কৃষিজাগরন ডেস্কঃ দেশের দরিদ্র মানুষেরা কম খরচ আর অধিক লাভজনক হওয়ায় ভেড়া পালনের (Sheep Rearing) দিকে ঝুঁকছেন।সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকেও ভেড়া পালনে মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যদিও সেই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। কারণ এটি একটি প্রকল্পের অধীনে কিছু পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে ভেড়া বিতরণ আর কয়েক হাজার সুফলভোগীকে ভেড়া পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। যদিও বলা হয়, শতাধিক কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার ভেড়ার খামার তৈরি করা হয়েছে এবং ভেড়ার মাংস জনপ্রিয় করার নানামুখী প্রচার চালানোর উদ্যোগ রয়েছে।
মৌলিক কিছু জ্ঞান থাকলে নিজেই শুরু করা যায় ছোটখাট একটি ভেড়ার খামার। অনেক খামারি গরু-ছাগলের খামারের সঙ্গে ৫-৬টি ভেড়াও পালন করেন।
ভেড়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্য
১. ভেড়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা যায়, এরা দলবদ্ধ অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে। ফলে বিশেষ করে চারণভূমিতে ভেড়া পালন খুবই সুবিধাজনক, কারণ দলবদ্ধ থাকে বলে ভেড়ার পাল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেশি লোকের দরকার হয় না।
২. এছাড়া ভেড়া নিজেদের খাদ্য নিজেরাই জোগাড় করতে পারে। ভেড়া পালনে প্রাথমিক খরচ তুলনামূলক অনেক কম। ভেড়া ছয় মাস পরপর গর্ভবতী হয়, একসঙ্গে একাধিক বাচ্চা দেয়। ফলে ভেড়ার সংখ্যা দ্রুত বাড়ে, ভেড়ার মলমূত্র জমির সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, জমির আগাছা খেয়ে উপকার করে, জলাশয়ের ঘাস চরে খেতে পারে এবং ভেড়ার রোগব্যাধি খুবই কম হয়।
আরও পড়ুন - Profitable Fish Farming - আধুনিক পদ্ধতিতে পুকুরে শিং মাছ চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ
৩. ভেড়া থেকে পশম পাওয়া যায়। যেটি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব। প্রতি বছর একটি প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়া থেকে ৩.৫-৫.৫ কেজি পশম পাওয়া যায়। বছরে ৩-৪ বার ভেড়ার পশম কাটা যায়। প্রতিবারে ০.৫-০.৭৫ কেজি পশম পাওয়া যায়। পশম মোটা ও ফাঁপা হওয়ায় তা থেকে নিম্নমানের কম্বল তৈরি করা হয়। পশম কাটার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় সাশ্রয় করতে বর্তমানে বাজারে পশম কাটার ইলেকট্রিক ট্রিমার পাওয়া যাচ্ছে। এক হাজার বা ১২শ টাকার মধ্যেই এই ট্রিমার পেতে পারেন।
৪. ছোট খামারিদের জন্য দেশী ভেড়া পালন সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ। দেশী ভেড়া একসঙ্গে ২-৩টি বাচ্চা দেয়। সে তুলনায় শংকর জাতের ভেড়া ১-২টি বাচ্চা দেয়। তবে শংকর জাতের ভেড়া আকারে বড় এবং ওজনে বেশি হয়। দেশী ভেড়ার তুলনায় একই বয়সের (৬ মাস) শংকর জাতের ভেড়া থেকে প্রায় দ্বিগুণ মাংস পাওয়া যায়।
ভেড়ার রোগ (Sheep Disease)
ভেড়ার রোগের মধ্যে স্ট্রাক, এন্টেরোটক্সিমিয়া বা পাল্পি, কিডনী ডিজিজ, ব্রাক্সি, ব্লাক ডিজিজ, ভেড়ার বাচ্চার আমাশয় ও ওলান পাকা বা ম্যাসটাইটিস, নিউমোনিয়া, ভিবরিওসিস, ব্রুসেলোসিস, ধনুষ্টংকার, ফুটরট, সালমোনেলোসিস, বর্ডার ডিজিজ, বসন্ত, প্লেগ বা পিপিআর, ক্ষুরা রোগ, একযাইমা, কক্সিডিওসিস, টক্সোপ্লাসমোসিস, কলিজা কৃমি, হিমোনকোসিস মেনুজ, উঁকুন, আঁঠালী, প্রেগনেন্সি টক্সিমিয়া, নিয়োনেটাল হাইপোগ্লাইসেমিয়া অন্যতম।
রোগ প্রতিরোধ (Disease Management)
১.ভেড়ার খামারে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় হলো ভেড়ার বাচ্চা অবস্থায় যত্ন নেওয়া। বাচ্চা হওয়ার পর যদি সঠিকভাবে যত্ন করা যায় তাহলে অনেকাংশেই রোগ বালাই হয় না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় না।
আরও পড়ুন - Tilapia Koi Framing – পুকুরে তেলাপিয়া কই মাছের চাষ করে আয় করুন দ্বিগুণ অর্থ
২. জন্মের সাথে সাথে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের তেমন কোন ক্ষমতা থাকে না। তাই মায়ের উৎপাদিত শাল দুধ বাচ্চাকে এন্টিবডির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। ভেড়ার বাচ্চার অন্ত্রে ১২ ঘন্টা পর থেকে শাল দুধে বিদ্যমান এন্টিবডি শোষণের হার কমতে থাকে। এ কারণে জন্মের পর ১২ ঘন্টা পর্যন্ত বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়াতেই হবে।
৩.মায়ের শাল দুধের প্রদত্ত রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। ভেড়ার বাচ্চার ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার সাথে রক্তও আসতে পারে। এমতাবস্থায় বাচ্চাকে দিনে বারবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে এবং দূর্বল বাচ্চাকে বোতলের মাধ্যমে দুধ না খাইয়ে ফিডারে দুধ খাওয়াতে হবে।
Share your comments