্থানের নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছে।
আশিষ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বেকার থাকায় দুঃচিন্তাগ্রস্ত হয়ে চাকরি পিছনে হন্যে হয়ে ছুটাছুটি করেন। তার উচ্চ ডিগ্রী না থাকার কারণে চাকরি না পেয়ে পরে অল্প টাকা পুজি নিয়ে শুরু করে মাগুর-শিঙ্গি মাছ চাষ শুরু করেন। তার নিবেদিত কঠোর পরিশ্রমি, সততা আর ঘামের প্রতিফলন সুরভিত হয়ে বেকারত্বের অভিশাপে দ্বার খুলে স্বাবলম্বী হয়েছে। ইচ্ছা ছিল চাকরি করবে। কিন্তু তার আগেই শুরু করেন মাছ চাষ। মাছ চাষ শুরুর পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতি বছরই তার পুকুর আর আয়ের পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ ক্ষুদ্র প্রয়াসে স্ব-নির্ভর মাছ চাষ
ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী, এমন প্রশ্নে আশিষ বলেন, আগে চাকরির স্বপ্ন দেখতাম। এখন আর সেই স্বপ্ন দেখিনা। চাকরিও করতে চাই না। এখন আর এসব নিয়ে চিন্তাও করি না। এই মাছ চাষ নিয়েই থাকতে চাই। আগামীতে পুকুরের সংখ্যা আরো বাড়াতে চাই। আশা করি, আগামীতে আরো অনেক পুকুরে মাছ চাষ বাড়াতে পারবো। ব্লকের মৎস্য দপ্তর থেকে সব রকমের সহযোগীতা পাচ্ছি।
এই ব্যাপারে নন্দীগ্রাম-১নম্বর ব্লকের মৎস্যচাষ সম্প্রসারন আধিকারিক সুমন কুমার সাহু বলেন, তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে খামারটি গড়ে তুলেছেন। তাঁর উৎপাদিত পোনার গুণগত মানও ভালো। আমরা তাঁকে সবসময় সহযোগিতা করি। মাছ চাষে তিনি অনেকেরই দৃষ্টান্ত হতে পারেন। মাছ চাষের মাধ্যমে যে কোনো মাছচাষিদের সবরকম সরকারি সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি। এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতিরা মাছ চাষ করে সফলতা অর্জন করতে পারে নি:সন্দেহে।সকল প্রকার প্রশাসনিক সহায়তার বার্তা দিয়েছেন নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বিডিও সুমিতা সেনগুপ্ত।
আরও পড়ুনঃ ইলিশের সংরক্ষণ এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠা গঙ্গা নদীতে: একটি মিশন মোড
নন্দীগ্রাম-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মুক্তিরানী মাইতি বলেন, আমরা আশিষকে মৎস্য বিভাগের তরফ থেকে বারোশোটি শিঙ্গি মাছের চারা তুলে দিয়েছি। প্রতিবন্ধী বেকার যুবক আশিষ মান্নার গল্প এখন নন্দীগ্রামের যুব সমাজের কাছে এক উৎসাহের বিষয় তারা মৎস্য উদ্যোগে খুজে পাচ্ছে নতুন দিশা।
প্রতিবন্ধী বেকার যুবকের এই সফল কাহিনী রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামের অন্যন্য যুব সমাজকেও উৎসাহীত করবে।
Share your comments