অ্য়াজোলাঃ মাছ চাষ,প্রানী পালন,ও কৃষিতে কল্পতরু-সম

নীল সবুজ নীলসালু শ্যাওলা নামেও পরিচিত সহযোগী বা সিম হিসেবে থাকে যা জলবায়ুর নাইট্রোজেন কে ধরে রাখতে সমর্থ হয় যতদিন এরা বাঁচে আর যখন মরে....

Saikat Majumder
Saikat Majumder
জলজ জৈব সম্পদের এক অনন্য ফসল হলো অ্যাজোলা

আমাদের জলজ জৈব সম্পদের এক অনন্য ফসল হলো অ্যাজোলা । ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে আমাদের উষ্ণ ক্রান্তীয় আবহাওয়ার পক্ষে বেশ অনুকূল ।  অ্যাজোলার পাতার নিচের দিকে ছোট প্রকোষ্ঠ গলিতে নীল সবুজ নীলসালু শ্যাওলা নামেও পরিচিত সহযোগী বা সিম হিসেবে থাকে যা জলবায়ুর নাইট্রোজেন কে ধরে রাখতে সমর্থ হয় যতদিন এরা বাঁচে আর যখন মরে যায় তখন ধরে রাখা এই নাইট্রোজেন যুক্ত হয়ে জল ও মাটি কে উর্বরতা দান করে।  শুধু যে নাইট্রোজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে তাই নয় অ্যাজোলা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন যোগান দিয়ে বাস্তুতন্ত্র কে সজীব রাখতে সহায়তা করেI

বীজ ও অঙ্গজ জনন দুটো পদ্ধতিতেই এর বংশ বিস্তার করতে পারে তবে জলে ভাসমান অবস্থায় অ্যাজোলার দ্রুত বংশ বিস্তার হয়। যেহেতু অনুকূল তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রী তাই চৈত্র-বৈশাখ থেকে টানা আশ্বিন মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। উচ্চ খাদ্য গুন সম্পন্ন হওয়ার কারণে এই ফান কে মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর পরিপূরক খাদ্য হিসেবে অ্যাজোলার তুলনা মেলা ভার।  প্রাণী খাদ্য হিসেবে অপরিসীম গুরুত্ব পাবার একটি কারণ হলো এতে লিগনিন থাকে খুব কম ঝোলে উচ্চ প্রোটিন সহজেই প্রাণীরা হজম করতে পারে। শুকনো ওজনের ভিত্তিতে আছে ২৫  থেকে ৩০ শতাংশ প্রোটিন এছাড়া ক্যালসিয়াম ফসফরাস পটাশিয়াম ম্যাঙ্গানিজ যার পরিমাণ প্রায় ১৫  শতাংশ এর দুটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো বিটা ক্যারোটিন ও অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড সমূহ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ অ্যাজোলা এক  সর্বোৎকৃষ্ট বিকল্প প্রাণী খাদ্য হিসেবে দৈনন্দিন খাবারের সাথে বা সরাসরি দেওয়া যায়। মাছ হাঁস-মুরগি ছাগল গবাদি  প্রাণি কে খাওয়াতে পারলে কাঁচা অবস্থায় শব্দ তুলে সাহায্যে ভালো করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে দৈনন্দিন খাবারের সাথে দিতে হবে। দানাখাদ্যের পরিমাণ কমানো যেতে পারে আর তাই আজকের দিনে যখন মাছ ও প্রাণী পালনের খরচ ক্রমে বেড়ে চলেছে অ্যাজোলার অন্তর্ভুক্তি উৎপাদন খরচ নিদেন পক্ষে ৩০ % কম করা সম্ভব।

কৃষিতে অবশ্য খারিফ ও রবি এই দুটি দুটি খণ্ডে সহজে সবুজ সার হিসেবে ব্যবহৃত নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার অনেকটাই কমানো যায় । কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক স্যারের ব্যবহার অনেকটাই সংকুচিত করা সম্ভব আর ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষের পক্ষে প্রায় নিখরচায় মাছ ও হাঁস মুরগি ছাগল গরু গরুর খাবার জোগান সম্ভব হবে।  নিচের সারণিতে দেখানো হলো বিটা ক্যারোটিন এর উৎস হিসাবে কতটা কার্যকারী নিচের সারণি দেওয়া হল

আরও পড়ুনঃ আগামি ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা করল মৎস দপ্তর

উদ্ভিদ ও পাত্রের নাম

 

প্রতি ১০০ গ্রামে আই ইউ

 

অ্য়াজলা /পিন্নাটা

৬৩,০০০.০০

লাল / নটে শাক

১৪,১৯০.০০

কালোকেটসিয়া / কচু শাক

১০,২৭৮,০০

কারি পাতা

৭,৫৬০

ধনে পাতা

৬,৯১৮

সজনে পাতা

৬,৭৮০

পালং

৫,৫৮০

সরষে শাক

২,৬২২

কলমি শাক

১,৯৮০

বেথুয়া শাক

১৭৪০

লেটুস

৯৯০

নিচের আরেকটি সারণিতে অ্যাজোলার পুষ্টি পুষ্টিগুণের এক সংক্ষিপ্ত ধারণা পাওয়া যেতে পারে

উপাদান

পরিমান (শতাংশ)

নাইট্রোজেন

৪-৫

পটাসিয়াম

২-৪.৫

ক্য়ালসিয়াম

০.৪-১.০

ফসফরাস

০.৫-০.৬

ম্য়াঙ্গানিজ

০.২-০.৫

লৌহ

০.০৬

ম্য়াগনেসিয়াম

০.৫-০.৬

স্বল্প খরচেই একবারে স্থানীয় পদ্ধতিতে একজন প্রান্তিক চাষী যেভাবে অ্য়াজোলা চাষ করতে পারেন তাঁর আরেকটি রুপরেখা দাওয়া হল।

শুদ্ধিকরণ প্রায় সকাল-বিকাল এরকম একটি জায়গাতে যেখানে ৬ ইঞ্চি বা ১৫  ইঞ্চি গভীরতা থাকবে তাতেই এই চাষ সম্ভব । সঙ্গে প্রয়োজন হবে গোবর সার কম্পোস্ট  ১0 কেজি আর লাগবে মাদার অ্যাজোলা পরিমাণ মতো সেও প্রায় ১0  কেজি থেকে ১৫  কেজি দরকার হবে । সমান ভাবে পুকুরেও ২ ফুট জল থাকলেই যথেষ্ট হবে। মাদার অ্যাজোলা ছড়িয়ে দিতে হবে আজ ও লাঁদ ছাড়ার পর একটু জল ছিটিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে কারণ অ্যাজোলা গুলি উল্টে গিয়ে থাকে তাহলে জল দিলে আবার সোজা হয়ে উঠবে । দশ দিন পর অ্যাজোলা তোলা যাবে । ১০ কেজি অ্যাজোলা থেকে ১00 দিনে ২ টন পর্যন্ত অ্যাজোলা পাওয়া সম্ভব । পুকুরের এক-চতুর্থাংশ অ্য়াজোলা চাষ করলে সেটা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হবে শুধু নয় পুকুরের জলে অ্যামোনিয়া ও শোষণ করে জলকে নির্মল রাখতে সাহায্য করবে। গরমের দিনে জলের বাষ্পীভবন কম হবে ও তাপমাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করবে ।অ্যাজোলা শুধু যে চমকপ্রদক চাষের জন্যই অমূল্য তাই নয় প্রাণীকুলের পুষ্টি সাধনের এর জুড়ি মেলা ভার নিচের সারণিতে অ্যাজোলা চাষের জন্য জলের ভৌত রাসায়নিক কিছুটা ধারনা দেওয়া হল

ভৌত রাসায়নিক বৈশিষ্ট

মান

 

তাপমাত্রা

২০-৩০ ডিগ্রী

সূর্য কিরন

হালকা থেকে পূর্ন

আপেক্ষিক আদ্রতা

৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ

জলের গভিরতা

১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার

জলের পি.এইচ

৬-৭.৫

অ্যাজোলা ব্যাপকভাবে প্রসার হওয়া দরকার উৎসাহের সাথে সমস্ত ভাই-বোনেদের এই অনন্য সাধারণ গুণের সম্পত্তি কে ধারাবাহিকতার সাথে চাষ পরিচর্যার মাধ্যমে জল ও জমির উৎকর্ষ বজায় রাখতে আবেদন জানাই কারণ একটু উদ্যোগ নিতে পারে অনেকটাই নিশ্চিত উর্বরতা।  

আরও পড়ুনঃ চৌবাচ্চায় আমুর মাছের কৃত্রিম প্রজনন ,সহজ আয়ের উপায়

শ্রীপর্ণা চক্রবর্তী, অনীশ দাস, ও ডঃপ্রতাপ মুখোপাধ্যায়

মৎস্য বিশেষজ্ঞ ক্ষুদ্র সেচ ত্বরান্বিত প্রকল্প, রাজ্য সঞ্চালন শাখা, কলকাতা

মৎস্য বিশেষজ্ঞ ক্ষুদ্রসেচ ত্বরান্বিত প্রকল্প, জেলা  সঞ্চালন শাখা, বাঁকুড়া

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিজ্ঞানী আই সি এ আর সি আই এফ এ ভুবনেশ্বর

Published On: 26 April 2022, 12:02 PM English Summary: Azolla: Imaginary in fish farming, animal husbandry, and agriculture

Like this article?

Hey! I am Saikat Majumder. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters